বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ক্যালিগ্রাফিশিল্পী আরিফুর রহমান। তার ক্যালিগ্রাফি পুরস্কৃত হয়েছে দেশ-বিদেশে। কয়েক বছর আগে ক্যালিগ্রাফির ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া ‘বাংলাদেশ ক্যালিগ্রাফি একাডেমি’র প্রতিষ্ঠাতাদের একজন তিনি। তেহরানে অনুষ্ঠিত ১১তম ইসলামী ওয়ার্ল্ড ক্যালিগ্রাফি ফেস্টিভ্যালে তার একাধিক শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। ভাষার মাস উপলক্ষে ক্যালিগ্রাফির বিষয়ে আলোকিত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে কথা বলেছেন তানভীর এনায়েত
প্রশ্ন : কখন থেকে আপনার ক্যালিগ্রাফি চর্চা শুরু?
শিল্পটা সব সময়ই আমার সঙ্গে ছিল। আমার মূল শিক্ষক আমার বড় ভাই। তিনি ভালো ছবি অাঁকতেন। তাকে দেখে, তার কাছ থেকে শিখেই আমি এগিয়েছি। এ ছবি অাঁকার তাড়নায় বরিশালের সাইনবোর্ডের দোকানেও আমি কাজ করেছি। লেখালেখির সময়ও ছবি অাঁকার প্রবণতা ছিল আমার মধ্যে। আগে শুধু ব্লক করে খুশখত দিয়ে আমরা কাজ করতাম- সেটা ‘৯২ সালের কথা। দৈনিক মিল্লাতে ছাপা হয়েছে ‘৯৪ থেকে। তখন আমি মিল্লাতের স্টাফ আর্টিস্ট ছিলাম। রঙিন এবং মূল হিসেবে যেটাকে আমি প্রথম ক্যালিগ্রাফি মনে করি, ১৯৯৬ সালে ওয়াটার কালারে করা কালেমা তাইয়িবা।
** সমাজ ও মানুষের জন্য ক্যালিগ্রাফির প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?
প্রতিটি শিল্পের সঙ্গে সমাজের মানুষের সম্পৃক্ততা রয়েছে। সভ্যতা বিকাশের ক্ষেত্রে রয়েছে কর্তৃত্ব। জীবনবোধের সঙ্গে রয়েছে গভীর ঘনিষ্ঠতা। আমরা একসময় দেখতাম মেয়েদের ছবি দিয়ে ক্যালেন্ডার ছাপা হতো। ক্যালিগ্রাফি দিয়ে আমরা এর যথাসাধ্য পরিবর্তন এনেছি। জীবজন্তুর ছবির পরিবর্তে ড্রয়িংরুমগুলোতে এখন ছবি হিসেবে ক্যালিগ্রাফি স্থান পাচ্ছে। ধর্মীয় বাণী বা কোরআন-হাদিসের কথাগুলো ফুটিয়ে তোলা যাচ্ছে। এখন ক্যালিগ্রাফি দিয়ে প্রতি বছর অসংখ্য ক্যালেন্ডার ছাপা হয়। তাছাড়া এটা মানুষের মনকে সুন্দর করে। সর্বোপরি ক্যালিগ্রাফি শিল্পের অন্যতম প্রধান মাধ্যম, যা আমাদের সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে।
** ক্যালিগ্রাফিতে আপনার গুরু কে?
সরাসরি আমার কোনো গুরু নেই। আমার ভাবগুরু হলেন ইরানের মাস্টার ক্যালিগ্রাফার জালিল রাসুলি। তার ক্যালিগ্রাফি আমাকে খুব টানত। তিনি এখনও বেঁচে আছেন। আরেকজন হলেন তুরস্কের হাসান চেলেবি। তিনিও বেঁচে আছেন। তিনিও জগদ্বিখ্যাত একজন ক্যালিগ্রাফার। ইরানের দ্বিতীয় সফরে জালিল রাসুলির সঙ্গে আমার দেখা হয়। বাংলাদেশে তিনি ঘুরে গেছেন। প্রথমবার যখন আমি ইরানে গিয়েছিলাম তখন হাসান চেলেবির সঙ্গেও দেখা হয়েছে।
** ক্যালিগ্রাফি তো সব ভাষাতেই হচ্ছে, বাংলায় কতটুকু?
বাংলাতেও মোটামুটি সুযোগ আছে ক্যালিগ্রাফি করার। আমরা এরই মধ্যে বাংলাতে অনেক ক্যালিগ্রাফি করেছি। এমনকি বাংলাদেশে শুধু বাংলা ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী করার সুযোগও হয়েছে। বাংলা ক্যালিগ্রাফি আরবির মতো হওয়া সব সময় জরুরি নয়। বাংলা অক্ষরের মধ্যেই নতুনত্ব সৃষ্টি করে তা দিয়ে ক্যালিগ্রাফি করা যায়। তাহলে এক সময় বাংলা ক্যালিগ্রাফিও বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।
** ক্যালিগ্রাফি নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?
আমরা এটা নিয়ে অনেক স্বপ্নই দেখি। বিশেষ করে চাই, প্রতি দুই বা চার বছর অন্তর একটা আন্তর্জাতিক মানের প্রদর্শনী করতে। সেভাবে আমরা কিছুটা কাজও শুরু করেছি। এটা প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে। চর্চার ক্ষেত্রে নতুনদের জন্য আমরা চিন্তা করছি ক্যালিগ্রাফি একটা ইনস্টিটিউট করতে। সেখানে ছয় মাসের কোর্স চালু করা হবে। তাছাড়া ঢাকা ইউনিভার্সিটির চারুকলাসহ সব পাবলিক ভার্সিটি এবং বেসরকারি ভার্সিটিগুলোতে ক্যালিগ্রাফিকে আলাদা সাবজেক্ট হিসেবে চেয়েছি। এগুলো ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। নতুন যারা আসবে এটা তাদের জন্য উপকারী মঞ্চ হবে। দুই বা চার বছর অন্তর যে প্রদর্শনী হবে সেটার জন্য সরকারি সহায়তা কামনা করছি।