বেলা দেড়টা। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশে অফিস সহকারীদের কক্ষে এক নবজাতক নিয়ে বসে আছেন এক নারী। এখানে নবজাতক কেন—জানতে চাইলে এক অফিস সহকারী বললেন, ওর মা পরীক্ষা দিচ্ছে। আর উনি (ওই নারী) নবজাতকের আত্মীয়। শিশুটির বয়স এক দিন।
উৎসুক মনে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকে দায়িত্বরত শিক্ষককে জিজ্ঞেস করতেই সেই মায়ের খোঁজ মিলল। নাম তাঁর ফাতেমা আক্তার। একমনে লিখে চলেছেন।
জানা গেল, ৪ মার্চ দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ফাতেমার কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক ছেলে। একদিকে প্রথম সন্তান, প্রথম মাতৃত্বের অনুভূতি। অন্যদিকে পরীক্ষা না দিলে পুরো এক বছর পিছিয়ে যাওয়ার চিন্তা। কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না ফাতেমা। শেষমেশ ঝুঁকি নিয়েই সন্তানসহ চলে আসেন পরীক্ষা কেন্দ্রে। সন্তান ছিল ভাবির (ফাতেমার) কোলে। সেদিন বি.কম কোর্সের হিসাববিজ্ঞান প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিল ফাতেমার।
এভাবে এক দিন বয়সী শিশুকে নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ায় পরীক্ষা কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কলেজের অধ্যক্ষ আশ্চর্য হয়ে যান। পড়াশোনার প্রতি ফাতেমার একাগ্রতা দেখে তাঁর প্রশংসা করেন। ফাতেমা দীঘিনালার কবাখালী ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক ও মুসলিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রহমানের স্ত্রী। তিনি দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী। উপজেলায় একটিই কলেজ থাকায় ওই কলেজেই তাঁরা সবাই পরীক্ষা দেন।
ফাতেমার স্বামী আবদুর রহমান বলেন, ‘স্ত্রী ও সন্তানের জীবনের বিষয়টি চিন্তা করে তাঁকে (ফাতেমা) অনেক নিষেধ করেছি যেন বুধবারের পরীক্ষাটা না দেয়। কিন্তু ফাতেমা কথা শুনেনি।’ পরীক্ষা শেষে কথা হয় ফাতেমা আক্তারের সঙ্গে। বলেন, ‘আমার পরবর্তী পরীক্ষা ১০ মার্চ। আজকে (বুধবার) যদি সাহস করে পরীক্ষাটা না দিতাম তাহলে একটা বছর পিছিয়ে যেতাম।’
পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘ফাতেমা আক্তার যে সাহস করে পরীক্ষা দিয়েছেন তাঁকে আমি সমঞ্চান জানাই।’
কলেজের অধ্যক্ষ মন্টু বিকাশ চাকমা বলেন, ‘এক দিন বয়সী শিশুকে নিয়ে ফাতেমা যে পরীক্ষা দিচ্ছেন, তা আমি জানতাম না। ফাতেমার স্বামী আবদুর রহমান বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন।’
Next Post