বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানকে হত্যাচেষ্টায় ঘটনায় দায়ের করা আলোচিত ও স্পর্শকাতর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের অনুমতি সাপেক্ষে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে শিগগিরই মামলাটি পুনরায় চালুর আবেদন করা হবে। আদালত পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) মিরাশ উদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছেন। যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারলে মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে আইনি কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। অন্যদিকে চাঞ্চল্যকর এ মামলার চার্জশিটভুক্ত পলাতক তিন আসামিকে বহু বছরেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
দীর্ঘ ১৭ বছর আগে ১৯৯৯ সালের ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর শ্যামলীর বাসায় ধর্মান্ধ ও মৌলবাদীগোষ্ঠীর সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন কবি শামসুর রাহমান। এতে গুরুতর জখম হলেও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। এ ঘটনায় কবির পরিবারের পক্ষ থেকে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করা হয়। পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় সাক্ষীর অভাবে ২০০৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সাত আসামিকে অব্যাহতি দেয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় এই মামলার কার্যক্রম। এর দুই বছর পর ১৭ আগস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শামসুর রাহমান। ঢাকার আদালত পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) মিরাশ উদ্দিন বলেন, ধর্মীয় মৌলবাদী জঙ্গি ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত নাশকতা সৃষ্টিকারীদের তালিকা করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। প্রসিকিউশন বিভাগ থেকে আমরা সাহায্য করছি। এ সময় আলোচিত ও স্পর্শকাতর কবি শামসুর রাহমান হত্যাচেষ্টা মামলাটি আদালত পুলিশের নজরে আসে।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমি নিজ উদ্যোগে মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানা কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাই মামলাটির পরিণতি সম্পর্কে। পরে মামলার নম্বর জানা যায়। তাছাড়া আমরা ২০০৪ সালের আদালতে মামলার নিবন্ধন খাতা (রেজিস্টার) খুঁজে পেয়েছি। এ মামলা সম্পর্কে তথ্য উদঘাটন করতে প্রায় তিন মাস সময় লেগে যায়। এখন মামলার বাদীকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। এসি মিরাশ আরো জানান, আমরা এখন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য অনুমতি চাইব। অনুমতি পেলেই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলা পুনরায় চালুর আবেদন করা হবে।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, স্বনামধন্য কবি শামসুর রাহমান হত্যাচেষ্টা মামলাটি তদন্ত করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তৎকালীন এএসপি আবদুল কাহহার আকন্দ। ১৯৯৯ সালের ৮ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন এই অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তা। আসামিদের উগ্রপন্থি ধর্মীয় মৌলবাদী বলে আখ্যায়িত করা হয় চার্জশিটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আসামিদের মধ্যে চারজনকে গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ। এরা হলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মৃত মহিউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে মো. মাহতাব উদ্দিন, হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার ডা. এ কে আ. আজিজের ছেলে ফজলে এলাহী আহসান ওরফে হাছান, খুলনার রূপসা উপজেলার শেখ আকরাম হোসেনের ছেলে মো. মোজাম্মেল হোসেন ও বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার মো. তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে মো. তারেক আজিজ। এছাড়া এ মামলার পলাতক তিন আসামি হলেন ঢাকার রামপুরা এলাকার শেখ আকরাম হোসেনের ছেলে মো. শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, জসীম উদ্দিনের ছেলে নাজিম ওরফে নাসির উদ্দিন ও নোয়াখালীর পরশুরাম উপজেলার শফিকুর রহমান।
Prev Post