মুক্ত মতপ্রকাশের জন্য বাংলাদেশে বছরটা শুভ নয়। কট্টর ইসলামপন্থিরা বেশ কয়েকজন ব্লগারকে হত্যা করেছে। এখন রানা প্লাজা ধসের ওপর নির্মিত একটি ছবির প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০১৩ সালে ওই ভবনটি ধসে নিহত হয়েছিলেন কমপক্ষে ১১০০ গার্মেন্ট শ্রমিক। নিউ ইয়র্ক টাইমসে ২৭শে আগস্ট ‘দ্য বিজার কেস এগেইনস্ট এ রানা প্লাজা ডকুমেন্টারি’ শীর্ষক এক মতামত প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন বিকাশ বাজাজ। এতে বলা হয়েছে, কমপক্ষে ছয় মাস ছবিটির প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ওই ছবিটি প্রদর্শন করা হলে তাতে দেশের শক্তিশালী তৈরী পোশাক শিল্পের নেতিবাচক দিক বেরিয়ে আসবে। তাই এটি প্রদর্শন করা ঠিক হবে না। বিকাশ বাজাজ লিখেছেন, ওই ট্র্যাজেডির ওপর নির্মিত ছবি নয়, দেশে এ শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে রানা প্লাজা ধসের ফলে। নজরুল ইসলাম খান নির্মিত ‘রানা প্লাজা’ নামের ছবিটিতে, ভবন ধসে প্রাণে বেঁচে যাওয়া রেশমা আক্তারের গল্পের মধ্য দিয়ে ট্র্যাজেডিটি তুলে ধরা হয়েছে। রানা প্লাজা ধসের ১৭ দিন পর রেশমাকে ভবনের বেজমেন্ট থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তার উদ্ধার তৎপরতা স্থানীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। কিভাবে তিনি এতোদিন ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিত ছিলেন তা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস সহ বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। এটা এমন একটা ঘটনা যা বলা ও শোনা উচিত। ঘটনাপ্রবাহের অদ্ভুত মারপ্যাঁচে, ছবিটির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন একজন শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি। ডয়েচে ভেলে’কে তিনি বলেন, শ্রমিকদের স্বার্থে সোচ্চার শ্রমিক ইউনিয়নগুলোকে ছবিতে যথেষ্ট কৃতিত্ব দেয়া হয় নি। বিকাশ বাজাজ লিখেছেন, সত্যিকার অর্থে এটা উদ্ভট এক যুক্তি, কেননা আমি যত বাংলাদেশী শ্রমিক নেতার সঙ্গে দেখা করেছি তাদের বেশির ভাগই স্বীকার করেছেন যে, দেশটিতে ঐতিহাসিকভাবে শ্রমিকদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর ক্ষমতা ছিল নিতান্তই অল্প। এর কারণ সরকার ও পুলিশের ওপর কারখানা মালিকদের প্রভাব অনেক বেশি। ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে যথার্থই বলা হয়েছে, ছবিতে কত ভালোভাবে ও কত সহানুভূতি নিয়ে গল্পটি বলা হয়েছে সেটা দেখার আগ্রহ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এর মুক্তি আটকে দেয়া উচিত নয়।