বিপ্লবকে ‘আক্রমণ করে’ চ্যালেঞ্জের মুখে নদভী, বিব্রত আওয়ামী লীগ

0

জামায়াত ইসলামীর দুর্গ হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসন। দুর্গ ভাঙতে ‘জামায়াত ঘরানার’ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীকে দলে এনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ, যিনি ‘মধ্যপ্রাচ্য লবির’ জন্য আগে থেকেই পরিচিত ও আলোচিত। ‘কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার’ নীতি নিয়ে আওয়ামী লীগ তাকে দলে নিলেও দলটির পোড়খাওয়া অনেক নেতাকর্মীই তাকে মেনে নিতে পারেনি। একাংশের বিরোধিতার মধ্যেই নদভী ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ‍দুই দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

গত নয় বছরে সংসদ সদস্য হিসেবে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী’র বিভিন্ন কর্মকাণ্ড আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ‘জামায়াত তকমা’ ঘুচিয়ে এলাকায়-দলে প্রভাব-প্রতিপত্তি তৈরি করতে বিভিন্ন সময়ে তার কর্মকাণ্ড বিতর্ক তৈরি করেছে। ফলে আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকে পাশে নিয়ে গত দুই নির্বাচনে তিনি বৈতরণী পার হয়েছিলেন, তাদের কেউ কেউ এখন নদভীকে ছেড়ে যাচ্ছেন।

সর্বশেষ একটি কলেজ ভবন উদ্বোধন নিয়ে তিনি বিরোধে জড়িয়েছেন সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিল্পপতি এম এ মোতালেবের সঙ্গে। এই বিরোধের জেরে তিনি দলের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়াকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি রাজনীতির উত্তাপ ছড়িয়ে গেছে দক্ষিণ জেলা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত। কেন্দ্রীয় নেতা বিপ্লব সম্পর্কে এমপি নদভীর বক্তব্যসহ সাতকানিয়ার সামগ্রিক রাজনীতি নিয়ে ব্রিবত আওয়ামী লীগ নেতারা।

নদভী বিরোধীদের বক্তব্য হচ্ছে- তিনি অস্থির প্রকৃতির মানুষ, রাজনীতির শিষ্টাচার বোঝেন না, যার প্রমাণ হচ্ছে বিপ্লব বড়ুয়াকে আক্রমণ। অন্যদিকে নদভী বলছেন, এম এ মোতালেব ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল বুঝিয়ে তার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছেন।

জামায়াত নিয়ন্ত্রিত চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে বিভিন্নসময় গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে খবর প্রকাশ হয়েছে। একসময় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে দলটির জন্য তিনি অর্থ সংগ্রহ করতেন বলেও প্রচার আছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর এসব বিষয় নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হলেও নদভী বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন। তবে সাংসদ হওয়ার পর নিজ আসনে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিলেন তিনি।

সংসদ সদস্য হয়ে গত নয় বছরে নদভী দলের মধ্যেও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছেন। তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। শ্যালক মো. রুহুল্লাহ চৌধুরী সাতকানিয়ার চরতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। রিজিয়া-রুহুল্লাহ জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য প্রয়াত মুমিনুল হক চৌধুরীর সন্তান। জামায়াত নেতার দুই সন্তানকে আওয়ামী লীগে প্রতিষ্ঠিত করতে বিরোধের মুখে পড়তে হয়েছিল নদভীকে।

২০১৯ সালের ২১ জুন মুমিনুল হক চৌধুরী মারা যান। জানাজার আয়োজন করা হয় চট্টগ্রাম কলেজ সংলগ্ন প্যারেড মাঠে। জানাজার পর ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। তখন নদভীর বিরুদ্ধে তার শ্বশুরের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন করে জানাজার আয়োজন এবং বিতাড়িত ছাত্রশিবিরকে চট্টগ্রাম কলেজে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছিল, আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পরও এমপি নদভী জামায়াতের একাংশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেন।

আইনশৃঙ্খলা কমিটির এক সভায় অসম্মান করার অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ওপর চড়াও হওয়া, করোনাকালে সরকারি ত্রাণের ২৫ শতাংশ নিজের নামে বরাদ্দের দাবি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে কেন্দ্র দখলের প্রকাশ্য স্বীকারোক্তিসহ নানা ঘটনায় তিনি প্রায়ই খবরের শিরোনাম হয়েছেন। এরপর গত ১০ মার্চ সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেবের প্রতিষ্ঠিত কলেজের একটি ভবন উদ্বোধন করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সেই অনুষ্ঠানে বিপ্লব বড়ুয়া এবং এম এ মোতালেব থাকলেও নদভী ছিলেন না। নদভীর অভিযোগ, তাকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি।

সারাবাংলাকে এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘যে ভবনটা উদ্বোধন করা হয়েছে এটা ব্যক্তিগত কোনো প্রকল্প ছিল না। এটা সরকারি প্রকল্প ছিল। আমি সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একজন প্রতিনিধি হিসেবে আছি। আমাকে না জানিয়ে এই ভবন উদ্বোধন করা ঠিক হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী এসে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করে যাবেন, এটা তো হতে পারে না।’

তবে এম এ মোতালেব এমপি নদভীকে আমন্ত্রণ জানানোর দাবি করে সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনি আমার কল রিসিভ করেন না। সেজন্য আমি উনার পিএসকে ফোন করে দাওয়াত দিই। পরে পিএস জানিয়েছেন, এমপি সাহেব আমন্ত্রণ গ্রহণ করেননি। আর শিক্ষা উপমন্ত্রী মহোদয় সময় দিয়েছেন আমাদের। প্রোগ্রাম না করে কোনো উপায় ছিল না।’

এদিকে, ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠান বানচালের অভিযোগও উঠেছে নদভীর বিরুদ্ধে। সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মো. সেলিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কলেজ ভবন উদ্বোধনের আগের রাতে বোরকা পরে ৪/৫ জন লোক গিয়ে নামফলক ভেঙে ফেলে। পরে তারা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে চলে যায়। পরদিন আমরা আবার নামফলক লাগিয়ে উদ্বোধনের আয়োজন করি। উদ্বোধনের দু’দিন পর ফের সেটা ভেঙে ফেলা হয়েছে। পরে আবার আমরা নামফলক লাগিয়েছি।’

উদ্বোধনের পর দিন লোহাগাড়ায় এক সভায় নদভী বলেন, ‘বিপ্লব বড়ুয়া সাহেব, আপনি যদি এই ধরনের কর্মপরিধি উদ্বোধন করতে চান, ভবিষ্যতে নির্বাচন করেন, এমপি হয়ে আসেন; তার পর উদ্বোধন করেন। আপনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হয়ে, দফতর সম্পাদক হয়ে নিয়মের বাইরে কাজ করতে পারবেন না। এই ধরনের প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য ভবিষ্যতে আসতে পারবেন না। আমি সহজ মানুষ নই। আমি প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান করি।’

‘এমপি কে হবে, নমিনেশন কে পাবে, এটি প্রথমে আল্লাহর তদবিরের ব্যাপার। দ্বিতীয় হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থা-নির্দেশনা। প্রধানমন্ত্রী যাকে দেবেন সেই নির্বাচন করবে। আমিও হতে পারি, অন্যজনও হতে পারে। ১০০ কোটি টাকা খরচ করব যারা বলেন— ওডা তুই ১০০ কোটি টাকা খরচ গইললে, আই এক হাজার কোটি টাকা খরচ গইজ্জম। হথা ইন কিইল্লায় হড়দে (তুমি ১০০ কোটি টাকা খরচ করলে, আমি এক হাজার কোটি টাকা খরচ করব’— বলেন নদভী।

এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর আরেক দফা বিতর্কের মুখে পড়েন নদভী। কেন্দ্রীয় নেতাকে টার্গেট করে এই বক্তব্যে বিব্রত স্থানীয় নেতাকর্মীরা। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্য কুরুচিপূর্ণ, শিষ্টাচারবর্হিভূত এবং অরাজনৈতিক। গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দলের নেতার বিরুদ্ধে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া সমীচীন নয়। দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নের কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এতে আমরা বিব্রতবোধ করছি।’

সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাতকানিয়ায় এই রাজনীতি আমরা চাই না। সাধারণ নেতাকর্মীরা দায়িত্বশীল সকল নেতাকে একমঞ্চে দেখতে চায়। নেতারা যদি মাই ম্যান পলিটিক্স বাদ দেন তাহলে রাজনীতিটা একটু সুন্দর হয়। আমরাও স্বস্তি পাই।’

সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মো. সেলিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এমপি সাহেব আমাদের কেন্দ্রীয় নেতা বিপ্লব বড়ুয়ার নাম উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছেন। অথচ ভবন উদ্বোধন করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহোদয়। বিপ্লব বড়ুয়া উদ্বোধন করেননি। কেন রেখেছেন, সেটা উনিই ভালো বলতে পারবেন।’

দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে নিয়ে শিষ্টাচার বর্হিভূত বক্তব্য তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আঘাত করেছে। আমাদের হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। আমরা এর নিন্দা জানাই।’

জানতে চাইলে এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনারাও আমার বিরুদ্ধে একাধিকবার বক্তব্য দিয়েছেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানেও বিপ্লব বড়ুয়া সাহেব আমাকে নিয়ে বিভিন্ন কথা বলেছেন। প্রথমত, এমপিকে বাদ দিয়ে অনুষ্ঠানের দাওয়াত নিয়ে উনি ভুল করেছেন। আমাকে নিয়ে বক্তব্য দিয়েও তিনি ভুল করেছেন। আমি আমার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুধু স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছি যে, আপনি লিগ্যালি আসেন, ইলিগ্যালি আসবেন না।’

সেই বক্তব্যে নদভী আরও অভিযোগ করেন, উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেবের ভাই জামায়াত ইসলামীর নেতা। এ অভিযোগের জবাবে এম এ মোতালেব সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ৫০ বছর ধরে রাজনীতি করি। আমার ভাই জামায়াত করেন, এর কোনো প্রমাণ যদি উনি দিতে পারেন, আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।’

কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে নিয়ে ‘টানাটানি’

হঠাৎ কেন এই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য?— এই প্রশ্নের অনুসন্ধান করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদভী, উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব এবং কেন্দ্রীয় নেতা বিপ্লব বড়ুয়ার মধ্যে দুইমাস আগেও সুসম্পর্ক ছিল। একই উপজেলার বাসিন্দা কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন ছিলেন ‘ব্যাকফুটে’। আমিনকে আড়ালে রেখেই তারা সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং সর্বশেষ জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছিলেন। এর সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের দ্বিমত প্রকাশ্য হয়েছিল। সাতকানিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংঘাতে প্রাণ হারায় দু’জন।

স্থানীয় নেতারা জানান, গত দুইমাস ধরে নদভী অস্থির হয়ে উঠেন। হঠাৎ করে এম এ মোতালেবের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হয়। মার্চের প্রথমদিকে আমিনুল ইসলাম আমিনকে অতিথি করে সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নে একটি সেতু উদ্বোধন করেন এমপি। এরপর এম এ মোতালেব উপমন্ত্রী নওফেল ও বিপ্লব বড়ুয়াকে এনে ভবন উদ্বোধন করলে বিরোধ-অস্থিরতা প্রকাশ্য হয়ে উঠে।

ইউপি চেয়ারম্যান মো. সেলিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এমপি সাহেব আমিন ভাইকে এনে ব্রিজের উদ্বোধন করেছেন। সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যানকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। আমার ইউনিয়নে অনুষ্ঠান, আমিও দাওয়াত পাইনি। উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আমরা কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে উনি কোনো অনুষ্ঠানে ডাকেন না। উনি যেহেতু আমাদের এভয়েড করেছেন, আমরাও করেছি। ব্রিজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এমপি সাহেব উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিয়ে অশালীন কথাবার্তা বলেন।’

এম এ মোতালেব সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনি (সাংসদ) আমার নাম বিকৃত করে, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে সবসময় বক্তব্য দেন। এটা রাজনৈতিকভাবে অসুন্দর। উনি জামায়াত করতেন, কিছুদিন বিএনপি করেছেন, পরে সুযোগ বুঝে আওয়ামী লীগে এসেছেন। উনি অস্থির প্রকৃতির লোক। রাজনৈতিক শিষ্টাচার বোঝেন না।’

আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী অবশ্য এই দ্বন্দ্ব-অস্থিরতার জন্য এম এ মোতালেবকে দায়ী করেছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমিন ভাইয়ের নিজের ইউনিয়নে ব্রিজ উদ্বোধন, সেখানে আমি উনাকে অতিথি করেছিলাম। এরপর থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান বিপ্লব বড়ুয়া সাহেবকে মিসগাইড করা শুরু করেছেন। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদের অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থে আমার সঙ্গে বিপ্লব সাহেবের দূরত্ব তৈরি করছেন। আগে তো আমরা সবাই একসঙ্গে সুন্দরভাবে ছিলাম। সাতকানিয়া-লোহাগাড়া শান্ত ছিল। এখন এত সমস্যার মূলে একমাত্র উপজেলা চেয়ারম্যান।’

এম এ মোতালেব বলেন, ‘২০১৪ সালে এবং ২১০৮ সালের নির্বাচনে আমিও সাতকানিয়া-লোহাগাড়া থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু দল উনাকে মনোনয়ন দিয়েছে, আমরা উনার পাশে থেকে উনাকে জিতিয়ে এনেছি। কিন্তু এখন উনার আচরণের কারণে উনি নেতাকর্মীদের কাছ থেকে দূরে সরে গেছেন। এজন্য তিনি আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে শঙ্কা ও অস্থিরতায় ভুগছেন এবং বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করছেন।’

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়ার বক্তব্য জানতে পারেনি সারাবাংলা। তাকে কল দেওয়া হলেও তিনি বার বার কেটে দেন।

তবে সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এ ধরনের পরিস্থিতি আমার কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে এই পরিস্থিতি কেন তৈরি হয়েছে সেটা উনাদের সঙ্গে কথা বললে জানা যাবে। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’

সারাবাংলা

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More