অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, প্রতি বছরই দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। শুধু তফসিলী ব্যাংকে কোটি টাকা রয়েছে বর্তমানে এমন ব্যক্তির সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজার। সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান।
সরকার দলীয় সদস্য সোহরাব উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে তফসিলী ব্যাংকে কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা (আমানত+আগাম) গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ১৪ হাজার ২৬৫টি। ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিলো ৭৮ হাজার ১৫০। ২০১২ সালে ৯০ হাজার ৬৫৫, ২০১৩ সালে ৯৮ হাজার ৫৯১, ২০১৪ সালে ১ লাখ ৮ হাজার ৯৭৪ এবং ২০১৫ সালে ১ লাখ ১৪ হাজার ২৬৫টি কোটি টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
স্বতন্ত্র সদস্য হাজী মো. সেলিমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও নোট জালকারী কিছু চক্রের অপতৎপরতায় বাজারে জাল টাকার প্রার্দুভাব রয়েছে। এদের কারণে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। তবে তা ব্যাপক নয়। তিনি আরো জানান, জাল টাকার প্রাদুর্ভাব রোধে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো বিবেচনায় এনে জালনোট প্রতিরোধে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সরকারী দলের সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, চলতি ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রাপ্ত বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ গত অর্থ বছরের তুলনায় বেড়েছে। গত অর্থ বছরে ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ ছিলো ১ হাজার ৫০১ দশমিক ৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি অর্থ বছরে এর পরিমাণ ১ হাজার ৫৯২ দশমিক ৪১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রাপ্ত বৈদেশিক সহায়তার মধ্যে অনুদানের পরিমাণ ২৯৮ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ঋণ সহায়তার পরিমাণ ১ হাজার ২৯৩ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ গত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ বেড়েছে।
আওয়ামী লীগের সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে লাভজনক করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ অডিটেড ব্যালেন্স শিট (৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪) অনুযায়ী রাষ্ট্র মালিকানাধীন ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রুপালী, বেসিক এবং বিডিবিএল) মধ্যে শুধু বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের লোকসান রয়েছে। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভিত্তিক কোন ব্যাংকেরই ব্যালেন্স শিট চূড়ান্ত করা হয়নি।
দিদারুল আলমের প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী জানান, বিদায়ী ২০১৫ সালে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মুনাফার পরিমাণ ২২ হাজার ৮৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে চারটি ব্যাংক লোকসানে রয়েছে। গত এক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক বেসিক ব্যাংক লিমিটেড ২৩৪ কোটি এবং কৃষি ব্যাংক ১৫৮ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। মন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে গত এক বছরে সর্বাধিক মুনাফা অর্জন করেছে ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির ২০১৫ সালে মুনাফার পরিমাণ ১ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। এরপরে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ১ হাজার ৬৫০ কোটি, জনতা ব্যাংক ১ হাজার ১৫২ কোটি, এইচএসবিসি ব্যাংক ১ হাজার ৯০ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক ১ হাজার ১০ কোটি ও সোনালী ব্যাংক ৮৬৩ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে।
স্বতন্ত্র সদস্য ডা. মো. রুস্তম আলী ফরাজীর লিখিত প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (ডিসেম্বর ২০১৫ পর্যন্ত) ২১ হাজার ২৮ কোটি টাকা আয়কর আদায় হয়েছে। বিগত অর্থবছরের প্রথমার্ধে আয়কর আদায় হয়েছিলো ১৯ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। তিনি আরো জানান, এ বছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৮৩ ভাগ। চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রানান্তকর চেষ্টা করা হচ্ছে। বছরে শেষে তা অর্জন সম্ভব হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
Prev Post
Next Post