উত্তর ইউরোপের নরডিক দেশগুলোর একটি দেশ হলো ফিনল্যান্ড। ইউরোপ মহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন কারণেই এদেশটি বিখ্যাত। তবে সাধারণ বাংলাদেশীদের অনেকের কাছেই নকিয়ার জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত এদেশ। ফিনিস ভাষায় ফিনল্যান্ডকে বলা হয় ‘সুওমি’(Suomi)। ‘সুওমি’ শব্দের অর্থ ‘হ্রদ ও দ্বীপভূমির দেশ’। ফিনল্যান্ড হচ্ছে ‘হ্রদ’ আর ‘দ্বীপ’-এর দেশ- হ্রদের সংখ্যা ৬০,০০০ আর দ্বীপের সংখ্যা ৬,৫০০। সবচেয়ে বড় হ্রদের নাম ‘সায়মা’। সায়মার আয়তন ৪,৪০০ বর্গকিলোমিটার। বেশিরভাগ হ্রদের আয়তন ২৫ বর্গকিলোমিটারের বেশি নয়। বেশিরভাগ এলাকা সমতল হলেও বেশ কিছু পাহাড়ও রয়েছে এদেশে।
আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ফিনল্যান্ড ৬৫তম আর ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ৮ম। মোট আয়তন ৩ লক্ষ ৩৮ হাজার ১শ ৪৫ বর্গকিলোমিটার। ২০০৮ সালের হিসেব অনুযায়ী জনসংখ্যা ৫৩ লক্ষ ২ হাজার ৭শ ৭৮ জন। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে দেশটি ১১১ নম্বরে রয়েছে। ২০১০ সালের হিসেব অনুযায়ী ফিনল্যান্ডে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব মাত্র ১৬, যেখানে বাংলাদেশে প্রায় ১১৪৩ জন মানুষ বসবাস করে। ফিনল্যান্ডের পশ্চিমে সুইডেন, পূর্বে ও দক্ষিণে রাশিয়া, উত্তরে নরওয়ে এবং দক্ষিণের অংশ বিশেষ ফিনল্যান্ড উপসাগরের দ্বারা পরিবেষ্টিত। মাথাপিছু আয় ৩৪,৮১৯ মার্কিন ডলার হলেও এদেশের জাতীয় আয় জনসংখ্যার চাইতেও দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে।
ঐতিহাসিকভাবে এদেশের লোকেরা সপ্তম শতাব্দীতে রাশিয়ার ভোলগা নদীর অববাহিকা থেকে এই অঞ্চলে এসেছিল। একসময় ফিনল্যান্ড ছিল সুইডেনের অংশ। সেকারণে এদেশে এখনও সুইডিশ ভাষা ও সংস্কৃতির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৭ শতাংশ এখনও সুইডিশ বংশোদ্ভুত ও সুইডিশ ভাষায় কথা বলে। ১৮০৯ সাল থেকে ১৯১৭ সালের শেষভাগ পর্যন্ত ফিনল্যান্ড রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর ফিনল্যান্ড নিজেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। তাই দেশটির স্থাপত্যে রাশিয়ান প্রকৌশলের ছাপ সুস্পষ্ট।
পৃথিবীর যে কয়টি দেশের ভূ-ভাগ নিয়মিতভাবে বেড়ে চলেছে তার মধ্যে ফিনল্যান্ড একটি দেশ যার ভূমি প্রতি বছর প্রায় ৭ বর্গকিলোমিটারের মতো বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, বরফযুগের পরের সময় থেকে প্রতিনিয়ত ফিনল্যান্ডের উপরিভাগের বরফের স্তর হালকা হয়ে আসছে যার ফলে জেগে উঠছে ভূভাগ। এদেশের মোট জমির মাত্র ৭ শতাংশ চাষাবাদ হয়ে থাকে। দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল হচ্ছে বার্লি, যব এবং গম হলেও সারাদেশে আলু ও সুগার বিট জন্মে। আর রয়েছে হাঁসমুরগি, গরুবাছুর, ভেড়া ও শূকরের খামার। তাছাড়া দেশে প্রায় ৪ লক্ষ ১৪ হাজার পোষা বলগা হরিণ রয়েছে। দেশের উত্তর অঞ্চলে যেখানে জনবসতি কম, সেখানে ভালুক, নেকড়ে, বনবিড়াল এবং মেরুশিয়াল দেখতে পাওয়া যায়।
বনজ সম্পদ ফিনল্যান্ডের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে যেখানে একটি দেশের ২৫ ভাগ এলাকায় বনভূমি থাকা দরকার, সেখানে ফিনল্যান্ডের রয়েছে ৭২ ভাগই হচ্ছে বনভূমি। এদেশের বনাঞ্চলে ১২শ প্রজাতির গাছপালা এবং লতাগুল্ম আছে। তাই এদেশের প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ কাঠ। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে এদেশের বন এবং কাঠ চেরাই কারখানা সবচাইতে বিখ্যাত। কাঠের গুড়ি চালি বেঁধে নদীপথে ভাসিয়ে উপকূলীয় এলাকার করাত কলগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়। কলকারখানায় নানাবিধ কাঠের পণ্য তৈরি করে বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হয়। এসব রপ্তানী সামগ্রীর মধ্যে আছে কাগজ, মন্ড, নিউজপ্রিন্ট, বোর্ড, প্লাইউড ইত্যাদি। এ থেকে দেশের মোট রপ্তানী আয়ের ৪০ শতাংশ আসে যা দিয়ে প্রয়োজনীয় নানা পণ্য আমদানী করা হয়ে থাকে। আমদানী পণ্যের মধ্যে আছে পেট্রোলিয়াম, রাসায়নিক দ্রব্য, যন্ত্রপাতি, গাড়ির যন্ত্রাংশ, লোহা, ইস্পাত, খাদ্য এবং বস্ত্রসামগ্রী।
ফিনল্যান্ড একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র। তাই বেকার, অসুস্থ, অক্ষম এবং বৃদ্ধদেরকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেই সার্বিক সহযোগিতা করা হয়। যুদ্ধাহতদের জন্য রাষ্ট্র ক্ষতিপূরণ প্রদান করে। রাষ্ট্রের নাগরিকদের কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি পৌর এলাকায় রয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র যার ব্যয় রাষ্ট্রই বহন করে থাকে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে বিদেশীদেরকে তাদের ঔষধপত্র ও চিকিৎসার খরচ বহন করতে হয়। এদেশে প্রতি ১ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে ৬৯৩টি টেলিভিশন এবং ১৬২৬টি রেডিও। সারাদেশে ৫৫টি দৈনিক পত্রিকা ও নিয়মিতভাবে অসংখ্য সাময়িকী প্রকাশিত হয়। এদেশের মানুষ বই পড়তে খুব ভালবাসে। তাই সারাদেশে দেড় হাজারেরও বেশি লাইব্রেরি রয়েছে। ১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হেলসিংকি লাইব্রেরীতে প্রায় ২১ লক্ষ বই রয়েছে। হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরী হচ্ছে জাতীয় লাইব্রেরী। এখানে বইয়ের সংখ্যা ২৬ লক্ষ। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি রয়েছে ফিনিসদের বেশ আগ্রহ। তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দেশের নানা স্থানে।
যদিও ফিনল্যান্ডের আয়তন যুক্তরাজ্যের সমান, আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে এখানে বসবাস করে মাত্র অর্ধ কোটি মানুষ। রাষ্ট্রীয়ভাবে ফিনিস ও সুইডিস ভাষা এদেশের রাষ্ট্র ভাষা। কিন্তু এখানে রাশিয়ান ও আরবী বহাল তবিয়তে স্থান করে নিয়েছে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসায়িক ও একাডেমিক যোগাযোগের কারণে জাপানী ভাষাভাষী লোকের সরব উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। তাই বেশির ভাগ ফিনিস নাগরিকই কমপক্ষে ৩টি ভাষায় কথা বলতে সক্ষম। কারণ ইংরেজীও এখানে আন্তজার্তিক ভাষা হিসেবে নিজের স্থান করে নিয়েছে। এদেশ জার্মানী কিংবা ইতালীর মতো নয়, এখানে সর্বত্রই ইংরেজীর প্রচলন আছে। তাই ফিনিস কিংবা সুইডিস না জেনেও আপনি দিব্বি আপনার দৈনন্দিন কাজকর্ম সেরে নিতে পারবেন ।
এখানকার বাংলাদেশী কমিউনিটি দেশটির জনসংখ্যা অনুযায়ী বেশ বড়ই বলতে হবে। তারা বিভিন্নজন বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আর কেউ কেউ ব্যবসায়িক সাফল্যের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত এদেশে। তবে মূলত অধিকাংশ বাংলাদেশীই এদেশে এসেছে পড়াশুনা করতে। তারপর আস্তে আস্তে নিজেদের স্থান করে নিয়েছে বিভিন্ন পেশায়। আর কেউ কেউ আস্তে আস্তে নিজের ব্যবসা বানিজ্য গড়ে তুলছে। অনেকেই তাদের পড়াশুনা শেষ করেনি, বিশেষ করে যারা স্নাতক স্তরে পড়াশুনা করতে এসেছিল। তাই ফিনিশ সরকার বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য স্নাতক কোর্সগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ ঢাকায় চালু করেছিল তা আপাতত স্থগিত করেছে। এখন শুধু স্নাতকোত্তর শ্রেণীতেই সরাসরি ভর্তি হওয়ার সুযোগ আছে। সে যাই হোক, তারা সবাই অভিবাসী বাংলাদেশী হিসেব ফিনল্যান্ডে তাদের আবাস গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছে।
শিক্ষাব্যবস্থা
আমি ব্যক্তিগত আগ্রহের কারণেই ফিনল্যান্ডের শিক্ষাকে এলেখার মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে নিয়েছি। ২০০০ সালে প্রথম আমি ফিনল্যান্ডের বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠি যখন জানতে পারলাম যে এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার জন্য টিউশন ফি দিতে হয় না। সে যাই হোক, তখন বিনা ফিতে পড়তে যাওয়ার জন্য হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক নীতিমালা বিভাগে আবেদন করেছিলাম। সামাজিক নীতিমালা বিভাগ আমাকে শর্তযুক্ত অনুমোদনপত্র পাঠিয়ে ছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমার আর ফিনল্যান্ড যাওয়া হয়নি। আমি চলে এলাম ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে। সে কথা বলার অবকাশ এখানে নেই। সে যাই হোক, তৃতীয়বারের মতো আমার হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে ২০১৩ সালের আগষ্ট মাসে। বিভিন্ন সময়ে এদেশ ভ্রমণের অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে ও আমার অধীত জ্ঞানের সমন্বয়ে আমি এই লেখা তৈরী করার চেষ্টা করছি। এবার ফিনন্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থা ও সেখানে পড়াশুনার নানা সুযোগসুবিধার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
শিক্ষা একটি জন্মগত অধিকার ও রাষ্ট্রকর্তৃক প্রদত্ত সেবা হিসেবে বিবেচিত হয় ফিনল্যান্ডে। ফিনল্যান্ড ৭ থেকে ১৬ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরা বিনামূল্যে শিক্ষা লাভ করে। প্রাথমিক স্কুলে ৬ বছর এবং মাধ্যমিক স্কুলে ৩ বছর লেখাপড়া করা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। গবেষণায় ফিনল্যান্ডের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিশ্বের শিক্ষাছকের শীর্ষে অবস্থান করছে। গবেষণার ফলাফল ভাষা, গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়াবলীর ভিত্তিতে হয়েছে। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত কোন অভিজ্ঞতা এখনও হয়নি সেখানকার স্থানীয় প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনের। তবে বিভিন্ন ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে কিছুটা দেখার সুযোগ হয়েছিল।
উচ্চশিক্ষার জন্য ফিনল্যান্ডে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়, অসংখ্য কলেজ এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ স্কুল রয়েছে। ইউরোপের যে দেশেগুলোতে টিউশন ফি ছাড়া উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা যায় তাদের একটি ফিনল্যান্ড। তাই এদেশে প্রতি বছর এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। তবে তাদের বেশিরভাগই স্নাতক পর্যায়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামে ভর্তি হয়। এদেশে বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার বিশেষ সুযোগ রয়েছে। এখানে অভিবাসীদের ছেলেমেয়েদের জন্য তাদের নিজেদের ভাষা শিক্ষার সুযোগও রয়েছে, যেটা যুক্তরাজ্যের মতো বহু বর্ণ ও সংস্কৃতির দেশেও অনুপস্থিতি।
ফিনল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশেষ করে স্নাতক স্তরে ভর্তির জন্য কেন্দ্রীয় একটি প্রতিষ্ঠান আছে (https://www.admissions.fi/) যার মাধ্যমেই শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন ফলিত বিজ্ঞানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য আবেদন করতে হয়। এ ওয়েবসাইটে এদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা তথ্য পাওয়া যাবে। তাছাড়া সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য আরেকটি ওয়েব পোর্টাল আছে (http://universityadmissions.fi/) যার মাধ্যমে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনটিতে ভর্তির জন্য আবেদন করা যায়। কিন্তু স্নাতকোত্তর বিষয়াবলীর জন্য এককভাবে সম্পৃক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার জন্য আবেদন করার সুযোগ আছে। কোন রকম সমস্যা দেখা দিলে এওয়েবসাইট দু’টো থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সংগ্রহ করে গুগল সার্চ ইন্জিনের মাধ্যমে (www.google.com) অনুসন্ধান করলে সহজে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবপেইজ কিংবা অন্য কোন সাইটে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া এ নিবন্ধের শেষের দিকে এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম ও তাদের ওয়েব এড্রেসগুলো দেয়া আছে। তা থেকে সরাসরি যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়বেসাইটে যেতে পারেন।
শিক্ষার মাধ্যম
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রভাষা দুটো- ফিনিশ আর সুইডিশ। তবে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিনিশ ভাষায় পড়াশোনা করতে হয়। সে জন্য বিশেষ করে স্নাতক স্তরের পড়াশুনার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের ফিনিশ বা সুইডিশ ভাষার ওপর ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। তবে একজন বিদেশীকে অবশ্যই প্রাথমিক ভাষা দক্ষতা হিসেবে ইংরেজি জানতে হবে, নচেত সমস্যায় পড়তে হবে।
উচ্চশিক্ষার কাঠামো ও স্তর বিন্যাস
উচ্চশিক্ষার জন্য ফিনল্যান্ডে ২৭ টি ফলিত বিজ্ঞানের (Applied Sciences) এবং ১৬টি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ফলিত বিজ্ঞানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত পলিটেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। এদেশে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয় সবচাইতে বড়। ১৬৪০ সালে স্থাপিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৮২৮ সালে দেশের রাজধানী হেলসিংকিতে স্থানান্তরিত হয়। ২৭ টি ফলিত বিজ্ঞানের বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৪ টিতে একাডেমিক লেখাপড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তন্মধ্যে ৫টি ফলিত বিজ্ঞানের বিশ্ববিদ্যালয় রাজধানী হেলসিংকি এলাকায় অবস্থিত। সেগুলো হল আরকাডা (Arcada), হাগা-হেলিয়া (Haaga-Helia), হেলসিংকি মেট্রোপোলিয়া (Helsinki Metropolia), ডায়াকনিয়া (Diaconia) এবং লাউরিয়া (Laurea)।
ফিনল্যান্ডের উচ্চশিক্ষার কাঠামো দু’ভাগে বিভক্ত। স্নাতক স্তর (Undergraduate Level) ও স্নাতকোত্তর স্তর (Postgraduate Level)। স্নাতকোত্তর আবার দু’স্তরে বিন্যাস্ত- মাস্টার্স ও ডক্টোরাল। উচ্চশিক্ষার এদু’স্তরে যেসব ডিগ্রি অর্জন করা যেতে পারে, সেগুলো হলো- ক) ব্যাচেলর ডিগ্রি, খ) মাস্টার ডিগ্রি এবং গ) ডক্টরেট বা পিএইচডি ডিগ্রি।
মাস্টার্স করতে দেড় থেকে দুই বছর লাগে আর ১২০ ক্রেডিট সম্পপন্ন করা লাগে। কিন্তু যে কেউ চাইলে বেশি সময় ও নিতে পারে। তবে চার বছরের মধ্যেই মাস্টার্স কোর্স শেষ করতে হবে। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দুই বছরের মধ্যে মাস্টার্স কোর্স শেষ করার জন্য উতসাহ দিয়ে থাকে। আর ডক্টোরাল কোর্সের ক্ষেত্রে সাধারণ সময় লাগে তিন থেকে ছয় বছর।
ফিনল্যান্ডে ডক্টোরেট করতে হলেও ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা অবশ্যই থাকতে হবে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই ডক্টোরাল কোর্সে ভর্তি হতে হলে অবশ্যই আইইএলটিএস (IELTS) স্কোর অথবা আর সমমানের ইংরেজী ভাষা কোর্সের সার্টিফিকেট থাকতে হবে। স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তির জন্য সাধারণ সর্বনিম্ন আইইএলটিএস স্কোর ৬.৫ দরকার। এদেশে ডক্টোরাল কোর্সে ভর্তির জন্য সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে পছন্দের বিষয়ের শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। তারাও ভর্তি সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন।
এদেশেও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের মতোই দুই সেমিস্টারে পড়াশুনা পরিচালিত হয়। প্রথম সেমিস্টার হলো শরৎকালীন (Autum) সেমিস্টার- আগস্ট থেকে ডিসেম্বর। আর দ্বিতীয় সেমিস্টার হলো বসন্তকালীন (Spring) সেমিস্টার- জানুয়ারি থেকে জুলাই। একটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার যে, ফিনল্যান্ডে ব্যাচেলর বা মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার জন্য বয়স কোন বাধা নয়। যে কোন বয়সেই ভর্তির জন্য আবেদন করা যায়।
যেসব বিষয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ রয়েছে
সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক পর্যায়ের দু’একটি প্রোগ্রাম ইংরেজী মাধ্যমে হলেও বেশীর ভাগ কোর্সই ফিনিস কিংবা সুইডিশ ভাষায় হওয়ায় এবং ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয় বলে বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ কিছুটা সীমিত। তবে কেউ যদি ফিনিস কিংবা সুইডিস ভাষায় পারদর্শী হয় তবে তার জন্য স্নাতক পর্যায়ে রয়েছে শিক্ষার অবারিত সুযোগ। অন্যদিকে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, বিশেষ করে ফলিত বিজ্ঞানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিনিস ভাষার পাশাপাশি ইংরেজী ভাষায়ও বেশ কয়েকটি ব্যাচেলর প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। তবে কোন কোন ফলিত বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী মাধ্যমের কোর্সগুলোতে বিদেশীদেরকে টিউশন ফি দিতে হয়। তাই আবেদন করার সময় ভালোভাবে জেনে বুঝে আবেদন করা উচিত।
স্নাতক স্তর
এদেশের অধিকাংশ স্নাতক কোর্সই কর্মদক্ষতা তথা পলিটেকনিক ভিত্তিক। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, এখানে স্নাতক স্তরে ভর্তি হওয়ার জন্য ভর্তি পরিক্ষা দিতে হয়। ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। আবেদনপত্র পূরণের সময় পছন্দের ক্রমানুসারে ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নির্বাচন করা যায়। স্নাতক কোর্সে ভর্তির জন্য টোফেল (TOEFL)-এ ৫৫০ স্কোর কিংবা আইইএলটিএস (IELTS)-এ কমপক্ষে ৬.০ স্কোরসহ এইচএসসি বা এর সমমান শিক্ষাগত যোগ্যতার যেকোন ব্যক্তি আবেদন করতে পারবে।
আবেদনের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়
আবেদন করার সময় একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ চারটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চারটি বিষয় পছন্দ করতে পারবে। তবে যেহেতু দুটোর বেশি বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়, সেই জন্য এক ও দুই নম্বর পছন্দের তালিকায় একটি বিষয় ও দুটি ভিন্ন ভিন্ন ইউনিভার্সিটি এবং তিন ও চার নম্বর পছন্দের তালিকায় আরেকটি বিষয় ও দুটি ভিন্ন ভিন্ন ইউনিভার্সিটি পছন্দ করলে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
অনলাইনে আবেদন করার পর এসএসসি, এইসএসসি-এর মার্কশীট, সার্টিফিকেট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রসহ যে বিশ্ববিদ্যালয়টি পছন্দের তালিকায় প্রথম থাকবে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি অফিসের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে হবে। তারপর ঐ বিশ্ববিদ্যায় আবেদনকারীকে ভর্তি পরিক্ষার তারিখ ও সময় জানিয়ে ইমেইল করবে কিংবা চিঠি পাঠাবে।
ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণত সাধারণ গনিত, আইকিউ (IQ), বিশ্লেষণাত্মক প্রশ্ন (Analytic Questions) এবং বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন থাকে। ভর্তি পরিক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের উপর ভিত্তি করে পছন্দের ক্রমানুসারে যেকোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়। ভর্তি পরীক্ষা সাধারণত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে হয়ে থাকে। আর অনলাইন আবেদন করার শেষ সময় সাধারণত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ।
যে সব বিষয়ে পড়াশুনার সুযোগ রয়েছে
স্নাতক ডিগ্রীর উল্লেখযোগ্য কয়েকট কোর্স হচ্ছে মানুষের বয়:বৃদ্ধি ও বৃদ্ধত্বকালীন সেবা (Human Ageing and Elderly Service), আন্তর্জাতিক বাণিজ্য (International Business), প্লাস্টিক প্রযুক্তি (Plastic Technology), তথ্য প্রযুক্তি (Information Technology), পরিবেশ প্রকৌশল (Environmental Engineering), নার্সিং (Nursing), সামাজিক সেবা (Social Services), ভ্রমণ ও আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনা (Tourism and Hospitality Management), বাণিজ্য তথ্য প্রযুক্তি (Business Information Technology) এবং ইলেকট্রোনিক্স (Electronics)।
স্নাতকোত্তর স্তর
স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তির জন্য সাধারণত কোন ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় না। অনলাইনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের যোগ্যতা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নির্ধারিত ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে হবে। এরপর ভর্তির জন্য বিবেচিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় চিঠি কিংবা মেইল দিয়ে জানাবে। এমনকি অফার লেটার পেলে প্রয়োজনে ১ বছরের জন্য ভর্তি ডেফার/পোস্টপন্ড করা যায়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
স্নাতকোত্তর স্তরে আবেদন করতে সাধারণত আবেদনপত্রের সাথে- একটি আগ্রহপত্র (Motivation Letter) কিংবা অধ্যয়নের উদ্দেশ্যের বিবৃতি(Statement of Purpose); দু’টো প্রত্যায়নপত্র (Reference Letters)- সাধারণত শিক্ষকদের কাছ থেকে; টোফেল/আইইএলটিএস স্কোর এবং বিষয় ভেদে কখনো কখনো জিআরই ফলাফল। এছাড়া প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে আবেদনের নির্ধারিত যোগ্যতার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া থাকে। তাই আবেদনপত্র পাঠানোর সময় সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে।
স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী হলেও স্নাতকোত্তর কোর্সে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। ফলাফল প্রকাশ হওয়ার আগেই যদি আবেদনের তারিখ শেষ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে কাগজপত্র পাঠানোর সময় নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা চিঠি নেয়া যেতে পারে যে, ফলাফল খুব তাড়াতাড়ি প্রকাশিত হবে। আর যেহেতু ট্রান্সক্রিপ্ট পাওয়ার সুযোগ নাই, সেহেতু যতটুকু পর্যন্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোর কপি সাথে পাঠালেই চলবে।
যে সব বিষয়ে পড়াশুনার সুযোগ রয়েছে
শিল্পকলার ইতিহাস (Art History), সৃজনশীল লেখা (Creative Writing), সামাজিক গবেষণা পদ্ধতি (Social Science Research Methods), বয়স্ক শিক্ষা ও জীবনব্যাপী শেখা (Adult Education and Life-long learning), অর্থনীতি (Economics), অর্থনীতি, রাষ্ট্র ও সমাজ (Economics, State and Society), গণতন্ত্র ও বৈশ্বিক পরিবর্তন (Democracy and Global Transformation), উন্নয়ন অধ্যয়ন (Development Studies), গণমাধ্যম ও বিশ্ব যোগাযোগ (Media and Global Communication),সংবাদ মাধ্যম অধ্যয়ন (Media Studies), উত্তর আমেরিকা অধ্যয়ন (North American Studies), ইউরোপ অধ্যয়ন (Europe Studies), ধর্ম, দ্বন্দ্ব ও সংলাপ (Religion, Conflict and Dialogue), আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক আইন (International Business Law), আন্তর্জাতিক গণ আইন (International Public Law), মেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড কেমিস্ট্রি, জনস্বাস্থ্য (Public Health), প্যাথলজি, মহাকাশ গবেষণা (Space Research), বায়োকেমিস্ট্রি (Biochemistry), খাদ্য বিজ্ঞান (Food Science), খাদ্য রসায়ন (Food Chemistry), জীব-প্রযুক্তি (Biotechnology), জৈব তথ্য-প্রযুক্তি (Bioinformatics), বাস্তুবিদ্যা (Ecology), পরিবেশ বিজ্ঞান (Environmental Sciences), জীববৈচিত্র্য (Biodiversity), জৈব রসায়ন ও রাসায়নিক বিশ্লেষণ (Organic Chemistry and Chemical Analysis), জৈব রসায়ন ও রাসায়নিক জীববিজ্ঞান (Organic Chemistry and Chemical Biology), তড়িত তথ্য প্রযুক্তি (Electronic Information Technology), ফলিত গণিত (Applied Mathematics), পরিসংখ্যান (Statistics) ইত্যাদি।
আবেদনপত্র জমা ও ভর্তি প্রক্রিয়া
ফিনল্যান্ডের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তি হওয়ার জন্য সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে আবেদনপত্র ডাউনলোড করতে হবে। আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি অনলাইনে আবেদন করতে হয়। তাছাড়া কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক যোগে মুদ্রিত আবেদন ফরমও সংগ্রহ করা যেতে পারে। প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রসহ যথাসময়ে আবেদন করার পর অপেক্ষায় থাকতে হবে অফার লেটারের জন্য। তারা না জানানো পর্যন্ত অপেক্ষার পালা। তবে আবেদন করার পর থেকে ভিসা পাওয়া পর্যন্ত প্রায় বছর খানেক সময় লেগে যেতে পারে। আবেদন করার আগে ভালভাবে দেখে বুঝে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে হবে। কারণ কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার জন্য ফি পরিশোধ করতে হয়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
নির্বাচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত আবেদনপত্র কিংবা অনলাইন আবেদন ফরম সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে শিক্ষাগত যোগ্যতার সব রকমের সনদপত্র, মার্কশিট, আইইএলটি স্কোরের প্রত্যায়নপত্র, পাসপোর্টের ফটোকপি, আর্থিক দায়দায়িত্বের চিঠি (Letter of Sponsorship) ও পাসপোর্ট সাইজ ছবি। যে ক্ষেত্রে আবেদনপত্রের ফি থাকবে, সে ক্ষেত্রে তা পরিশোধের রসিদ আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হবে। এখানে উল্লেখ্য করা দরকার যে, প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র অবশ্যই ইংরেজী অথবা ফিনিস কিংবা সুইডিস ভাষায় হতে হবে।
আবেদন করার সময় আগ্রহপত্র কিংবা অধ্যয়নের উদ্দেশ্যের বিবৃতিটা ভাল করে লিখতে হবে। আর প্রত্যয়নপত্রের ক্ষেত্রে বিভাগীয় অধ্যাপকের হলে ভাল হয়। কারণ ভর্তির জন্য বিবেচনার ক্ষেত্রে এ দু’টো ডোকুমেন্ট বেশ গুরুত্ব পেয়ে থাকে।
আবেদনপত্র আহবান ও জমা দানের সময়
সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তির জন্য আবেদনপত্র আহবান করে ডিসেম্বর এবং তা জমাদান করতে হয় ফেব্রুয়ারীর মধ্য। তবে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে তা মার্চ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
উচ্চশিক্ষার ব্যয় ও অর্থায়ন
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, এদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে টিউশন ফি দেয়া লাগে না। তবে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত কিছু কোর্সে এখন ফি আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যেই আলতো বিশ্ববিদ্যালয় ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকেই অনেক কোর্সে ফি প্রবর্তন করেছে। কোর্স বিশেষে টিউশন ফি ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে।
বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃক্তি
সাধারণত মাস্টার্স কোর্সে পড়াশুনার জন্য বৃত্তি পাওয়া যায় না একমাত্র ইউরোপীয় ইরাসমাস বৃত্তি ছাড়া। সরাসরি ডক্টোরাল কোর্সে পড়াশুনা করার জন্যও বৃত্তি পাওয়া বেশ কঠিন এবং তীব্র প্রতিযোগিতামূলক। কিন্তু এইখানে মাস্টার্স করার পর ডক্টোরাল কোর্সের জন্য আবেদন করলে বৃত্তি পাওয়া অনেকটা সহজ হয়ে যায়।
খাওয়া-দাওয়া, আবাসন ও আনুসাঙ্গিক খরচ
বৃত্তি না পাওয়া গেলে শুধু থাকা খাওয়ার খরচ নিজে ব্যবস্থা করতে পারলেই পড়াশুনা চালিয়ে নেয়া সম্ভব এখানে। প্রতি মাসে থাকা খাওয়ার জন্য গড়ে ৩৫০-৩৭০ ইউরো খরচ পড়ে। তবে শেয়ারে থাকলে খরচ অনেক কম পড়বে। সেক্ষেত্রে আবাসিক ভাড়া: ২২০-২৪০ ইউরো, খাওয়া খরচ: ৮০-৯০ ইউরো এবং আনুসাঙ্গিক খরচ: ২০-৪০ ইউরোর মধ্যে রাখা যাবে। স্বাস্থ্যসেবার জন্য বাৎসরিক ২৫ থেকে ৭৫ ইউরো ব্যয় হতে পারে। এখরচের হিসেবটা আনুমানিক একজনের একা থাকার ক্ষেত্রে বিবেচ্য। তাছাড়া শহর ভেদে এখরচ কম-বেশি হতে পারে।
এদেশে শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য স্টুডেন্ট এপার্টমেন্ট আছে। সাধারণত শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই এধরণের আবাসনে বসবাস করে। আর স্টুডেন্ট এপার্টমেন্টগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আশে পাশে হওয়াতে যাতায়াত খরচ অনেকটা কমে যায়। তবে এদেশে দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক যাতায়াত কার্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। এগুলো অনেকটাই সাশ্রয়ী ও সবধরণের যানবাহনের জন্য ব্যবহার করা যায়।
খন্ডকালীন চাকুরী ও আয়-রোজগারের সুযোগ-সুবিধা
অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ফিনল্যান্ড বিশ্বের অন্যতম একটা সবল দেশ। সম্প্রতি বিশ্ব মন্দা কবলিত হলেও ফিনল্যান্ডে সার্বিক দিক দিয়ে এর প্রভাব অতটা ভয়াবহ নয়। আর এখন এদেশের অর্থনীতি কেবলই উন্নতির দিকে চলছে। এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে কাজ করার প্রচুর সুযোগ যা ইউরোপের যে কোন দেশের তুলনায় নিঃসন্দেহে অনেক ভাল। এখন পর্যন্ত কাজ কর্ম নিয়ে কেউ বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছে বলে শোনা যায় নি। বরং সকলেই আসার কয়েক মাসের মধ্যেই মোটামুটি একটা কাজ যোগাড় করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীদের সুবিধামত সময়ে খন্ডকালীন কাজ করারও বিশেষ সুবিধা রয়েছে। সাধারণ সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজের আইনী বৈধতা রয়েছে। তবে চেনা পরিচিত লোকজন না থাকলে নতুন অবস্থায় এসে কাজ পেতে সমস্যা হয়। নূন্যতম ৬ মাসের খরচের অর্থ সাথে করে নিয়ে আসলে অনিশ্চয়তা অনেকটা কেটে যায়। কারণ তত দিনে একটা কাজ জুটে যায়।
খন্ডকালীন কাজ সাধারনত ক্লিনিং কোম্পানী গুলোতেই হয়ে থাকে। তাছাড়া হোটেল কিংবা বাংলাদেশীদের ফাস্ট ফুডের দোকানে কাজ পাওয়া যায়। কারণ অন্যান্য কাজ পেতে হলে ফিনিস কিংবা সুইডিস ভাষা জানা অপরিহার্য। তাছাড়া কমপিউটার বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা। ডেমলা (http://www.demola.fi) নামে একটা প্রতিষ্ঠান আছে, যেটি বিভিন্ন সফটওয়্যার কোম্পানি থেকে প্রজেক্ট নিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে দিয়ে করিয়ে থাকে। অনেকটা স্বাধীনভাবে কাজ করার মত। আর এরকম কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারলে পরে তথ্য-প্রযুক্তির চুক্তিভিত্তিক, এমনকি স্থায়ী চাকুরীও হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যারা বুদ্ধিমান তারা এধরনের কাজকে তাদের কোন একাডেমিক প্রজেক্ট হিসেবে নিয়েও ক্রেডিট নিতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
কমপিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তির শিক্ষার্থীদের জন্য ফিনল্যান্ডে চাকুরীর বাজার অনেকটাই স্থিতিশীল। নকিয়া ছাড়াও অন্যান্য সফটওয়ার ফার্মে কাজ পাওয়ার ভাল সুযোগ আছে। প্রথম বছর হয়তো একটু কষ্ট হয়। কিন্তু কোর্সের নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্রেডিট সম্পন্ন করার পর কাজ পেলে কিংবা বৃত্তি পাওয়া গেলে তখন কোন চিন্তা থাকে না। আবার ৫০ থেকে ৬০ ক্রেডিট সম্পন্ন করার পর শিক্ষা সহযোগীর (Teaching Assistantship- TA) পদে খন্ডকালীন কাজ করার জন্য আবেদন করা যায়। আর শিক্ষা সহযোগী হতে পারলে মাস্টার্স থিসিস লেখার ও পরে ডক্টোরেট করা জন্য বৃত্তির পথ অনেকটাই সুগম হয়ে যায়।
ভিসা প্রক্রিয়া ও ব্যাংক ব্যালেন্স
বাংলাদেশে ফিনল্যান্ডের কোন দূতাবাস না থাকায় স্নাতক স্তরে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিংবা স্নাতকোত্তর স্তরে অফার লেটার পাওয়া শিক্ষার্থীদেরকে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীস্থ ফিনিস দূতাবাসে ভিসার আবেদনপত্র জমা দিতে হয়। ভিসা আবেদনপত্র এই ওয়েব সাইট http://www.migri.fi থেকে সংগ্রহ করা যায়। স্টুডেন্ট ভিসার জন্য নিরধারিত ফর্ম ডাউনলোড করে স্পস্ট অক্ষরে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী পূরণ করে জমাদানের সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট ও মার্কশীটগুলোর আসল কপিগুলো, বীমাপত্রের (Insurance Paper) আসল কপি, জন্মনিবন্ধন সনদপত্র, ইংরেজী ভাষা দক্ষতার সনদপত্র (টোফেল অথবা আইইএলটিএস-এর স্কোর), ব্যাংক সার্টিফিকেট ও তিন মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্টের মূলকপি দেখাতে হবে। আবেদনপত্র এবং অন্যান্য কাগজপত্রের ২ সেট ফটোকপি ভিসার জন্য নির্ধারিত সাইজের ৪ কপি ছবিসহ জমা দিতে হবে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের নিজ নামে খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬,০০০ (ছয় হাজার) ইউরো সমমান টাকা এক থেকে তিন মাস পর্যন্ত জমা রাখার প্রয়োজন হতে পারে। সব রকমের শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া একই ধরনের।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম ও তাদের ওয়েব ঠিকানা
এখানে ফিনল্যান্ড শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম ও তাদের ওয়েব ঠিকানাগুলো তুলে দেয়া হল যাতে করে বিস্তারিত জানার জন্য নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব ঠিকানায় ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
1. University of Helsinki (http://www.helsinki.fi/university/)
2. Aalto University (http://www.aalto.fi/en/)
3. Arcada University of Applied Sciences (http://arcada.fi/en)
4. Haaga-Helia University of Applied Sciences (http://www.haaga-helia.fi/en)
5. Helsinki Metropolia University of Applied Sciences (http://www.metropolia.fi/en/)
6. Diaconia University of Applied Sciences
(http://www.diak.fi/en/Pages/default.aspx)
7. Laurea University of Applied Sciences
(http://www.laurea.fi/en/Pages/default.aspx)
8. University of Turku (http://www.utu.fi/fi/Sivut/home.aspx)
9. Turku University of Applied Sciences
(http://www.tuas.fi/public/default.aspx?nodeid=7563)
10. University of Tampere (http://www.uta.fi/english/)
11. Tampere University of Technology (http://www.tut.fi/en/)
12. Tampere University of Applied Sciences (http://www.tamk.fi/en)
13. University of Jyvaskyla (https://www.jyu.fi/en/)
14. Jyvaskyla University of Appliied Sciences (http://www.jamk.fi/english/)
15. University of Oulu (http://www.oulu.fi/english/)
16. Oulu University of Applied Sciences (http://www.oamk.fi/english/)
17. Abo Akademi University (http://www.abo.fi/?lang=en)
18. Lappeenranta University of Technology (http://www.lut.fi/web/en/)
19. University of Eastern Finland (http://www.uef.fi/en/home)
20. Satakunta University of Applied Sciences (http://www.samk.fi/english)
21. Centria University of Applied Sciences
(http://web.centria.fi/Default.aspx)
22. Hamk University of Applied Sciences
(http://portal.hamk.fi/portal/page/portal/HAMK/In_English)
23. Kajaani University of Applied Sciences (http://www.kamk.fi/en)
24. Karelia University of Applied Sciences (http://www.karelia.fi/en/)
25. Kemi-Tornio University of Applied Sciences
(http://www.tokem.fi/In-English/Home)
26. Kymenlaakson University of Applied Sciences
(http://www.kyamk.fi/Frontpage)
27. Lahti University of Applied Sciences
(http://www.lamk.fi/english/Sivut/default.aspx)
28. Mikkeli University of Applied Sciences (http://www.mamk.fi/front_page)
29. Novia University of Applied Sciences (http://www.novia.fi/novia-uas/)
30. University of Lapland (http://www.ulapland.fi/InEnglish)
31. Rovaniemi University of Applied Sciences (http://www.ramk.fi/en)
32. Saimaa University of Applied Sciences (http://www.saimia.fi/en-FI/)
33. Satakunta University of Applied Sciences (http://www.samk.fi/english/)
34. Savonia University of Applied Sciences (http://portal.savonia.fi/amk/en)
35. Seinajoki University of Applied Sciences
(http://www.seamk.fi/In-English)
36. Vaasan University of Applied Sciences (http://www.puv.fi/en/)
37. Aland University of Applied Sciences
(http://www.ha.ax/text.con?iPage=28)
38. Humak University of Applied Sciences (http://www.humak.fi/en)
39. National Defence University
(http://www.puolustusvoimat.fi/en/national_defence_university)
Notes:
1. First seven universities (1-7) and National Defence University are based in the Capital City, Helsinki.
2. Aalto University was formed by the merger of the Helsinki School of Economics, Helsinki University of Technology and the University of Art and Design.
3. Univeristy of Lapland, Kemi-Tornio University of Applied Sciences and Rovaniemi University of Applied Sciences are part of the Lapland University Consortium (http://www.luc.fi/In-English/About-us).
কোন পরামর্শের প্রয়োজন হলে
কেউ যদি সত্যিকার অর্থে লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে বিদেশে আসতে চায় তাদের জন্য ফিনল্যান্ড হতে পারে একটা আদর্শ জায়গা। এদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হলে এই ওয়েবসাইট গিয়েও বিস্তারিত জানতে পারেন http://www.studyinfinland.fi/। এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন পড়াশুনা করার প্রচুর সুযোগ সুবিধা রয়েছে, তেমনি রয়েছে চাকুরী কিংবা ব্যবসার মাধ্যমে ভবিষ্যত গড়ার অফুরন্ত সম্ভাবনা। তবে অনেকেরই এগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকায় এখানে আসার প্রতি তেমন একটা আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় না। ফিনল্যান্ডের শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আরো লেখার ইচ্ছে রইলো। কোন বিষয়ে পরামর্শের প্রয়োজন হলে সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করতে পরেন- ‘সারথী স্টুডেন্ট কনসালটেন্সী’র সাথে। তাদের সাথে যোগাযোগ করার ইমেইল ঠিকানা হলো: info.sharathi@consultant.com or info@sharathi.net অথবা তাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন: www.sharathi.net এওয়েবসাইটে বিস্তারিত জানতে পারবেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ে। তাছাড়া পেইসবুক পেইজ www.facebook.com/sharathistudentconsultancy এযুক্ত হয়ে জানতে পারবেন বিশ্বব্যাপী উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের নানা সুযোগ-সুবিধার কথা।
লেখক: যুক্তরাজ্যের ‘দ্যা ওপেন ইউনিভার্সিটি’তে গবেষক হিসেব কাজ করেছেন। Email: mahruf@ymail.com.