দেশের সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত কূটনীতিকদের সাথে বৈঠক করেছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। বৈঠকে সদ্য অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে ভোট কারচুপি ও অনিয়মের দালিলিক প্রমাণ কূটনীতিকদের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাদের একটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। সরবরাহ করা হয় ভোট কারচুপির নানা প্রমাণাদি। সেইসাথে বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন যে সম্ভব নয় তা-ও অবহিত করা হয়েছে কূটনীতিকদের।
আজ বুধবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল কূটনীতিকদের ব্রিফিং করেন। বিকাল ৪টা ১০ থেকে ৫টা ২৭ মিনিট স্থায়ী এই বৈঠকে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ডি ওয়াটকিন্স, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জামার্নি, তুরস্ক, কানাডা, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, জাপানসহ ২০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশে ২৩৪টি পৌর সভার নির্বাচন হয়। পৌর নির্বাচনের আগে গত ২৩ ডিসেম্বর গুলশানের কার্যালয়ে কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদল বৈঠক করেছিলো। গতকালের বৈঠকে গত ৩০ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনের ভোট কারচুপি, নির্বাচন কমিশন ও জন প্রশাসনের কর্মকান্ড, ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে না দেয়া, ক্ষমতাসীন দলের তাণ্ডব, নিবার্চনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়। কূটনীতিকদের পৌর নির্বাচনের ওপর তৈরি একটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয়।
এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, সৌদি আরবে বিএনপির বিশেষ প্রতিনিধি এনামুল হক চৌধুরী ও সাংবাদিক শফিক রেহমান উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বৈঠকের বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরে বলেন, কূটনীতিকদের সঙ্গে এই বৈঠক রুটিন মতবিনিময়ের মতো। আমরা বিভিন্ন সময়ে তাদের সঙ্গে এরকম বৈঠক করে থাকি। সম্প্রতি অনুষ্টিত পৌর নির্বাচন সম্পর্কে আমরা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর কাছে অনেক অভিযোগ তুলে ধরেছিলাম। নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়েছে, মানুষের অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে- একথা গুলো আমরা দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে তুলে ধরেছিলাম। এসব বিষয়ে তাদের (কূটনীতিক) আগ্রহ ছিলো আমাদের অবস্থান কি? আমরা নির্বাচনটি কিভাবে দেখলাম? সে বিষয়গুলো আমাদের এই রুটিন মতবিনিময় অনুষ্ঠানে উঠে এসেছে।
বৈঠকে পৌর নির্বাচনে ভোট কারচুপির বিষয়ে কোনো দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা কূটনীতিকদের কিছু দালিলিক প্রমাণ দেখিয়েছে। পৌর নির্বাচন কিভাবে হয়েছে, কিভাবে ভোট কারচুপি হয়েছে, কিভাবে ভোটারদের ভোটদান থেকে বিরত রাখা হয়েছে, কিভাবে প্রার্থীদেরকে বের করে দিয়েছে, কিভাবে ভোটারদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে ইত্যাদি বিষয়ের ওপর একটি ডকুমেন্টারি আমরা তাদের দেখিয়েছি।
আসাদুজ্জামান রিপন আরো বলেন, আমরা কূটনীতিকদের বলেছি, এই সরকার মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাদের অধীনে একটি সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব হবে না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আমরা যখন অংশ নিলাম না, তখন থেকে সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে আমাদের নানাভাবে বলা হতো যে নির্বাচনে না যেয়ে সম্ভবত আমরা ভালো করিনি।
বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি পরে আমরা যতগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছি, সরকার কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠুভাবে করেনি। মানুষের ভোটের অধিকার কখনোই ফিরিয়ে দেয়নি। সুতরাং পৌর নির্বাচনে যে আমরা গেলাম, তাদের অধীনে যে অবাধ ও থসুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না- এটা আবার প্রমাণিত হলো।