পবায় দুই শিশু নির্যাতন মামলায় তথ্য গোপন করে দুই আসামির জামিন

0

pabnaরাজশাহীর পবায় মোবাইল চুরির অভিযোগে শিশু নির্যাতন মামলার দুই আসামি আদালতে তথ্য গোপন করে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। সোমবার রাজশাহীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আদালত-১ এ আটক আসামি আজিজুল ইসলাম জামিনের আবেদন করেন। এসময় মামলার আরেক আসামি উজ্জল আত্মসমর্পন করে জামিন পান একই আদালত থেকে। এঘটনা মঙ্গলবার জানাজানি হলে আদালতপাড়ায় ব্যাপক তোলপাড় চলে। এদিকে বাকি ১১ আসামির কাউকেই এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে এ ঘটনায় অভিযুক্ত সেনা ও র‌্যাব সদস্যের বিষয়ে তাদের নিজ নিজ কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, পবা উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামে শিশু জাহিদ হাসান ও ইমনকে দড়ি দিয়ে বেঁধে পেটানোর ঘটনায় এরই মধ্যে জামিনে বেরিয়ে গেছে আসামি আজিজুল ইসলাম ও উজ্জ্বল। সোমবার আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। বাকি ১১ আসামির মধ্যে ৭ জনের জামিনের জন্য সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করা হয় মঙ্গলবার সকালে। কিন্তু জামিন শুনানির আগেই আদালতের নজরে আসে, আইন অনুযায়ী মামলাটি শিশু আদালতের যাবার কথা। পরে মামলাটি শিশু আদালতে স্থানান্তরও করা হয়।
বাদী পক্ষের আইনজীবী এনামুল হক অভিযোগ করেন, মামলাটি নিয়ে শুরু থেকেই পুলিশ গড়িমসি করছিল। থানা থেকে সোমবার মামলাটি কাগজপত্র আদালতে আসে। কিন্তু সেটি বিধান অনুযায়ী শিশু আদালতে দাখিলের কথা থাকলেও পবার জিআরও সাইফুল ইসলাম সোমবার পুলিশ ফাইলে সংযুক্ত করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ আদালতে পাঠান। এসময় আসামি আজিজুল ও উজ্জল জামিনের আবেদন জানালে বিচারক একরামুল করিম তা মঞ্জুর করেন। কিন্তু মঙ্গলবার একই আদালতে এই মামলার ৭ জন আসামি আত্মসমপর্নের আবেদন করেন। বিচারক একরামুল করিম মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখেন মামলায় শিশু জাহিদের বয়স ১৩ বছর দেয়া রয়েছে। তাই মামলাটি শিশু আদালতে স্থানান্তর করেন তিনি।
এ বিষয়ে শিশু আদালতের কোর্ট জিআরও রেবেকা সুলতানা বলেন, মঙ্গলবার বিষয়টি ধরা পড়েছে। এরপর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট একরামুল কবির মামলাটি শিশু আদালতে স্থানান্তর করেছেন। তবে এটি পবার কোর্ট জিআরও’র ভুলে এমনটি হয়ে থাকতে পারে। এসময় পবার কোর্ট জিআরও সাইফুল ইসলামের দফতরে হাজির হলে তিনি সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সটকে পড়েন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী এনামুল হক আরো অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার সকালে আদালত পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় জামিন আবেদনও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। জামিন আবেদন করা ওই সাত আসামি আদালত চত্বরে হাজিরও ছিল। এসময় মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পবা থানার এসআই আবু তাহেরও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আসামিরা নির্বিঘ্নেই আদালত চত্বর ত্যাগ করেছে।
মামলার কদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক আবু তাহের জানান, আসামিদের আদালতে আত্মসমপর্নের খবর পেয়ে তিনিও আদালতে এসেছেন। কিন্তু আসামিদের তিনি খুঁজে পাননি।
এদিকে, এঘটনার জন্য পবার কোর্ট জিআরওকে (জেনারেল রেজিস্ট্রার অফিসার) দায়ী করছেন আইনজীবীরাও। রাজশাহী জজকোর্টের এপিপি আইনজীবি রাশেদ উন নবী আহসান বলেন, যেহেতু মামলার ভিমটিমদের (নির্যাতিত শিশু জাহিদ ও ইমন) বয়স ১৮ বছরের কম। তাই আইন অনুযায়ী  থানা থেকে মামলাটি কোর্ট জিআরও’র মাধ্যমে শিশু আদালতে যাবার কথা ছিল। কিন্তু কেনো তা  সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিল করা হলো তা রহস্যজনক। এটি আইনের ব্যত্যয়।
আরেক আইনজীবী এপিপি গোলাম মর্তুজা বলেন, জামিনযোগ্য ধারায় মামলা হলে আসামি জামিন পেতেই পারেন। কিন্তু মামলাটি শিশু আদালতে কেন যায় নি তা প্রশ্নবিদ্ধ।
মঙ্গলবার ৭ আসামির জামিন আবেদনের কথা অস্বীকার করে তাদের আইনজীবী শাহীন শাহ্ বলেন, সোমবার শুনানি শেষে আজিজুল ও উজ্জ্বলকে জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। এজাহারে যেসব ধারা উল্লেখ করা হয়েছে তার সবগুলোই জামিনযোগ্য অপরাধ। তাছাড়া আসামি উজ্জ্বল এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। ফলে সার্বিক দিকে বিবেচনা করে আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আইনজীবী ইব্রাহীম হোসেন জানান, পুলিশ যে ধারায় মামলাটি রেকর্ড করেছে তা জামিনযোগ্য। শিশু নির্যাতনের ধারায় মামলাটি হয়নি। এ কারণে আদালত জামিন দিয়েছেন। এছাড়া অন্য ৭ আসামি জামিনের আবেদন করলেও তারা হাজির না হওয়ায় শুনানি হয়নি।
অভিযুক্ত সেনা সদস্য নাসির ও র‌্যাব সদস্য সাগরের বিষয়ে তাদের কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। রাজশাহী পুলিশ সুপার নিশারুল আরিফ বলেন, পলাতক আসামিরা আদালত চত্বরে হাজির হওয়ায় খবর আমার জানা নেই। তবে তাদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। এছাড়া, মামলার অন্যতম আসামি বগুড়ার জাহাঙ্গীরাবাদ কান্টনমেন্টে কর্মরত সার্জেন্ট নাসিরের বিষয়ে সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। একইভাবে এ ঘটনায় জড়িত পুলিশের কনস্টেবল (বর্তমানে র‌্যাবে কর্মরত) সাগরের সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের কাছে পাঠানো চিঠির সঙ্গে শিশু নির্যাতনের ফুটেজও সংযুক্ত করা হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ববস্থা নিবেন।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার আবারো এলাকাবাসী দুই শিশু নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে দুয়ারী এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার বিকেলে মোবাইল ফোন চুরির সন্দেহে শিশু জাহিদ ও ইমনকে ঘরের ভেতরে দড়িতে বেঁধে বেদম পিটুনী দেয় একই এলাকার ফজলু মিয়ার ছেলে রাকিব, সেনাসদস্য নাসির ও র‌্যাব সদস্য সাগর ও তার সহযোগিরা। পরদিন শনিবার ১৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন জাহিদের বাবা ভ্যানচালক ইমরান আলী। এরপর আজিজুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
শিশু জাহিদ ও ইমন পবা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More