অবশেষে টানা নয় দিন পর ক্লাসে ফিরে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। নতুন বেতনকাঠামোতে সিলেকশন গ্রেড বহাল ও বেতনকাঠামো নিয়ে সমস্যা নিরসনের দাবিতে টানা নয় দিন কর্মবিরতি পালন শেষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে ক্লাসে ফিরে আসেন তারা। এত দিন শিক্ষার্থীরা না আসায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে নীরব পরিবেশ বিরাজ করছিল।
আজ বুধবার শিক্ষার্থীদের ভিড়ে ক্যাম্পাস অনেকটা সরব হয়ে উঠেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার সকাল ৮টা থেকে ক্যাম্পাসের পুরোনো দৃশ্য চোখে পড়ছে। ক্যাম্পাস শ্যাডো, কলা অনুষদ, মল চত্বর, লাইব্রেরি চত্বর, সবুজ চত্বর, হাকিম চত্বর, বটতলা, আমতলা, অপরাজেয় বাংলা, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, কলা অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, ব্যবসায় অনুষদসহ প্রতিটি অনুষদের সম্মুখভাবে রয়েছে শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি। জমে উঠেছে চিরচেনা সেই আড্ডা। একই সঙ্গে ক্লাস-পরীক্ষা ও অফিশিয়াল কার্যক্রম তো চলছেই। ক্লাস শুরুর বিষয়ে অনুভূতির কথা জানতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে ডিসেম্বরে। জানুয়ারির ৫ তারিখ থেকে ক্লাস শুরু হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। ভয় হয়েছিল সেশনজটে ভুগতে হবে। সেটি হলো না, তাই ভালো লাগছে।
এ ছাড়া বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ক্লাসের আগে-পরে যে জম্পেশ আড্ডা জমে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। আজ থেকে সেটি শুরু হলো।’ দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘পরীক্ষা শেষে ক্লাস শুরু হবে এমন মুহূর্তে আন্দোলন। ভেবেছিলাম, এভাবে চলতে থাকলে সেশনজটে পড়তে হয় কি না। ভাগ্য ভালো, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে শিক্ষকরা আন্দোলন স্থগিত করেছেন। আশা করি বিগত ৪-৫ বছরের মতো টানা সেশনজটমুক্ত থাকবে ক্যাম্পাস।’ বটতলায় আড্ডা দিচ্ছিলেন চার বন্ধু তমাল, রুহান, রিমি ও শম্পা। কথা হয় তাদের সঙ্গে। রিমি বলেন, ‘আমরা অনাবাসিক। গাড়ি ছেড়ে আসতে পারি। এত দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ছেড়ে না যাওয়ায় আসতে পারিনি। আজকে আসতে পারলাম। ক্লাস শুরু হলো। গ্রুপ স্টাডিটা চালিয়ে নেওয়া যাব। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান।
এখানে শিক্ষকদের আলাদা মর্যাদা দেওয়া উচিত। এটি স্বাভাবিক অনুভূতির বিষয়। আশা করি সরকার খুব শিগগিরিই শিক্ষকদের এ দাবি মেনে নেবে।’ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সোমবার বিকেলে চা-চক্রে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের সংকট নিরসনের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য সপ্তম জাতীয় বেতনকাঠামোর অনুরূপ সুযোগ-সুবিধা বহাল রেখে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে অধ্যাপকগণকে গ্রেড-৩ থেকে গ্রেড-১ এ উন্নীত করার প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছি। অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে সিনিয়র সচিবের যে স্থান রাখা হয়েছে, সেই স্থানে গ্রেড-১ প্রাপ্ত অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একটি অংশকে শতকরা হারে উন্নীত করার বিধান রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবির বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন। শিক্ষকদের মর্যাদার অবনমন হবে না মর্মেও তিনি প্রতিশ্রুতি দেন এবং কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের ভিত্তিতে চলমান কর্মবিরতি স্থগিত রেখে বুধবার থেকে ক্লাসে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তবে দাবি-দাওয়ার অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের একটি সভা আহ্বান করেছে। সভায় দাবি-দাওয়ার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’