কক্সবাজার : ঘূর্ণিঝড় কোমেন আতঙ্ক কাটিয়ে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকার জনজীবন। ৭ নম্বর বিপদসংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত জারির পর কক্সবাজারের উপকূলের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, গভীর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় কোমেন ক্রমশ দুর্বল হয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করেছে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে সন্দ্বীপ উপকূল দিয়ে অতিক্রম করে। এখন ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরো জানান, কোমেন অতিক্রমের পর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বরের পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকেও ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা উপকূলীয় এলাকার মানুষ। শুক্রবার সকাল থেকে জেলার ২৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে দলে দলে মানুষ ফিরে যাচ্ছে।
কক্সবাজার শহরের পৌর-প্রিপারেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া নাজিরারটেক গ্রামের আব্দুর রহিম (৬০)। গরু-ছাগল, স্ত্রী ও দুই বাচ্চাকে নিয়ে ফিরছেন নিজ বাড়িতে।
তিনি বলেন, ‘দুই রাত খুব কষ্টে এবং আতঙ্কে কাটিয়েছি। এখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’
শুধু আব্দুর রহিম নন, ঘূর্ণিঝড় কোমেনের আতঙ্ক কাটার পর কক্সবাজার শহরের উপকূলীয় এলাকা নাজিরারটেক, ফদনার ডেইল, সমিতি পাড়া ও কুতুবদিয়া পাড়ার ১০ হাজার মানুষ বাড়ি ফিরছে।
কক্সবাজার পৌর-প্রিপারেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় থেকে লোকজনকে বাঁচাতে উপকূলের কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে সরে এসে এখানে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর শুক্রবার সকালে লোকজন বাড়ি ফিরে গেছে।
এদিকে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকা টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও পেকুয়ায় বিভিন্ন স্কুলে আশ্রয় নেওয়া মানুষরাও ঘরে ফিরে যেতে শুরু করেছে।
সেন্টমার্টিন কোস্ট গার্ডের স্টেশন কমান্ডার ডিকসন চৌধুরী সময়ের কণ্ঠস্বর কে জানান, কোস্ট গার্ডের কার্যালয় ও বিভিন্ন হোটেলে প্রায় ৪ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছিল। পরে শুক্রবার সকাল থেকে তারা ঘরে ফিরে যাচ্ছে। এ ছাড়াও সেন্ট মার্টিন দ্বীপে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা দেখা হচ্ছে।
মহেশখালী ধলঘাটান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ বাচ্চু জানান, আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ২০ হাজার মানুষ দুদিন খুব কষ্টে রাত যাপন করেছে। এখন তারা স্বস্তিতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। তাদের ত্রাণও দেওয়া হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় কোমেনের কারণে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। কারণ ঘূর্ণিঝড় আঘাত আনার আগে বুধবার দুপুর থেকে লোকজনকে সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে এসেছিলাম। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া লোকজন বাড়ি ফিরে গেছে। কিন্তু তাদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় কষ্টে পড়েছেন।’
কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা জানান, প্রশাসনের নজরদারির কারণে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষদেরও পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে লোকজন বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। তাদের বাড়ি যেতে গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় কোমেন উপকূল অতিক্রম করায় এবং বিপদসংকেত নামিয়ে ফেলার কারণে আবারও সচল করা হয়েছে বিমানবন্দরের সকল কার্যক্রম।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ম্যানেজার সাধন কুমার মোহন্ত জানান, ঘূর্ণিঝড় কোমেনের কারণে বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিপদ এড়াতে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বেলা ১১টা থেকে পুনরায় কক্সবাজার বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ রুটে সকল ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়েছে।
এদিকে আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে মানুষরা ফিরে গেলেও জোয়ারের পানিতে কক্সবাজার মহেশখালীর ধলঘাটা ও মাতারবাড়ীর ১০ গ্রাম, কুতুবদিয়ার ১০ গ্রাম ও পেকুয়ার ৫ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে প্লাবিত এলাকার মানুষরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।