২৩ আক্টোবর শারদীয় দূর্গোৎসবের ছুটিতে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় অগনিত পর্যটকদের সমাগমকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের বাধ্য করে টাকা আদায় করছে হোটেল ব্যবসায়ীরা।
আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীরা যে যার খেয়াল খুশিমত আদায় করেছে রুম ভাড়া। খাবাবের দামেও নেই নিয়ন্ত্রন। এমন খবরে পর্যটক নির্ভরশীল ট্যুরিজম ব্যববাসয়ীরাও সুযোগ গ্রহণ করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে যে যার মত।
এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে আর্থিক সংকটে অধিকাংশ পর্যটকই ৩-৪ দিনের ভ্রমন বাতিল করে এক দিনে পর ফিরেছেন গন্তব্যে।
বৃহস্পতিবার বিকালে এবং শুক্রবার অনেক পর্যটক নির্ধারিত মূল্যে আবাসিক হোটেলে রুম না পেয়ে ফের গন্তব্যে ফিরে গেছেন এমন খবর নিশ্চিত করেছেন একাধিক সুত্র।
কর্তব্যরত টুরিষ্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশ, হোটেল-মোটেল মালিকদের সংঠগন এবং সী-বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির নিয়ন্ত্রন ছিলনা বলে দাবী করেছেন পর্যটকগণ। আবাসিক হোটেল মোটেল মালিকদের সাথে কথা বলে জানাজায়, কুয়াকাটায় নামী দামী সব মিলিয়ে ৪০ টি আবাসিক হোটেল রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সাচ্ছন্দে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে ৫ হাজার পর্যটকদের।
কিন্তু গত ২০ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার পর্যটকদের সমাগম ঘটে কুয়াকাটায়। সিঙ্গেল রুমে ১ জনের থাকার ব্যবস্থা থাকলেও থেকেছেন ৩ জন পর্যটক। ডাবল রুমে ২ জনের বদলে ৬ জন, এমন হিসেবে আবাসিক হোটেলগুলোতে কমপক্ষে ৩০ হাজার পর্যটক কষ্ট করে রাত্রি যাপন করেছেন।
বাদবাকী ২০ হাজার পর্যটক সৈকতের একাধিক পয়েন্টে ও গাছ তলায় মাদুর ও চাদর বিছিয়ে এবং পাশ্ববর্তী বাসা বাড়িসহ আত্মীয় স্বজনদের বাসায় থেকেছেন।
পর্যটকদের এমন অসাহয়ত্বকে জিম্মি করে নামী দামী আবাসিক হোটেল থেকে শুরু করে নিম্ম মানের হোটেলগুলো লুফে নিয়েছে কয়েক’শ গুন বেশী টাকা। অখ্যাত হোটেল গুলোর তিন’শ টাকার রুমে ভাড়া আদায় করেছে তিন হাজার টাকা।
১’হাজার টাকার রুম ভাড়ার বিপরীতে ৫’হাজার টাকায় ভাড়া ও দিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। আগাম বুকিং বাতিল হওয়ায় এবং কয়েক দিনের যাত্রা ১ দিনে সমাপ্ত হওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা আরোও বেশী লাভবান হয়েছে বলে ভূক্তভোগী পর্যটররা জানিয়েছে।
স্যান্ড বীচ নামের অভিজাত আবাসিক হোটেলে একটি রুম ৩’হাজার টাকায় আগাম বুকিং দিয়েছিল খুলনা জেলার এক দম্পত্তি। স্বপরিবারে কুয়াকাটায় এসে বাড়তি রুম চেয়ে না পেয়ে ওই রুমটি বাতিল করে আত্মীয় খলিল মুসুল্লীর বাড়িতে গিয়ে ওঠে।
খলিল মুসুল্লী জানিয়েছে, বুকিং’র টাকা ফেরত দেয়নি, কিছুক্ষন পরই ওই রুমটি ৮’হাজার টাকায় ভাড়া দেয় ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ। ভয়েস ট্র্যাক কমিউনিকেশন এর সিইও মি. সারোয়ার ঢাকার গুলশান থেকে ৪ বন্ধুসহ বৃহস্পতিবার রাতে কুয়াকাটা পৌঁছেছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অনেক দেনদরবার করে সাগরকন্যা হোটেলের ৫’শ টাকার রুম ২’হাজার টাকা ভাড়ায় এক রাত তারা থেকেছেন।
শুক্রবার সকালে পর্যটন করপোরশনের যুব পান্থ নিবাসের বুকিং বাতিল হলে তারা দুটি রুম নিয়ে সেখানে উঠেন। কুয়াকাটা প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার জন্য আরোও কয়েকটা দিন থাকার ইচ্ছা থাকলেও শনিবার সকালে ঢাকার উদ্যেশে রওয়া হবেন।
তিনি বলেন, এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি ও অব্যবস্থাপনা সৃষ্টি হলে সত্যিই কুয়াকাটা থেকে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিবে। অপরদিকে পটুয়াখালী সদর আসনের এমপি ও জাতীয় পার্টির সাবেক মহা সচিবের নির্মানাধীন আবাসিক হোটেল কুয়াকাটা গ্রান্ড হোটেলটি উদ্বোধনের আগেই পর্যটকদের অতিরিক্ত চাপকে পুজিঁ করে ৩ দিনের প্যাকেজে ৩০ লাখ টাকায় ভাড়া দেন। এমনকি তার ব্যাক্তিগত রুমটি ১ রাতের জন্য ৩০ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছে বলে একটি সুত্র দাবি করেছেন।
কুয়াকাটা ইনভেষ্টার ফেরামের মুখপাত্র হাসানুল ইকবাল ওই সব অনিয়মের তদারকির তাগিদ দিয়ে বলেন, আমরা কেমন জানি পর্যটকদের সেবাদানে দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছি।
এর কারণ হিসেবে হাসনুল ইকবাল দাবী করেছেন, পর্যটক নির্ভরশীল ব্যবসায়ীদের যথাযথ প্রশিক্ষনের অভাব রয়েছে। পর্যটকদের সেবায় ব্রত না হয়ে বানিজ্যিক হওয়ায় ভবিষ্যতে কুয়াকাটার জন্য নীতিবাচক প্রভাব পড়বে। কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজের ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক জাকির হোসেন এমন পনিস্থিতি দেখে সাংবাদিকদের বলেন, হাঁসে সোনর ডিম পাড়ে এমন খবরে লোভী চাষীর মতো লোভ করে পর্যটকদের গলা কাটলেন ব্যবসায়ীরা।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও কুয়াকাটা গেষ্ট হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোতালেব শরীফ জানান,সংগঠন বর্হিভূত আবাসিক হোটেলগুলোতে এ রকম করেছে বলে শুনেছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,সংগঠনের অর্ন্তভূক্ত কোন হোটেল এমন কাজ করলে এবং তার প্রমাণ মিললে অবশ্যই সংগঠন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। টুরিষ্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের সিনিয়র এএসপি মীর ফসিউর রহমান বলেন, শারদীয় দূর্গোৎসবের ছুটিতে অগনিত পর্যটদের ভীড়ে হোটেলে রুম না পেয়ে গাছের তলায়,সৈকতে এবং বাসা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
পর্যটকদের এমন অসাহয়ত্বকে জিম্মি করে একাধিক হোটেল মালিক মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছেন এমন অভিযোগ তিনি পেয়েছেন।তবে সুনিদৃষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।