শিশু পর্নোগ্রাফিতে শিশুসাহিত্যিক! সিআইডি ধরেছে তিনজনকে

0

untitled-17_95873তিনি একজন শিশুসাহিত্যিক, চিত্রগ্রাহকও বটে। বেশির ভাগ কাজ করেন পথশিশুদের নিয়ে। টিপু কিবরিয়া নামে পরিচিত এ শিশুসাহিত্যিক জড়িয়ে পড়েছেন জঘন্য এক অপরাধে। শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরি ও বিদেশে বিক্রির অভিযোগে দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁকে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) জিজ্ঞাসাবাদে টিপু কিবরিয়া অপকর্মের দায় স্বীকার করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, টিপু কিবরিয়া ফ্রিল্যান্স আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি শিশুসাহিত্য রচনা করতেন। এরই মধ্যে তাঁর অর্ধশতাধিক বই বেরিয়েছে। মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষার পর টিপু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। যুক্ত ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে। তাদের শিশু সংগঠন ফুলকুঁড়ির জন্য তিনি কাজ করতেন। তাদের প্রকাশনায় প্রায় নিয়মিত তাঁর লেখা ছাপা হতো।
সিআইডি সূত্রে জানা যায়, টিপু কিবরিয়া শিশুদের নিয়ে পর্নো ছবি তৈরির পর বিভিন্ন পে-ওয়েবসাইটে প্রচার করতেন। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে তাঁর পর্নো ভিডিওর ক্রেতা রয়েছে।
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, কার্যত বাংলাদেশ পুলিশের কাছে টিপু কিবরিয়ার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। ২০০৫ সালে ইন্টারপোল সন্ধান পায়, ঢাকা থেকে শিশু পর্নোগ্রাফি বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। সে ব্যাপারে নজরদারির পাশাপাশি বাংলাদেশের সহযোগিতা চাওয়া হয়। এ চক্রের সদস্যদের ছবি ও তথ্য এত দিন পাওয়া যাচ্ছিল না। চলতি মাসে ইন্টারপোল একজন পর্নোগ্রাফারের স্কেচ সংগ্রহের পর তা যাচাইয়ের জন্য ঢাকায় পাঠায়। ইন্টারপোল জানায়, অপরাধী ঢাকায়ই আছে এবং মুগদায় তাঁর একটি স্টুডিও থাকতে পারে। এসব তথ্য নিয়ে সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ অনুসন্ধানে নামে। আর তাতেই সন্ধান মেলে টিপু কিবরিয়ার। তাঁকে গত মঙ্গলবার খিলগাঁও তারাবাগ থেকে গ্রেপ্তারের পর মুগদার স্টুডিওতে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে ১৩ বছর বয়সী এক পথশিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে, যে শিশু পর্নোগ্রাফির শিকার বলে জানা গেছে। এরপর গ্রেপ্তার করা হয়েছে টিপুর সহযোগী নুরুল ইসলাম নুরু ও শাহারুল ইসলামকে।
সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ আলম জানান, টিপু কিবরিয়ার প্রকৃত নাম ফখরুজ্জামান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় বসবাস করছিলেন এবং একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। শিশুসাহিত্য ও ফটোগ্রাফি নিয়ে প্রকাশ্যে কাজ করলেও জড়িয়ে পড়েন অপরাধী চক্রের সঙ্গে। তাঁর বিরুদ্ধে শিশু পর্নোগ্রাফির যে অভিযোগ মিলেছে, সে ব্যাপারে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অনেক কিছু তিনি স্বীকার করেছেন। তাঁর বাসা ও স্টুডিও থেকে কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক, ক্যামেরা, ল্যাপটপসহ শতাধিক পর্নো সিডি জব্দ করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর টিপু কিবরিয়ার বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সাহিত্যচর্চার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি শিশু পর্নোগ্রাফিতে জড়িত। এ ক্ষেত্রে পথশিশুদের ব্যবহার করা হয়েছে বেশি। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে শিশু পর্নোগ্রাফির বাজার রয়েছে। এরই মধ্যে তিনি সৌদি আরব, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় পর্নো সিডি ও আলোকচিত্র বিক্রি করেছেন। জার্মানি ও সৌদি নাগরিকের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের সূত্র ধরেই ইন্টারপোল শনাক্ত করে ফেলে টিপুকে। এ-সংক্রান্ত তথ্য যাচাই ও সহযোগীদের সন্ধান পেতে পুলিশ টিপুকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে। টিপু কিবরিয়া পে-ওয়েবসাইটে পর্নো ভিডিও আপলোড করে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করার কথা জানিয়েছেন।
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More