তীব্র আকার ধারণ করেছে গ্যাস সংকট। রাজধানীসহ চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে এই সংকট সবচেয়ে বেশি। আবাসিকে দিনের বেলায় চুলা জ্বালানোই দায়, শিল্পে গ্যাসের চাপ না থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না।
সংকট মোকাবিলায় চাঁদপুরসহ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে সেই গ্যাস চাহিদা অনুযায়ী অন্য খাতে সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
রামপুরার বাসিন্দা ফারজানা রহমান জানান, দিনের বেলায় এখন আর রান্না করা যায় না। গ্যাসের প্রেসার এত কম থাকে যে পানি গরম হয় না। সকালে উঠেই দেখি এই অবস্থা। বিকেলের দিকে গ্যাসের প্রেসার বাড়তে শুরু করে। রাতে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। ওই সময় সারাদিনের রান্না করতে হচ্ছে। একই অবস্থার কথা জানান বাসাবো থেকে নাজনিন আক্তার। তিনি বলেন, গ্যাস তো আছে কিন্তু টিম টিম করে আগুন জ্বলে। ওই গ্যাস থাকা আর না থাকা একই কথা। দুপুরের পর গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। বাধ্য হয়ে সকালের নাস্তা এখন কিনেই খান তিনি। একই অবস্থা আশকোনার বাসিন্দা হাসি আক্তারের। তিনি বলেন, গ্যাস ঘাটতির কারণে যদি প্রেসারের এ অবস্থা হয় তাহলে রাতের বেলা গ্যাস আসে কোথা থেকে। গ্যাস না থাকলে তো কোনো সময়ই গ্যাস পাওয়া যাবে না।
রাজধানীর কাজীপাড়া, তেজকুনিপাড়া, নাখালপাড়া, তেজগাঁও, কাফরুল, পূর্ব ও পশ্চিম শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, মিরপুরের বিভিন্ন সেকশন, সেনপাড়া পর্বতা, কল্যাণপুর, ধানমণ্ডির রায়েরবাজার, নূরজাহান রোডসহ পুরো মোহাম্মদপুরেও তীব্র গ্যাস সংকট বিরাজ করছে। বিশেষ করে রাস্তার শেষ প্রান্তের বাড়িগুলোতে রাত ১০টার আগে গ্যাস আসে না।
গ্যাস সংকটের কারণে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে অনেক সিএনজি স্টেশন। গ্যাসের চাপ ঠিক না থাকায় তেজগাঁও, শ্যামপুরসহ বিভিন্ন এলাকার শিল্প-কারখানার উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।
মগবাজার মোড়ে অবস্থিত আনুদীপ সিএনজি স্টেশনে গাড়িতে গ্যাস নিতে আসা শামীম জানান, গত দু’দিন গাড়ির জন্য পুরো গ্যাস পাচ্ছেন না তিনি। এমনিতেই গ্যাসের জন্য লম্বা লাইন। তারপরও যখন গ্যাস ভরা শুরু হয় তখন বলা হয় চাপ কম, তাই পুরো গ্যাস দেয়া যাবে না। এ অবস্থা চলছে গত সপ্তাহ থেকেই। এ অবস্থা শুধু মগবাজারে না, মিরপুর দারুস সালামের পূর্বাচল ও যমুনা ফিলিং স্টেশন, এস এস ফিলিং স্টেশন, কল্যাণপুরের এসএ খালেক ফিলিং স্টেশন, কাজীপাড়ায় সিডিসিসহ অনেক স্টেশনে চাপ কম থাকায় গাড়ির লম্বা লাইন দেখা যায়।
শুধু ঢাকায় নয়, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে গ্যাসের দাবিতে মিছিল সমাবেশও করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের গ্যাসের চাহিদা সাড়ে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ১৮০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়, চাঁদপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ সাময়িক বন্ধ রাখা হলে গ্যাস সংকটের কিছুটা হলেও সমাধান সম্ভব। অন্যথায় তারাও অসহায়।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, গ্যাস সরবরাহ কিছুটা কম। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ কম বলে সংকট তৈরি হয়েছে। দিন দিন গ্যাস কমে যাচ্ছেÑ এটাই বাস্তবতা। তবে আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশের ৭০ ভাগ চুলা এলপি গ্যাসে চলবে। সে পরিকল্পনা করা হয়েছে। তখন আর সমস্যা থাকবে না।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশাদ ইসলাম জানান, গ্যাসের সরবরাহ কিছুটা কম আছে। কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখে সেই গ্যাস দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে চাঁদপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। আশা করছি এতে দ্রুত সময়ে রাজধানীর গ্যাসের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে। তিনি বলেন, বাখরাবাদ পাইপলাইনের যে সমস্যা ছিল তা সমাধান হয়েছে। মেরামতের কাজ প্রায় শেষ। এর ফলেও যে সমস্যা হয়েছিল তা আর থাকবে না। বাখরাবাদ পাইপলাইনে কিছু ময়লা জমেছে। তা পরিষ্কার করা হয়েছে।
তিতাস জানায়, সোমবার সরবরাহ করা হয়েছে ২৬৬ কোটি ঘনফুট, যা চাহিদার তুলনায় প্রায় আট কোটি ঘনফুট গ্যাস কম। এদিন বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রায় ৯৩ কোটি এবং সার উৎপাদনে ২৩ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। এর আগের দিন রোববার ২৭৪ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছিল। ওইদিন বিদ্যুতে ১০০ কোটি এবং সার কারখানায় ২৩ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেয়া হয়
Prev Post