হৃদয়ের ক্ষত সারাতে রাস্তার গর্ত ভরাট করেন সন্তানহারা বাবা

0

173910Untitled-1_copyপরনে পরিস্কার জামা-প্যান্ট, চোখে চশমা, বয়স বছর ৪৫। একহাতে বালি-সিমেন্ট মাখা মশলা, অন্যহাতে সেই মশলা মাখার কড়াই। সতর্ক চোখ রাস্তার দিকে। রাস্তায় কোনও গর্ত দেখলেই দ্রুত হাতে কাজ শুরু করে দিচ্ছেন তিনি। খালি হাতেই ইঁট-খোয়ার টুকরো গিয়ে গর্ত বুজিয়ে ওপরে বালি-সিমেন্টের আস্তরণ মাখিয়ে দিচ্ছেন। উত্‍সুক চোখে পুরো ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টায় পথচারীরা, অধৈর্য হর্নে বারবার চাপ দিচ্ছেন বিরক্ত গাড়ি চালকরা। সে সব দিকে খেয়ালই নেই তাঁর। এক জায়গার কাজ শেষ করে ফের নতুন গর্তের খোঁজে এগিয়ে যাচ্ছেন।

না, ইনি কোনও মানসিক রোগী নন। ইনি দাদারাও বিলহোরে। ভারতের মুম্বাইয়ের রাস্তায় এর দেখা পেতেই পারেন আপনি। গত বছর জুলাই মাসে এমনই এক রাস্তার গর্ত কেড়ে নিয়েছে তাঁর ১৬ বছরের তরতাজা ছেলের প্রাণ। সেই থেকে রাস্তায় গর্ত ভরাট বেড়ান তিনি। অন্য কারোর অসাবধানতার মূল্য চুকিয়ে আরও কোনও বাবাকে যাতে সন্তান হারাতে না হয়, তাই একা হাতেই রাস্তার গর্ত বোজান এই সবজি বিক্রেতা। গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি পলিটেকনিক কলেজে ভর্তি হয়ে এক কাজিনের সঙ্গে মোটর বাইকে করে বাড়ি ফিরছিল দাদারাওয়ের ছেলে প্রকাশ। রাস্তায় একটি বেসরকারি কোম্পানির খোঁড়া গর্ত বৃষ্টির জলে বুজেছিল। সেই গর্তে চাকা পড়ে উল্টে যায় বাইক। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় প্রকাশের।

ছেলের মৃত্যুর সুবিচার পেতে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি, রাস্তার গর্ত বোজানোর ব্রত নিয়েছেন দাদারাও। প্রথম দিকে তাঁর দিকে কৌতুহলী দৃষ্টি দিলেও, এখন প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসেছেন দাদারাওয়ে পাশে। রাস্তার গর্ত বোজানোর কাজে অনেকেই এখন তাঁকে সাহায্য করছেন। নিজের হৃদয়ে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদের সম্ভাব্য বিপদ থেকে বাঁচিয়ে কিছুটা হলেও সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতে চাইছেন এই সন্তানহারা বাবা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More