চলচ্চিত্রে চলছে নকলের মহোৎসব (ভিডিও)

0

maxresdefaultঢাকার চলচ্চিত্রে হিন্দি বা তামিল সিনেমা নকল করার অভিযোগ পুরনো। তবে এ সময়ে যেসব সিনেমা নির্মিত হচ্ছে, সেগুলোর সিংহভাগই নকল করে নির্মিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নকলের এই মাত্রা এখন সীমাছাড়া। গল্পের হুবহু নকলতো আছেই, এমনকি শট টু শট নকলসহ পোস্টার-ট্রেইলর পর্যন্ত নকল করা হচ্ছে। সেন্সর বোর্ড থাকলেও, তাতে কোন কাজ হচ্ছে না। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, লোম বাছতে কম্বল উজাড় হওয়ার মতো। তারপরও অনেক সিনেমাই নকলের অভিযোগে আটকে দেয়া হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র থেকে কি সিনেমার গল্প লেখার মেধা ও মনন হারিয়ে গেছে? বিনোদন উপযোগী সিনেমার গল্প লেখার কি কেউ নেই? এসব প্রশ্নের উওরে বলা যায়, অন্তত মূলধারার কমার্শিয়াল চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে নেই বললেই চলে। যারা স্ক্রিপ্ট করেন, তাদেরকে অধিকাংশ পরিচালক-প্রযোজক একটি বা দুটি হিন্দি ও তামিল বা হুবহু একটি সিনেমা বাংলায় অনুবাদ করে দেয়ার কথা বলে দেন। স্ক্রিপ্ট রাইটারও তাই করেন। তাদের মেধার পরিচয় পাওয়া যায়, যে সিনেমাটি নকল করে বাংলা ভার্সন করা হবে তার গল্প একটু আগ-পিছ করা, পুরুষ চরিত্রকে নারী, নারী চরিত্রকে পুরুষ এবং সম্পর্কের চরিত্র যেমন চাচাকে ভাই চরিত্রে রূপান্তরিত করে দেয়ার ক্ষেত্রে। তাদের মেধা বলতে এটুকুই। একটা সময় দেশীয় চলচ্চিত্রে স্ক্রিপ্ট রাইটারদের একটি সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখতে মাসের পর মাস চলে যেত। পরিচালকরা স্ক্রিপ্ট লেখানোর জন্য স্ক্রিপ্ট রাইটারকে তাদের স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতেন। ঢাকার বাইরে বা কোন হোটেল রুমে ঢুকিয়ে বাইরে দিয়ে তালা লাগিয়ে দিতেন। স্ক্রিপ্ট লেখা শেষ হলে বের করে আনতেন। তারপর সেই স্ক্রিপ্ট নিয়ে শুরু হতো পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন ও গবেষণা। এখন কেউ সিনেমা নির্মাণের উদ্যোগ নিলে সাত দিনের মধ্যেই স্ক্রিপ্ট রেডি হয়ে যায়। কেন এত দ্রুত সময়ে রেডি হয়ে যায়, তা বোধকরি ব্যাখ্যা করে বলার প্রয়োজন নেই। হুবহু কপি করতে তো আর বেশি সময় লাগার কথা নয়। যাই হোক, নকলের এই মহোৎসবের অভিযোগ এখন দেশীয় চলচ্চিত্রে চলছে। সর্বশেষ পরিচালক ইফতেখার চৌধুরী যিনি নিজেকে আধুনিক চলচ্চিত্রের একজন রূপকার ভাবেন, সেই তার বিরুদ্ধেই নকলের অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ পুরনো। সর্বশেষ তার মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা রাজত্বর বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ ছিল। এর পোস্টারটিও তামিল একটি সিনেমার হুবহু নকল ছিল। এ নিয়ে বিনোদন প্রতিদিনে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। এখন তার নির্মিত মুক্তি প্রতীক্ষিত অ্যাকশন জেসমিন সিনেমাটি নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, এটি নির্মাণ করা হয়েছে অনেকটা বলিউডের সুপারহিট সিনেমা অক্ষয় কুমার অভিনীত রাউডি রাঠোর সিনেমাকে নকল করে। পার্থক্য শুধু অক্ষয়ের চরিত্রটি এ সিনেমায় মহিলা করা হয়েছে। এ চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাহিয়া মাহি। সম্প্রতি সিনেমাটির ট্রেইলর ইউটিউবে ছাড়ার পর তা দেখে অনেকেই বলছেন এটি রাউডি রাঠোর সিনেমার অনুকরণে করা হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ চলচ্চিত্র পাড়ায় বেশ আলোচনা চলছে। অনেকে এটিকে রাউডি রাঠোরের ফিমেল ভার্সন বলছেন। শুধু গল্পই নয় পোস্টার ও বলিউডের মি. জো বি. কারভালো সিনেমার পোস্টারের হুবুহু নকল করে করা হয়েছে। অবশ্য সিনেমাটির নির্মাণের সাথে সংশ্লিষ্ট একজন সহকারী পরিচালক এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে তিনি এ কথাও বলেছেন, এখনকার সবাই কপি করেই ছবি বানাচ্ছে। এটা কোনো বিষয় না। তার এ বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়, সিনেমাটি রাউডি রাঠোরের অনুকরণেই নির্মাণ করা হয়েছে। শুধু এই সিনেমাই নয়, এমন অনেক সিনেমাই এখন নির্মিত হচ্ছে যেগুলোর অধিকাংশই হিন্দি বা তামিল সিনেমার নক
ল। হল মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকমাসে প্রায় ২০টির মতো সিনেমা মুক্তি পেলেও হাতেগোনা দুয়েকটি ব্যতিত প্রায় সবগুলোই ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর কারণ মূল কারণ নকল। সিনেমায় নকলের এই আশঙ্কাজনক প্রবণতা ঠেকাতে সেন্সর বোর্ডের উচিত হবে, এ ব্যাপারে আরও সচেতন হওয়া এবং অভিযোগ খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া। তা নাহলে চলচ্চিত্রে নকলের যে মহোৎসব চলছে, তা কোনভাবেই রোধ করা যাবে না। চলচ্চিত্রের প্রতিও দর্শক আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। আর গাটের পয়সা খরচ করে, নকল সিনেমা দেখারও কোন কারণ নেই। তাই চলচ্চিত্রের স্বার্থেই এ ধরনের নকল সিনেমার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। ছবি : অ্যাকশন জেসমিন (ক্যাপশন : অ্যাকশন জেসমিন সিনেমার একটি দৃশ্য। এ সিনেমার বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ উঠেছে)।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More