যেন জলের দেয়ালে খোদাই করে তৈরি করা হয়েছে ছোট্ট ছেলেটির মুখ। চারপাশে ঢেউয়ের বেষ্টনীর মাঝে তার অমলিন হাসি, পেছনে নগরের পটভূমি। জাকিরুল মাজেদের তোলা অনন্য এই আলোকচিত্রের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন দর্শক। দেখছিলেন অন্য এক বাংলাদেশকে।
কর্মমুখর ও উৎসবে রঙিন এক দেশের গল্পগাথাই যেন শোনা গেল সেদিন শিল্পকলায়। কেবল জাকিরুল নন, রাজনৈতিক অস্থিরতা কিংবা সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার আড়ালে চাপা পড়ে থাকা এসব টুকরো কাহিনি তুলে আনলেন ১০০ জন আলোকচিত্রীই। দৈনিক আজাদী ও ফটোগ্রাফিয়া আয়োিজত প্রথম আলোকচিত্র উৎসবে আসা দর্শকদের তাই বলতেই হয়েছে, এটাই সত্যিকারের বাংলাদেশ।
‘বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি ও সম্ভাবনা’ শিরোনামে ২৭ অক্টোবর শেষ হওয়া পাঁচ দিনের এই প্রদর্শনীর প্রতিদিনই ছিল উপচে পড়া দর্শক। শিল্পকলার দুটি গ্যালারিতে প্রাত্যহিক জীবন, প্রতিকৃতি, উৎসব, প্রকৃতি, স্মার্টফোন ও প্রামাণ্যচিত্র—এই ছয় বিভাগে সারা দেশের ১০০ জন আলোকচিত্রীর ১১৫টি আলোকচিত্র প্রদর্শিত হয়।
প্রদর্শনীর প্রতিটি ছবিই দর্শকদের মনোযোগ কেড়েছে। বিষয়বৈচিত্র্য, বিন্যাস, আলোছায়া, অভিব্যক্তি—সব বিচারেই উত্তীর্ণ ছিল ছবিগুলো। উৎসবে অংশ নেওয়া প্রায় সাড়ে তিন হাজার আলোকচিত্র থেকে ১৬ জনের ছবি সেরা হিসেবে নির্বাচন করেন বিচারকেরা। দেশের খ্যাতনামা তিন আলোকচিত্রী শোয়েব ফারুকী, আবীর আবদুল্লা ও সাইফুল হক বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
উৎসবে গ্র্যান্ড ফটোগ্রাফিয়া অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন রিয়াসাত নাফিস। তাঁর ‘কনট্র্যাডিকসন অ্যান্ড প্রসপেকট’ ছবিটি দর্শককে মুগ্ধ করেছে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশের নিচে হাতির ভাস্কর্য ধরে ঝুলে থাকা যুবকের ছবিতে নাটকীয়তা ও কাব্যগুণ—দুই–ই ছিল।
দৈনন্দিন জীবন বিভাগে সেরা মো. আশরাফুল্লার ছবিও নজর কেড়েছে দর্শকদের। একটি বহুতল ভবন ও তার ছাদে কাপড় শুকানোর দৃশ্য যেন নগরের বাস্তবতাকেই তুলে ধরেছে।
দোতারার তালে তালে সাঁওতালদের ঝুমুর নাচের ছবি তুলেছেন আসমা বীথি। উৎসব বিভাগে পুরস্কার পাওয়া এই ছবিটি যেন দেশের সাংস্কৃতিক বহুত্বেরই প্রতিনিধিত্ব করছে। এই বহুত্ব নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, এমন প্রতিশ্রুতিও জন্মায় দর্শকদের মনে।
প্রদর্শনীতে পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্যান্য আলোকচিত্রী হলেন আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী, মো. মনিরুজ্জামান, নিতেশ রনি, মো. নুরুল হুদা, প্রেমা নাথ, মোহাম্মদ শাহজাহান, প্রাণেশ চাকমা, অর্ণব অন্তর, সাহেদ হোসেন, শুভ খান, সৌরভ ভাবনা ও সুশোভন সরকার।
সব মিলিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের ছবিটাই যেন উপহার দিল এই প্রদর্শনী। তিন বিচারকের একজন আবীর আবদুল্লাও একমত হলেন সে কথায়। তিনি বলেন, ‘আসলে যে ছবিগুলো জমা পড়েছিল তার মধ্য থেকে ব্যতিক্রমধর্মী কিছু আমরা বের করে আনতে চেয়েছি। আর তাতেই এমন চিত্র উঠে এসেছে।’ সূত্র : প্রআলো