বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাগাম টানছে সরকার। এজন্য বিদ্যমান ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০’ সংশোধনী আনা হচ্ছে। লাগামহীন টিউশন ফি ঠেকাতে বেতন কাঠামো নির্ধারণ, আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে নানা বিধিবিধান সংযুক্ত করা হবে। এছাড়া সংশোধনীতে ট্রাস্টি বোর্ডে সরকারের মনোনীত সদস্য নিয়োগ, আর্থিক বিষয় তদারকি, জনবল নিয়োগসহ বেশ কিছু বিষয়ে নজরদারিতে আনা হবে।
বর্তমানে দেশে ৯১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে একক কোনো কাঠামো নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের ব্যয়কে ভিত্তি করে টিউশন ফি নির্ধারণ করে থাকে। এজন্য একই বিষয়ে স্নাতক অর্জন করতে টিউশন ফি একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক রকম। অভিযোগ আছে, মুনাফার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইচ্ছামতো টিউশন ফিসহ বিভিন্ন ফি ধার্য করে থাকে। প্রতি সেমিস্টারে ফি বাড়ানো হয়। এ নিয়ে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়-ব্যয় নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
এদিকে টিউশন ফি নির্ধারণ ও ট্রাস্টি বোর্ডে সরকারের প্রতিনিধি নিয়োগের বিষয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। উদ্যোক্তাদের সংগঠন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি জানিয়েছে, বিদ্যমান আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে সরকারের প্রতিনিধি আছেন। ট্রাস্টি বোর্ডে সরকারের প্রতিনিধি দেয়া হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র পরিচিতি আর থাকবে না। টিউশন ফি নির্ধারণের বিষয়েও তাদের আপত্তি রয়েছে।
জানা গেছে, আইনের সংশোধনীতে টিউশন ও সেমিস্টার ফি নির্ধারণ করা হবে। আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে নানা বিধি-বিধান সংযুক্ত হবে। ট্রাস্টি বোর্ডে সরকারের মনোনীত সদস্য নিয়োগের বিধান রাখা হবে। সেখানে সরকারের ৩ জন মনোনীত সদস্য রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল, অর্থ কমিটি ও শৃঙ্খলা কমিটি গঠন, শিক্ষক নিয়োগ, চাকরিবিধি ও বেতন কাঠামোসহ সবকিছু তদারকিতে সরকারের নিয়োজিত সদস্য রাখার বিধানের উল্লেখ করা হবে। এসব বিষয় যুক্ত করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ সংশোধনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একটি উপকমিটি এবং ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানের নেতৃত্বে আরেকটি কমিটি কাজ শুরু করেছে।
১৯৯২ সালে এবং পরে ১৯৯৮ সালে সংশোধিত আইনের ভিত্তিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হতো। পরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ প্রণয়ন করে সরকার। আইনটি তৈরির সময় মন্ত্রণালয় টিউশন ফি নির্ধারণে সরকারের অনুমোদন নেয়ার বিষয়টি যুক্ত করে এবং মন্ত্রিসভা বিষয়টি অনুমোদন দেয়। কিন্তু উদ্যোক্তাদের দাবির মুখে সংসদীয় কমিটি এ বিষয়টি মূল আইন থেকে বাদ দেয়। বর্তমান আইনে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাসহ নতুন ধারা সংযোজন করা হয়।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফি নির্ধারণ, টিউশন ফি বছর বছর বাড়ানো এবং প্রতি সেমিস্টারে কত টাকা নেয়া যাবে এ ধরনের কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। এ সম্পর্কে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি জানে না। বিদ্যমান আইনেও এর কোনো নির্দেশনা নেই। তাই এ ব্যাপারে আইনে সংশোধন জরুরি বলে মনে করে সংসদীয় কমিটি। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো লাগামহীনভাবে চলতে পারে না। একটা নীতিমালা থাকা দরকার। কোনো প্রয়োজন ছাড়াই বছর না পার হতেই টিউশন ফি বাড়িয়ে দেবে। আর এ বোঝা বইতে হবে অসহায় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের।
Prev Post