কারাগারে কনডেম সেলে রাখা হয়েছিল বিএনপি’র দুই মির্জাকে

0

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, সর্বশেষ আটকের পর কারাগারে কনডেম সেলে রাখা হয়েছিল মির্জা আব্বাস এবং তাঁকে। তিনি বলেন, জেলে আমাদের কী অবস্থা হয়েছিল কখনও বলি না। এবার আমাকে ও মির্জা আব্বাসকে কোয়ারেন্টাইনের নামে চারদিন কনডেম সেলে রাখা হয়েছিল, যেখানে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়।

সোমবার (৬ই মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমার জেলে কী অবস্থা হয়েছিল আমি কখনও বলি না। আমাকে এবং মির্জা আব্বাসকে যখন জেলে নিয়ে গেল তখন দুই ঘণ্টা আমাদের অফিসে বসিয়ে রাখা হলো। অফিসে বসিয়ে রাখার কারণটা হচ্ছে তারা আমাদের কোয়ারেন্টাইনের নাম করে একটা কন্ডেম সেলে দেবে। ওটা ছিল ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জেল। আপনারা অনেকেই জানেন যে সেই সেলের অবস্থা কী। সেখানে কোনো বেড থাকে না, খাট থাকে না, মেঝেতে থাকতে হয়। ওই সাত ফিট বাই আট ফিট সেলের মধ্যে একটা হাফ.. বুক পর্যন্ত দেওয়াল দিয়ে টয়লেটের ব্যবস্থা থাকে। যে টয়লেটগুলোতে শুধুমাত্র ইন্ডিয়ান প্যানের ফ্লাশ আছে, বেসিন পর্যন্ত নেই। আমাদের একজনকে একটা সেল দিয়েছে। অন্য যারা ছিল তাদের একটা সেলে সাত-আট জন করে রেখেছে। অমানবিক, চরম অমানবিক।

তিনি বলেন, যেখানে আমরা ডিভিশন পাবো, আমি আজ পর্যন্ত অনেকবার জেলে গিয়েছি, তখন অফিস থেকে সোজা সেলে নিয়ে যেত। এবার আমাকে ও মির্জা আব্বাসকে ওখানে জোর করে নিয়ে গেল। জোর করেই বলা যায় এবং চার দিন ওখানে রাখা হলো। অথচ প্রথম দিনই আদালত যে আদেশ দিয়েছে সেই আদেশেই বলা ছিল আমাদের যেন কারাবিধি অনুযায়ী ট্রিট করা হয়। কারাবিধিতে কিন্তু উই আর অ্যান্টাইটেল টু ডিভিশন। সাবেক এমপি-মন্ত্রী হিসেবে। সেটা তারা করেনি। চারদিন বলা যেতে পারে অমানবিক। আমাদের সঙ্গে সাড়ে ৪৫০ জন ছিলেন তাদের দশ-বারো দিন একটা ঘরের মধ্যে সাত-আট জনকে রেখেছে। একটা ছিল শাপলা বিল্ডিং, তাদের দশ দিন ওই বিল্ডিংয়ের বাইরে বের হতে দেয়নি। তিন দিন সেলের বাইরে বের হতে দেয়নি। সেখানে জেলারকে বলা হয়েছে জেল কাকে বলে শিখিয়ে দাও (আমাদের)। এই একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে। সিসি ক্যামেরাতো সবখানে, প্রাইভেসি বলতে মানুষের কোনো কিছু থাকে না সেখানে।

তিনি বলেন, সরকার একটা প্রজেক্টের মতো নিয়েছে, মজার ব্যাপার হলো মামলায় নাম দিচ্ছে ১০০ জনের আর অজ্ঞাতনামা এক হাজার বা দেড় হাজার। যাদের গ্রেফতার করে জেলে নিয়ে যাচ্ছে। কোর্ট থেকে যখন জামিন পাচ্ছে তখন সঙ্গে সঙ্গে নতুন একটি মামলা দিচ্ছে। এখানে আমাদের ভিকটিম আছে (পাশে বসা) কামরুজ্জামান রতন তাকে এভাবে তিন মাস কারাগারে আটক রেখেছে। আমাদের সপু (মীর সরাফত আলী সপু) জামিন পেয়ে বের হবে তখন তাকে আবার গ্রেফতার করেছে। এটা তাদের পুরোনো খেলা। এখানে আবার কিছু বাণিজ্যের ব্যাপারও আছে। পয়সাকড়ি দিয়ে আবার… অর্থাৎ গোটা সিস্টেমটা একটা নির্যাতনমূলক সিস্টেম এবং এটা একটা পুলিশ স্টেটে পরিণত হয়ে গেছে। আপনারা শুনলে অবাক হবেন, রিজভীকে যখন নিয়ে যায়, আমি যখন জেলে ছিলাম। ওই সময়ও প্রতিদিন তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হত। একসঙ্গে মামলাগুলোর তারিখ পড়লে কিন্তু সমস্যা হয় না। অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, নির্বাচনের আগে তারা বিরোধী দলকে মাঠশূন্য করতে চায়। মাঠ থেকে বের করে দিতে চায়। কিন্তু এবারে আর সেটা সম্ভব হবে না। এবার জনগণ রাস্তায় নেমে গেছে, বিএনপি রাস্তায় নেমেছে, এই আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবে এবং নিঃসন্দেহে একটা অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে এই সরকারকে পরাজয় বরণ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, জহির উদ্দিন স্বপন, কামরুজ্জামান রতন, জেড খান রিয়াজ উদ্দিন নসু ও অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন মেজবাহ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

উৎসঃ   আমার দেশ
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More