ব্লগ থেকে নেয়া এই লেখাটি দিবার্তা.কম এর পাঠকদের জন্য, কেউ অন্য ভাবে নিবেন না।
আমার মনে হলো আমি কোন ইংলিশ/হিন্দি মুভির ট্রেলার দেখছি!যেমন মেয়েটির পোশাক,তেমনি ছেলেটিরও।তবে ইংলিশ মুভিতে নায়িকা থেকে নায়ক আলাদা করা যায়,এখানে দেখলাম আলাদা করাটা একটু না,ভালোই টাফ।পিছন থেকে কনফিউজিং বেশ,হু ইজ হোয়াট!কারণ নায়কের চুল নায়িকার চুলের প্রায় সমান লম্বা,হাতে চুড়ির মতো কি তা ঠিক বুঝলামনা।হবে হাল ফ্যাশানের কিছু একটা,ভেবে আমি গবেষণা থেকে ক্ষান্ত দিলাম।তবে যে গবেষণা থেকে ক্ষান্ত দেয়া গেলনা তা হলো এদের ঘনিষ্ট হয়ে বসার ভঙ্গি এবং মেয়েটির অতীব ‘আধুনিক’ পোশাক।পোশাকের বিবরণে আমি যাবনা,তবে তা বাঙালী কেন,গোটা উপমহাদেশীয় ট্র্যাডিশনাল পোশাকের ধারেকাছেও নাই।
বলছি,আমি একটি নামী প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে বছর পাঁচেক আগে এমবিএ-তে ভর্তি হতে গিয়েছিলাম।সেখানকারই ঘটনা।আমি হিজাবী মানুষ,ওখানে গিয়ে যথেষ্ট হকচকিয়ে গিয়েছিলাম,কুন্ঠিতও হয়েছিলাম।মনে হচ্ছিল আমাকে ওখানে মানাচ্ছেনা,২-৩ ঘন্টায় যেসব মেয়েদের দেখলাম তাদের কারোর পোশাকই আমার মতো ‘ক্ষ্যাত’ নয়,বড়ই ‘আধুনিক’! ..তা সে ৫ বছর আগের কথা এবংপরবর্তীতে কিছুদিন পর্যন্ত এই ঘটনা মনে পড়লে এই ভেবে সান্ত্বনা দিতাম নিজেকে যে যাদের দেখেছিলাম তারা সবাই বড়লোক বাপের বড়মানুষ বাচ্চাকাচ্চা,তারা কি আর আমার দেশের ৮০% মানুষকে রিপ্রেজেন্ট করে?
তবে এই ভেবে শান্তিতে কিন্তু বেশীদিন থাকা গেলনা।এমবিএ-তে ভর্তি না হয়ে চলে গেলাম মৌলভীবাজারে চাকরী করতে।সিলেট নাকি ওলি-ওয়ালাদের এলাকা,সেখানে উপরের ঘটনার মতো কিছু ঘটতে দেখার চিন্তাও করিনি কখনো।কিন্তু সেখানেই ‘লন্ডনী’ কন্যাদেরকে রাস্তায়-রেস্টুরেন্টে আমি লন্ডনের পরিবেশের অভাব পূরণ করে নিতে দেখলাম,এ্যামেজিং!খোদ সিলেট শহরে যখন পোস্টিং হলো তখনতো লন্ডনী,সেমি-লন্ডনী(লন্ডনীদের আত্মীয়) মেয়েদের দৌরাত্ম্যে অবাক লাগা বিরক্তিতে পরিণত হলো।ইউনিভার্সিটি এলাকা যেখানে লন্ডনী,সেমি-লন্ডনী নাই,সেখানে?সিলেট ইউনিভার্সিটিতে আমরা যখন পড়তাম তখনও কিছু মেয়ের পোশাক কখনোই অতটা শালীন পর্যায়ের ছিলোনা,সেটা তখন এ্যাবনরমাল কিছুও ছিলোনা।কারণ কিছু মানুষ কখনোই গোটা এলাকার রিপ্রেজেন্টেটিভ হয়না এবং হাতের পাঁচ আঙ্গুল সমানও হয়না।তাই সেগুলো এ্যালার্মিং কিছু ছিলোনা।কিন্তু চাকরী করতে আবার সিলেট গিয়ে দেখলাম ২-৩ বছরে সাস্টের চেহারা পুরাই পাল্টে গেছে আর সেখানকার মেয়েরাও এ্যাবনরমাল রেটে পোশাকের শালীনতা/পরিমিতিবোধ হারাচ্ছে।ফ্যাশন বদলাতে পারে,কিন্তু শালীনতা/পরিমিতিবোধ এতো দ্রুত পাল্টায়?তাও ধনাত্মক নয়,ঋণাত্মক দিকে!
এরপর লক্ষ্য করলাম সমাজের সবখানেই এই অবস্হা শুরু হয়ে গেছে।হয়তো আরও আগেই শুরু হয়েছে,আমি লক্ষ্য করেছি দেরীতে।উদাহরণ দেই,’প্রথম আলো’ ছাড়া আর কোন পত্রিকা পড়া হয়না অনেকদিন(যেহেতু এরা কম নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বের দিক থেকে,তাই মন্দের ভাল বলে পড়ি),তাই অন্যদের কথা বলতে পারবোনা।কিন্তু এই পত্রিকাটি আমাকে বড়ই অবাক করে ‘নকশা’ নামের প্রতি মঙ্গলবারের ফিচার পাতায় মেয়েদের এমন সব ছবি দিতে লাগলো যে আমি হতভম্ব শুধু না,মর্মাহত হতে লাগলাম।কারণ এইসব ছবি দেখার জন্যে আমার এক্স ছেলে কলিগরা প্রায় প্রতি মঙ্গলবার ম্যানেজারের রুমে ‘নকশা’ পাঠানো বাদ দিয়ে দিলো এবং এসব ছবি নিয়ে ‘রসালো’ আলাপের মাঝে তারা মেয়েদের আগমণ পছন্দ করতোনা,আমাদের বলতো-পরে আসো,’অনলি বয়েজ’ আলোচনা চলছে!।মেয়েরা কিছু বললে তাদের উত্তর হতো,’তোমরা আমাদের ‘দেখাচ্ছো’,আমরা দেখবোনা?!’এ ছিলো তাদেরবিনোদন,বিবাহিত-অবিবাহিত নির্বিশেষে।ওদের দেখে আমার মনে হতো বলি,তোমরা তো মুসলমান!ইসলাম কেবল কি মেয়েদের পর্দা করতে বলেছে?প্রথম আদেশ/নির্দেশ তো মেয়েদের না,ছেলেদের উদ্দেশ্যে!তাদের চোখের পর্দা নিয়ে!একটি মেয়ের নাহয় নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে,কিন্তু সেটা কেন ছেলেটির নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ হবে?
কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায় ছিলো।আর তাই এদের কথার প্রতিবাদে এভাবে বলা হতোনা,বরং দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নিচু করে এদের সাথে কাজ করা ছাড়া কোন উপায় ছিলোনা।কারণ যে মেয়ে নিজেকে পণ্য বানিয়ে ছেলেদের বিনোদনের বস্তু বানিয়ে রেখেছে তার হয়ে আমি ওদের কিছু বলেই বা কি করবো? যে মেয়ে নিজেকে পণ্য বানিয়ে মহান ‘আধুনিকা’ হয়ে পত্রিকায় মডেল হয়েছে,তার এমন পোশাক পড়ার কারণ কি?সে কাকে এমন ‘আবেদনময়ী স্বরুপ’ দেখাতে চেয়েছে?আরেকটি মেয়েকে??নাকি ছেলেদেরকেই যে তাকে ‘দেখবে’?আচ্ছা,তার মনে কি কখনো প্রশ্ন আসে,’আমার সাথে মাঝে-মাঝে যে ছেলেটি মডেল হয়,তার পোশাক তো আমার মতো হয়না!সে কেন পুরো কাপড় পরে মডেল হবে আর আমি কেন স্লিভলেস পরে,পাতলা শাড়ী পরে,কোমড় দেখিয়ে তবেই মডেল হবো?তবে কি তার অভিনয়-শৈলী,অভিব্যাক্তি ফুটিয়ে তোলার যোগ্যতা আমার চেয়ে বেশী বলেই আমাকে‘অতিরিক্ত’ কিছু করে(পোশাক খুলে) ছবি তুলতে হচ্ছে যাতে লোকেরা তার পাশে আমাকেও কিছুটা দেখে?’না,এই প্রশ্ন তার নারী স্বাধীনতার ধোঁয়া তুলে ওয়াশকৃত ব্রেইনে আসেনা।তাই কলিগদের মুখে থুতু দেবার ইচ্ছা কখনো পূরণ হয়নি,সাথে ওই মেয়েদেরকেও ঘৃণা করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলোনা।
ঢাকায় এলাম এরপর…অনুমান করে নেয়ার জন্যে ধন্যবাদ এখানে আমাকে গত একবছরে কত কিছু দেখতে হয়েছে।শুধু মেয়েদের নৈতিক অবক্ষয় না,তার সাথে পাল্লা দিয়ে ছেলেদের শালীনতা,রুচি,বিনোদন জ্ঞান পাতালের নিকষ অন্ধকারে নেমেছে।একটা প্রবাদ আছে,’একে তো নাচুনী বুড়ি,তার উপর যদি পায় ঢোলের বাড়ি!’ছেলেরা হলো সেই বুড়ি,আর মেয়েরা ঢোলে বাড়ি দিচ্ছেন ঢুলী হয়ে।এখন প্রশ্ন হলো,কেন এমন হচ্ছে?সমস্যা কোথায়?
সমস্যা মেয়েদেরকে দেখার,বোঝার দৃষ্টিভঙ্গিতে।
সেই আদ্যিকাল থেকে পুরুষ শাসিত সমাজ মেয়েদেরকে বারবার নিজের পায়ের তলায় ঠেলে দিয়েছে।তাই মেয়েরা যোগ্যতায়,মেধায়-মননে,উৎকর্ষতায় কখনোই তাদের ছাপিয়ে উপরে উঠে আসতে পারেনি।
ইসলাম এলো,নারী এবং পুরুষ নির্বিশেষে শান্তির এই ধর্মটি জানালো তাদের পারষ্পরিক সম্পর্ক কেমন হবে,কেউ কারো প্রতিদন্ধী নয়,দুজনকেই পরষ্পরের জায়গা দেখিয়ে দিলো।বললোঃ
“And one of the signs of His existence and power is this: He has created for you helpmates in order to make you feel comfortable with one another, and He ordained between you love and mercy. There are lessons in this sign for those who reflect” (Al-Qur’an 30:21).
দুঃখজনক এবং দুভার্গ্যজনকভাবে এই শান্তির ধর্মকে অশান্তির বানানোর যারা হোতা তারা মেয়েদের ইসলামীক অধিকারকেও সমানভাবে অশান্তির করে তুললেন।যুগে-যুগে মেয়েরা ইসলামে নিজেদের সম্মানিত স্হানতো পায়ইনি,বরং অসম্মানের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতে লাগলো।ইসলামের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সবই হতে লাগলো ভুলভাবে এবং মেয়েদের সেই পুরনো পুরুষ শাসিত সমাজের পায়ের তলাতেই জায়গা হতে লাগলো।পর্দার ভুল ব্যাখ্যা এবং তার দোহাই দিয়ে মেয়েদের আবারও বন্দী করা হতে লাগলো চার-দেয়ালের কারাগারে।বলা হলো তোমার জায়গা রান্নাঘরে,বাচ্চা মানুষ করায়,আর কোথাও তোমার লম্বা নাক ভুলেও গলাতে যেওনা।যে ইসলাম মেয়েদের মুক্তির দূত হয়ে এসেছিলো,সেই ইসলামকে বুমেরাং বানিয়ে মেয়েদের দাসত্ব যুগ ফিরিয়ে আনা হলো।
এ তো গেলো ভয়াবহতার একদিক,পশ্চিমা পুরুষ শাসিত সমাজ/দেশগুলো এরমাঝে নারীর ‘মুক্তির’ নামে,তাকে ন্যায় বিচার দেবার নামে,ভয়াবহ আরেক শাসনব্যবস্হা কায়েম করে ফেললো।’ঘর আর তোমার জায়গা নয়,ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসো,আমাদের হাতে হাত মিলাও,আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে তোমরা’-এই মন্ত্রনা দিয়ে তারা মেয়েদের ঘরের খাঁচা খেকেতো বের করে আনলো,তবে তা আবারও মেয়েদের জন্য প্রহসনের রুপে ধরা দিলো ভিন্ন আঙ্গিকে,ভিন্ন মাত্রায়।মেয়েরা আসলে খাঁচা ছেড়ে বেরোলো না,নতুন করে খাঁচার জন্তুতে পরিণত হলো,নতুন খাঁচার নতুন জন্তু।এবং নির্বোধ নারী ভাবলো,আহ্!অবশেষে আমি মুক্তি পেলাম!কিন্তু কি সেই মুক্তি?
মুক্তির নামে নগ্নতার/যৌনতার প্রদর্শনের শৃঙ্খল-বেড়ী সেচ্ছায় নিজ গলায়/পায়ে জড়িয়ে নিলো তারা।পুরুষের শিখিয়ে দেয়া পথে চলে তারা পুরুষ শাসনের অর্গলে নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিলো।আর তারই ফল দাঁড়ালো মিস ওয়ার্ল্ড/মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগীতার নামে নারীদের পণ্য বানানো,পত্রিকায়-ম্যাগাজিনে-টিভি-ইন্টারনেটে-বিজ্ঞাপণে নারীকে পণ্য বানানো…সর্বত্র নারী হয়ে দাঁড়ালো পণ্য,পণ্য আর পণ্য।পুরুষেরা ধন্য!আসলেই তারা সৃষ্টির রাজা বটে!কি চালে দাসী নারীকে তারা কুপোকাত করেছে বেকুব নারী টেরও পায়নি।ঘরের খাঁচার জন্তু বাইরে এসেও তাকে এখন বিনোদন দিচ্ছে,আগের চেয়ে অনেক বেশী আকর্ষণীয় রুপে/অনেক বেশী রোমান্চকরভাবে!জয়তু পুরুষ!
আর আমার দেশেও পালে হাওয়া লাগলো।আমার দেশের আজকের ‘নকশা’-র মেয়েরা,বিজ্ঞাপণের ‘আরসি-র মজা কত,তোমার মতো যখন যেমন চাই’ মেয়েরা,বিলবোর্ডের অর্ধনগ্ন ‘আবেদনময়ী’ মেয়েরা,প্রাইভেট/পাবলিক ইউনিভার্সিটির তথাকথিত ‘আধুনিক’ পোষাকের মেয়েরা,মধ্যবিত্ত মেয়েরা..সবাই পশ্চিমা পুরুষদের দাসীদের অনুকরণশীল বান্দরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।মারহাবা!মারহাবা!!
কোথায় স্বাধীন মেয়েরা!কোথায়?এ লজ্জা আর অপমান কোথায় রাখি যখন আমার দেশের মোল্লারা প্রেম করার অপরাধে ছেলেটিকে বাদ দিয়ে কেবল মেয়েটিকে দোররা মারেন,পাশের দেশে বাসে মেয়ে গণধর্ষণের স্বীকার হয়ে মারা যায়,যখন অভিশপ্ত দেশ পাকিস্তানে তালেবানরা মেয়েদের পড়তে চাওয়ার দোষে গুলি করে, আবার যখন সেই মেয়েকে নিজ দেশে স্হান দেয়া ইংল্যান্ডে শোবিজে কাজ করতে আসা মেয়েরা দিনের পর দিন যৌন নির্যাতনের স্বীকার হয় এবং সেসব উন্নত দেশের উন্নত মেয়েরা কাউকে বলার মতো,অভিযোগ করার মতো অবস্হায়ও থাকেনা,যখন সেসব দেশের পত্রিকায় রিপোর্ট আসেঃThree decades ago one out of three rape attacks reported to the police ended in conviction; today it is just one in 20 (দি গার্ডিয়ান),যখন দেখি সেসব দেশে বিখ্যাত বাবা নিজের মেয়েকে দিনের পর দিন যৌন নির্যাতন করে বেড়ান,টেনিসে মেয়েদের পোশাক আরো ছোটো না করলে থেলা আকর্ষণীয় হচ্ছেনা বলা হয়?..কোথায় আমি স্বাধীন??ব্যাসিক্যালি,কোথাও না!এসব দেশের মেয়েদের অবস্হা দেখুনঃ
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
কিন্তু তবু কিছু বেল্লিক আছেন আমাদের দেশে যারা ওইসব দেশকে ‘স্ট্যান্ডার্ড’ ধরে নিয়ে ওদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন,বলেন:ওদের দেশের মেয়েদের মতো হতে হবে আমাদের মেয়েদের,তবেই মহিলা মুক্তি সম্ভব!আর গন্ডমূর্খ মেয়েরাও তালিয়া বাজায়,’চলো,চলো,আমরাও ওদের মতো হবো,পাশের দেশ পশ্চিমাদের অনুকরণে যেমন গায়িকা-নায়িকা-‘নাচ-বালিয়ে’ বানিয়ে বিশাল নারী দেহ নির্ভর ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলেছে,আমরাও সেভাবেই ‘উন্নত’ হবো!মাথা খাটানোর দরকার নেই,অরুন্ধতী রায় হবার দরকার নেই,কে চেনে ওঁর মতোদের?চেনেতো প্রিয়াংকা চোপড়াকে,চেনেতো সিরিয়ালের ‘খুশী’কে যারা ফেয়ার এন্ড লাভলীর এড করে ফর্সা চামড়া-শরীর দেখিয়ে বেড়ায় তাদের।দ্যান,হোয়াট আর উই ওয়েটিং ফর!আমরাও লাক্স সুন্দরী হবো!মাথা খাটানোর যত ক্ষেত্র তার সব ছেলেদের দখলে ছেড়ে আমরা কাপড়ের কোথায় কোন ছাটটা অমুক হলিউডি/বলিউডি নায়িকার মতো হলো সেই প্রতিযোগীতায় নামবো।
আশ্চর্য লাগে যখন নামী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এইসব ‘হাই-ফাই ফ্যাশন্যাবল’ মেয়েদের দেখি হিন্দি সিরিয়ালের কাহিনী নিয়ে ঘন্টা দুয়েক আলাপ করতে,অফিসের কোন কাজ করতে গেলে চৌদ্দটা গন্ডগোল করতে, আর ইংলিশে দুই কলম লিখতে তিন কলম ভুল বানান লিখতে।আবার এরাই থার্টি-ফার্স্ট নাইটে নামী হোটেলে স্বামীর সাথে মদ খেতে যান।এরাই আমাদের ‘আধুনিক নারী’!!হলিউডি/বলিউডি অনুকরনে অন্ধ,শরীর সর্বস্ব,মাথা খালি।না,কেউ যদি বলেন,এ শুধু উচ্চবিত্তের কাহিনী,তবে তিনি ভুল করছেন। বাসার কাজের মেয়েটাও এখন ঈদে হিন্দি সিরিয়ালের নায়িকার মতো ড্রেস বানায়।গ্রামের মেয়েদের আমি কাঁধ থেকে নেটের ট্রান্সপারেন্ট হাতওয়ালা জামা পড়তে দেখেছি,গ্রামের মেয়েরাও এখন ‘আনারকলি’ পরে,ওড়না বুক থেকে গলায় তুলে নিয়েছে ওরাও কয় বছর আগেই!নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত নাকি জাতির আধার,এরাই দেশকে রিপ্রেজেন্ট করে।তো আমাদের রিপ্রেজেন্টিটিভদের এই হলো দশা!
এর শেষ কোথায়?কবে মেয়েরা জানবে তালেবান আর এ দেশীয় মোল্লা যেমন তার শত্রু,দিপিকা পাড়ুকোনে কিংবা শাকিরা-ও তার সমান শত্রু তাকে পুরুষের বগলদাবা হতে চাওয়া শো-পিস বানানোর জন্যে?কবে আমরা জানবো যে বেগম রোকেয়ার বলা ২০০ রকমের আচার,৪০০/৫০০ রকমের চাটনী-মোরব্বা বানানোর সময় আমরা পুরুষের পেটের ক্ষুধা মেটাতাম আর এখন সেখান থেকে বেড়িয়ে ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আমরা তাদের শারীরিক আনন্দ/চোখের আনন্দ মেটাচ্ছি?কবে আমরা প্রশ্ন করতে শিখবো-
১.স্কুলে কেন ছেলেরা ফুল স্লিভ/হাফ স্লিভের সাথে ফুল প্যান্ট পরবে আর মেয়েরা স্কার্ট পরে পা বের করে ঘুরবে?ছোটবেলা থেকেই প্রভুর মনোরঞ্জন করা শুরু হতে হবে?
২.অফিসে ড্রেস কোডে ছেলেদের জন্যে ফুল স্লিভ,ফুল প্যান্ট আর মেয়েদের জন্যে ফ্ল্যাশি(?) ছাড়া বাকি সব জায়েজ কেন?যাতে মেয়েরা বাহু-কোমড় অবমুক্ত রেখে,আঁটোসাটো কাপড়ে খাঁজভাজ দেখিয়ে প্রভুর মনোরঞ্জন করতে পারে?
৩.বিয়েতে ছেলেরা পায়জামা-পাঞ্জাবী-শেরওয়ানী পড়বে আর মেয়েরা শাড়ী-লেহেঙ্গা-ঘাগড়া পরে হাজার হাজার টাকা খরচ করে বিউটি পার্লার গিয়ে ‘মোহিনী-রমণী’ কেন সাজবে?কাদের দেখার জন্য?নাহলে বিয়ে হবেনা?
৪.পুরুষ সোনার চামুচ,সে বাঁকা হলেই কি!তাই তাদের পোশাক রংবিহীন হয়,আর নারীর জন্য দুনিয়ার রং নিয়ে কাপড়-চোপড়ের বাহার সাজিয়ে রেখেছে বস্তুবাদী দুনিয়ার বস্তুবাদী সব মার্কেট।কেন??আমরা কি ইমিটেশানের চামুচ??
এইসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু করো নারী,এই একুশ শতকেও না খুঁজলে আর কবে খুঁজবে?আর কতো খেলনা হবে সখার?নাকি তুমি এই-ই চাও?তোমাকে আপত্তিকর শব্দ রমণী(রমণ থেকে যার উৎপত্তি!) ডেকে কবিতা লিখবে ওরা,আর তুমি আহলাদে গদগদ হয়ে ভাববে,ওয়াও!আমার পূজা-অর্চনা হচ্ছে,আমি শ্রেষ্ঠ!ধিক তোমার বুদ্ধিবৃত্তির!চিন্তা করতে শিখো মেয়ে,বিধাতা মাথা দিয়েছেন চিন্তা করার জন্যে,শুধু বালিশে রেখে ঘুমাবার জন্যে নয়। ব্লগার তারান্নুম