ঢাকা: রাত ৩টা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে দেখা গেল আফসারা আনজুম আরশিকে। তিনি এসএসসি ও এইচএসসিতে ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে থেকে গোল্ডেন প্লাস পেয়েছেন।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেও বিতর্কিত ভর্তি পরীক্ষার কারণে মেডিকেলে ভর্তি হতে পারেননি।
প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ তুলে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে ফের পরীক্ষার দাবিতে তাই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশন করছেন তিনি।
শুধু আরশিই নয়, একই দাবিতে আমরণ অনশন করছেন আরো অনেক ছাত্র-ছাত্রী। এমনকি সন্তানের আমরণ অনশনে পাশে রয়েছেন তাদের মা-বাবাও।
বুধবার (১৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে এ চিত্র দেখতে পাওয়া যায়।
আমরণ অনশন প্রসঙ্গে আরশি বাংলানিউজকে বলেন, ‘যতোদি না ফের মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা না হবে ততদিন আমরা শহীদ মিনার ছাড়ব না। দরকার হয় এখানেই আমরা শেষ হয়ে যাব। আমি দুটি পরীক্ষায় গোল্ডেন প্লাস পেয়েছি। সঠিকভাবে পরীক্ষা হলে আমি মেডিকেলে ভর্তি হতে পারব। আমি অযোগ্য নই।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের মায়ের মতো। ওনাকে আমরা বলব, আপনি আপনার সন্তানদের নিরাশ করবেন না। আমরা ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি না হতেও পারলেও অন্য মেডিকেলে ভর্তির যোগ্যতা রাখি।’
মেয়ে আরশির সঙ্গে অনশনে সঙ্গী হয়েছেন তার বাবা এম এম আলমগীর ও মা দিলারা আলমগীর।
এমএম আলমগীর বলেন, ‘মেয়ে অনশনে এসেছে। মেয়েকে একা ফেলে তো আমরা বাসায় থাকতে পারি না। সরকারের কাছে দাবি ফের যেন মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা হয়। আমরা যারা রাত জেগে শহীদ মিনারে আছি তারা যেন ন্যায়বিচার পাই। দরকার হয় সরকার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করুক।’
অনশনে থাকা মেডিকেলে ভর্তিচ্ছুদের অনেকের অভিযোগ, জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদেরই একজন লাইলাতুল বারাত লামিয়া। তিনি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ রাইফেলস পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন প্লাস পেয়েছেন।
লামিয়া বলেন, ‘মেডিকেল পরীক্ষা দিয়ে বাসায় এসে প্রশ্ন মিলিয়ে দেখেছি ৯৫ নাম্বার পাব। কিন্তু পরীক্ষায় রেজাল্ট এসেছে আমি নাকি ৬৫ পেয়েছি। এটা মেনে নেওয়া যায় না। মেডিকেল পরীক্ষায় আকাশ সমান জালিয়াতি হয়েছে। গভীর রাতে আমাদের পড়ার টেবিলে থাকার কথা। কিন্তু বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনারে এসেছি। ফের পরীক্ষা না হওয়া পযর্ন্ত ঘরে ফিরব না। তাই প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনি আমাদের মা। সন্তানদের দুঃখ-কষ্ট দেখে যান।’
লামিয়ার সঙ্গে অনশন করছেন তার বাবা এনামুল হাসান ও মা শিউলি হাসান। এনামুল হাসান বলেন, আজকে ২৭ দিন আমার মেয়ে পড়ার টেবিলেই যেতে পারে না। সারাদিন পথে থেকে রাতে গিয়ে পড়তে পারে না। এখন দাবি না মেনে নেওয়া পযর্ন্ত মেয়ে শহীদ মিনার ছাড়বে না। বাবা হয়ে তো আর ঘরে বসে থাকা যায় না।’
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন প্রশ্ন ফাঁস হয়নি তাহলে আমরণ অনশন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী কিসের উপর ভিত্তি করে বলছেন প্রশ্ন ফাঁস হয়নি, এর প্রমাণ চাই। তিনি ধারণার উপর নির্ভর করে এসব কথা বলেছেন। প্রশ্ন ফাঁসের প্রতিবাদ না করলে এটা চলতে থাকবে। তাই ন্যায়বিচার না পাওয়া পযর্ন্ত মেয়েদের সঙ্গে আমরাও অনশনে থাকব।’
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মুহাইমিনুল নিয়ন বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পযর্ন্ত আমরা শহীদ মিনার ছাড়ব না। আমাদের একটাই দাবি, ফের মেডিকেল পরীক্ষা। অন্যথায় শহীদ মিনার ছাড়ব না।’
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী খাদিজার সঙ্গে অনশন করছেন তার বাবা আজগর আলী। তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে দাবি মেধার উপর ভিত্তি করেই যেন ভর্তি করা হয়। তা না হলে আমাদের সন্তানেরা মেধা থেকেও বঞ্চিত হবে। তাছাড়া আমাদের মতো মধ্যবিত্তরা মেয়েকে প্রাইভেট মেডিকেলে পড়াতে পারব না।’
দ্বিতীয়বারের মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করা শিক্ষার্থী সামিয়া ফারা।
তিনি বলেন, ‘আন্দোলন ২৭ দিন গড়ালো, পড়ার টেবিলে যেতে পারি নাই। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস পাইনি। আর কোনো পরীক্ষায় অংশ নিতে পারব না। তাই দাবি না মানা পযর্ন্ত শহীদ মিনারেই থেকে যাব। এছাড়া সামনে আমাদের কোনো উপায় নেই।’
অনশনকারীরা জানান, আন্দোলনের ২৭তম দিন পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার সকাল ১০টা থেকে শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। তবে এরইমধ্যে আরাফাত হাওলাদার এবং সাখাওয়াত হোসেন নামে দুই ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম