ঈদের দিনে কাজ তবু মুখে হাসির ভাঁজ!

0
নার্গিস মজিদ লীমা
নার্গিস মজিদ লীমা

ঈদের দিন সকাল ৭টা। এর আগেই অফিসে পৌছাতে হবে নার্গিস মজিদ লীমাকে। বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের এই সংবাদ পাঠিকা যথাসময় হাজির স্টুডিওতে। দর্শকদের দিচ্ছেন দেশ-বিদেশের নানান খবর। ঈদের প্রথম প্রহরটি পরিবারের সঙ্গে কাটাতে না পারলেও হাসিমুখেই তা মেনে নিচ্ছেন এই সংবাদ পাঠিকা।[ads1]

ঈদের দিন কথা হয় এসএ টিভির এই সংবাদ পাঠিকার সঙ্গে। তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘আসলে ঈদের দিন মানে খুশির দিন। আর এই দিনে সন্মানিত দর্শদের কাছে সংবাদ পৌঁছে দেয়ার অনুভূতি অন্যরকম। যদিও পরিবারের সঙ্গে সময়টুকু কাটাতে পারলে ভালো লাগতো। তবে কাজের মধ্যে থাকা মোটেও খারাপ লাগছে না। সবচেয়ে ভাল লেগেছে যে আমাকে দিয়েই ঈদের প্রথম নিউজ শুরু হয়েছে।’

নার্গিস মজিদ লীমা তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘অন্যান্য ঈদে বাসায় থাকলে দেখা যায়, সহজে রেডি হই না। আজকে ঈদের দিন সকাল থেকেই নিউজের কারণে সেজেগুজে বসে আছি। বাড়িতে এসেও সেজেগুজেই কাজ করবো। অনেকটা টিভি সিরিয়ালের বউদের মতো!’

ঈদের আনন্দ কি আর পরিবার-পরিজন ছাড়া পূর্ণ হয়। ঈদে সবাই স্বজন আর বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেন। তবে বরাবরাই ব্যতিক্রম গণমাধ্যমকর্মীরা। তাদের বেশিরভাগেরই নেই ছুটি। তারপরও হাসিমুখে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছেন তারা।[ads2]

রেডিও, টেলিভিশন ও অনলাইন গণমাধ্যমে যারা কাজ করেন, তাদের ঈদের ছুটি পাওয়া খুব সৌভাগ্যের বিষয়। পত্রিকা অফিস তাও তিন দিন বন্ধ থাকে, কিন্তু ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ায় কোনো বিরতি নেই। বছরের প্রতিটি দিন ২৪ ঘণ্টা রেডিও, টেলিভিশন ও অনলাইন পত্রিকার কার্যক্রম চলে।

খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর দেশের অধিকাংশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল তাদের কর্মীদের ছুটি দেয়নি। হাউজে কর্মরত সংবাদিকদের ‘অর্ধেকের’ ছুটি দেয়া হয়েছে। বাকিদের ঈদের দিনও অফিস করতে হচ্ছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যম ঈদের নিয়োজিত কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদ উৎসব নিয়ে তাদের অনেক নিউজ কাভার করতে হয় অথবা প্রোগ্রাম তৈরি করতে হয়। এটাও হয়তো ঈদ আনন্দেরই একটা অংশ। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় ঘুরে বেড়ানো এমন সৌভাগ্য খুব কম জনেরই হয়।

কথা হয় এটিএন বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি মোরশেদ আলমের সঙ্গে। তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘একজন পেশাদার গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে ঈদে অফিস করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কাজকে এনজয় করছি। দর্শক খুশিতো, আমরা খুশি।’[ads1]

কথা হয় দেশের প্রথমসারির অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজ২৪ডটকমের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট উর্মি মাহবুবের সঙ্গে। গুলশানের সন্ত্রাসী হামলার অভিজ্ঞতা টেনে তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘এ ঘটনায় ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। সেদিন পুরো রাত গুলশানে সংবাদ সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলাম। মাত্র কিছুটা দূরত্বে ছিলো মানুষগুলো। এক রাতের মধ্যেই সব যেন শেষ। তারওপর আইএসের নানা টুইট। দেশের এই অবস্থায় আনন্দ করা সত্যি কঠিন বিষয়। তাছাড়া সাংবাদিকতা অন্যান্য পেশাগুলোর মতো নয়। আর তাই পেশাগত দায়িত্ব পালনেই আমি বেশি আনন্দ খুঁজে পাই।’

পাঠককে রাজনৈতিক প্রতিবেদন উপহার দিতে এবার ঈদের কাজ করছেন বাংলামেইল২৪ডটকমের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘সবাই যখন আপনজনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভগি করতে ব্যস্ত তখন ও আমরা কর্তব্য পালনে ব্যস্ত। আমাদের মতো আপনজনদের ছেড়ে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। চিকিৎসকরাও রয়েছেন। আমি অত্যন্ত শোকাহত দায়িত্বপালনকালে আজ ও কিশোরগঞ্জে দুই পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরো কয়েকজন। নিহতদের আত্মার মাগফেরাত ও আহতরা দ্রুত সেরে উঠুক সেই প্রত্যাশা করেন এই সংবাদকর্মী।[ads2]

দেশের জনপ্রিয় এই গণমাধ্যমটির আরেক সংবাদকর্মী রাসেল আহমেদ বলেন, ‘আসলে সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা যেখানে ছুটি কাটানোর খুব একটা সুযোগ নেই। পেশাদারিত্বের খাতিরে ঈদের ছুটি কাটানোর বিষয়টি অনেকটা ভুলে গেছি বলতে পারেন। বিগত ৪ বছর যাবত প্রতিটি ঈদে কর্মক্ষেত্রে ছিলাম। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।’

এবারের ঈদে মেডিকেলগুলোতে ঘুরে রোগী ও চিকিৎসকদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন রাইজিংবিডির নিজস্ব প্রতিবেদক আরিফ শাওন। তিনি বলেন, ‘কাজ করছি নেশা থেকে। এই নেশা ঈদ বুঝে না। সত্যিই খুব ভালো লাগছে। প্রতিটি মুহুর্তে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নিচ্ছি।’

ঈদে পেশাগত কাজকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন বাংলাট্রিবিউনের রিপোর্টার চৌধুরী আকবর হোসেন। তিনি বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে। সব সময় নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকি। কিন্তু অফিস করার কারণে অন্যদের ঈদ আনন্দ দেখার সুযোগ পাই!’

এ প্রসঙ্গে মিশ্র অনুভূতি জানিয়েছেন দ্য রিপোর্টের সংবাদকর্মী কাওসার আলম। তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘একদিকে পরিবারের বাইরে থাকার কষ্ট। অপরদিকে দায়িত্ব পালন করছি। কারও কারও জন্য ব্যক্তিগত সুখ দুখ বিসর্জন দিতে হয়। পুলিশ, ডাক্তার, বিদ্যুৎ বিভাগসহ আরও বেশ কিছু বিভাগের লোকদের ডিউটি করতে হয়। সবাই ঈদ পালন করলে কিন্তু চলে না। এটাই পেশার প্রতি সন্মানবোধ।’[ads1]

ঈদে অফিস করছেন তরুণ সাংবাদিক মেহেদী হাসান ডালিম। আইন নিয়ে কাজ করা এই সংবাদকর্মী বলেন, ‘আসলে সাংবাদিকতা শুরুর আগে কখনও কল্পনা করিনি বাবা-মা প্রিয়জন ছেড়ে এই ঢাকা শহরে ঈদ করতে হবে। অনলাইন পোর্টালে কাজ করি বলে সেই থেকে প্রতিবছর একটি করে ঈদ ঢাকায় করতে হয়। সকাল থেকে বিভিন্ন নিউজ সংগ্রহ করতে করতে সময় কেটে যায়। তবে সেই প্রিয় গ্রাম, প্রিয় মানুষগুলো সান্যিধ্যে খুব মিস করি।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More