ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর): ক্রমেই ব্যস্ত হয়ে উঠছে রায়পুর-চাঁদপুরসহ ফরিদগঞ্জের ৪টি রুট। অথচ এসব রুট রয়েছে অনুমোদনহীন সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকদের দখলে। লাইসেন্স না থাকলেও প্রশাসনের নাকের ডগায়ই বীরদর্পে চলছে গাড়িগুলো।
স্থানীয় লাইনম্যানকে মাত্র দশ টাকার একটি নোট ধরিয়ে দিলেই সব অবৈধ গাড়ি বৈধ হয়ে যায়! এ নিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় বৈধ লাইসেন্সধারী গাড়ির মালিকদের মধ্যে।
এদিকে অদক্ষ চালক দ্বারা পরিচালিত এ সব গাড়িগুলোই তৈরি করছে এক একটি মৃত্যু ফাঁদ। যে ফাঁদে জীবন দিচ্ছে নিরীহ সাধারণ মানুষ।
ফরিদগঞ্জ থেকে রায়পুর, চাঁদপুর, রূপসা ও চাঁদপুর-চান্দ্রা রুটগুলোতে ক্রমেই বেড়ে চলছে লাইসেন্স বিহীন সিএনজি চালিত অটোরিকশার সংখ্যা। এর মধ্যে ফরিদগঞ্জ-রায়পুর সড়কে প্রায় ১০০টি, ফরিদগঞ্জ-রূপসা সড়কে ৬০/৭০টি, ফরিদগঞ্জ-চাঁদপুর সড়কে প্রায় দেড় শতাধিক এবং চাঁদপুর-চান্দ্রা সড়কে অন্তত ১০০টি রয়েছে বলে জানা যায়।
জানা যায়, সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়েও লাইসেন্সধারী গাড়ির মালিকরা যাত্রী পাচ্ছে না অথচ অবৈধ গাড়িগুলো অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে যাত্রী লোকাল টিপে নিয়ে যাচ্ছে। গত এক বছরে ফরিদগঞ্জ-চাঁদপুর সড়কে ছোট বড় ১৪টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে অধিকাংশই ঘটেছে অদক্ষ গাড়ি চালকদের অদক্ষতার কারণে। যাদের অদক্ষতার বলি হতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। এ বিষয়টি দেখেও যেন দেখছেন না ফরিদগঞ্জ উপজেলা পুলিশ প্রশাসন।
কয়েকমাস পরপর স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন মোবাইল কোর্টের নামে কয়েকটি লাইসেন্সবিহীন অটোরিকশা আটকালেও সাধারণ মানুষ মনে করছেন তা আইওয়াশ বা বাণিজ্যিক মানুষিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। অবশ্য অবৈধ গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশানে না যাওয়ার পেছনে রয়েছে তার চেয়েও বড় কারণ।
প্রতিরাতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন উপজেলা টহল বা বিভিন্ন অপারেশনে যাওয়ার সময় ব্যবহৃত হয় এই সব অটোরিকশাগুলো। বিনা পারিশ্রমিকে এই সব অটোরিকশা চালকরা পুলিশ প্রশাসনকে একরাত সময় দিতে পারলেই তাদের সব অবৈধতা, বৈধতায় রূপ নেয়। এ সব চালক ও পুলিশদের মধ্যে সম্পর্ক এখন মামু-খালুর মতই বলে দাবি করছেন কয়েকজন গাড়ি চালক।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ-রায়পুর সড়কের দীর্ঘদিনের পুরোনো সিএনজি চালক শাহ আলম বলেন, ‘প্রত্যেকদিন আমরা কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াইয়া থাইকা প্যসেঞ্জার লওন লাগে আর লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি গুলান কোথা থেইকা জানি আইসা লোকাল যাত্রী লইয়া যায়। লাইনম্যান, পুলিশ কেউই এ বিষয়ে মুখ খুলে না।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের দু’জন লাইনম্যানের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, ‘পুলিশ ভাইয়েরা কিছু কয়না আমরা কী বলমু!’
টাকা নেয়ার বিষয়টি বললে তারা বলেন, দুই-চাইর টাকা না নিলে আমরা খামু কি?
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল হক বলেন, ‘লাইসেন্সবিহীন অবৈধ গাড়ি চলুক এটা আমিও চাই না। যেসব অদক্ষ গাড়ি চালকের কারণে সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা উচিত। এ বিষয়ে অচিরেই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
পুলিশ সদস্যদের রাত্রীকালীন টহল এবং মোবাইল কোর্টে ঘুষ বাণিজ্যের বিষয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘রাত্রীকালীন টহলের বিষয়টি ডিবি সমিতি দেখাশোনা করেন, তারপরও আমরা প্রতি চালককে নাস্তার জন্য ৫০ টাকা করে দিয়ে থাকি। মোবাইল কোর্টের বিষয়টি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটই ভালো জানেন।