সেশন জট দূর করার নামে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ কি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত?

0

NU_thebartaজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকছে না সরকারি কলেজসমূহ! জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই সংবাদ প্রকাশের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিশেহারা হয়ে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য উদ্ভট সব পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে যাচ্ছে যা কোনমতেই বাস্তব সম্মত নয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএর ভিত্তিতে ১লা অক্টোবর থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে (দৈনিক যুগান্তর- ২৬ মে, ২০১৫)।
এর ফলে দেশের সর্ববৃহৎ উচ্চশিক্ষা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে যে সমস্যাগুলি তৈরি হবেঃ
১. গ্রামের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সর্বশেষ সুযোগটিও হারাবে।
২. মার্দাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর ই জিপিএ ৫.০০ থাকে। কিন্তু বিগত সালের ভর্তি পরীক্ষাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায় তারা মেধার ভিত্তিতে ভালো কোন বিষয়ে চান্সই পায় না। এর ফলে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা মেধা থাকা সত্বেও পিছিয়ে পড়বে।
৩. অধিকাংশ সময়ই লক্ষ করা যায় যে শুধু জিপিএ ৫.০০ দিয়েই মেধার মূল্যায়ন সঠিক হয় না। উদাহরণ সরূপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে জিপিএ ৫.০০ না থাকা সত্বেও মেধা থাকার কারেনে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়।
৪. মেধার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষার বদলে শুধুমাত্র জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ যদি বাস্তব সম্মতই হতো তাহলে মেডিকেল কলেজ, ইজ্ঞিনিয়ারিং বিশ্বঃ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলো শুধুমাত্র জিপিএর ভিত্তিতেই ভর্তি পরীক্ষা নিত। যা গ্রহণযোগ্য কোন সমাধান নয়।
এই বাস্তবতাকে উপলদ্ধি করেই গতবছর মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েও পিছু হটেছে। কারণ তারা উপলদ্ধি করতে পেরেছে যে শুধুমাত্র জিপিএর মাধমে ভর্তি নেওয়া মেধা যাচাইয়ের কোন সঠিক পদ্ধতি হতে পারে না।
৫. পরিসংখানে দেখা যায় ভালোমানের সরকারি কলেজগুলোতে জিপিএ ৫.০০ নিয়েও অনেক ছাত্রছাত্রী চান্স পায় না। এর প্রধান কারন আসন সংখ্যার অপর্যাপ্ততা এবং শহরের কলেজগুলোর জিপিএ ৫.০০ এর আধিক্য। সুতরাং এই বাস্তবতায় মফস্বলের বা গ্রামের ছেলেমেয়েদের চান্স পাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
৬. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১লা অক্টোবর থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করলে তখন অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরই ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হবে না। এমতবস্থায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্টি হবে নতুন সংকট। কারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শেষ না হওয়ার ফলে প্রাথমিকভাবে সকলেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে বাধ্য হবে কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বাতিলের মিছিল। এর ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সমূহ রাতারাতি শূন্য হয়ে যাবে। এতেকরে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীরই দুই বা ততোধিকবার ভর্তি হতে হবে যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। এর ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে যাবে। কারন শূন্য পূরণ করতে রিলিজ স্লিপের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত লেগে যাবে। তাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালের ভর্তি পরীক্ষার আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা।
৭. নিজেদের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ১লা ডিসেম্বর অনার্স ১ম বর্ষের ক্লাস শুরু করার যে ঘোষণা দিয়েছে তা শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করানোর জন্যই। যা বাস্তবতা বর্জিত একটি বুলিমাত্র।
৮. জিপিএর মাধ্যমে ভর্তি করলে মেধাশূন্য একটি জাতি তৈরি হবে। প্রকৃতপক্ষে জিপিএর মাধ্যমে ভর্তি নেওয়া মেধা যাচাইয়ের কোন মাপকাঠি হতে পারে না, তাহলে উন্নত বিশ্বেও ভর্তি পরীক্ষার দরকার হতো না।
৯. এসএসসি ও এইচএসসির রেজাল্ট যদি মেধা মূল্যায়নের চূড়ান্ত মাপকাঠি হয়ে থাকে তাহলে এই দুটি সার্টিফিকেটের কল্যাণে অনার্স ও মাস্টার্সের রেজাল্ট দিয়ে দিন এবং পরবর্তীতে এর ভিত্তিতেই বিসিএস ক্যাডার নিয়োগ দিয়ে দিন।
জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিরূদ্ধে রুখে দঁড়ান। নাহলে গরীব মানুষের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের একমাত্র ক্ষেত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সপ্নটুকুও বেঁচে থাকবে না।
উচ্চশিক্ষা সুযোগ নয়, অধিকার!!!

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More