১৯১২ সালে আনা জার্ভিস মাদারস ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি) গঠন করেন। এমনকি তিনিই ‘মে মাসের দ্বিতীয় রোববার’ আর ‘মা দিবস’ এই দুটি শব্দের বহুল প্রচারণা চালাতে সক্ষম হন। বর্তমান বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো ছুটির দিনকেই বিশ্বের অন্যান্য দেশ খুব সহজেই গ্রহণ করে। আফ্রিকার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির মধ্যে মায়েদের সম্মানে বিভিন্ন ধরনের উৎসব রয়েছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। তবুও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বা দেশগুলোতে ব্রিটিশ প্রথানুযায়ী মা দিবস পালন করে থাকে। প্রতিবছর ২৭ মে বলিভিয়ায় মা দিবস পালন করা হয়। কোচাবাম্বা শহরে ১৮১২ সালের ২৭ মে সংঘটিত করনিলার যুদ্ধে দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধরত বহু নারীকে স্পেনের সৈন্যবাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে। যুদ্ধের নির্মম স্মৃতিস্মারক হিসেবে ১৯২৭ সালের ৮ নভেম্বর এই দিনটিকেই সরকারিভাবে মা দিবস হিসেবে আইনি স্বীকৃতি দেয়া হয়।
মা দিবসটি চীনদেশে আগে ততটা জনপ্রিয় ছিল না। কিন্তু কালের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চীনাদের মনেও এই দিনটি ধীরে ধীরে জায়গা করে নিয়েছে। এখন খুব জাঁকজমকভাবেই সেখানে মা দিবস পালিত হয়।
চীনের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত ফুল কার্নেশন মা দিবসের একটি জনপ্রিয় উপহার। দরিদ্র মায়েদের সাহায্য করা, এমনকি পশ্চিম চীনের গ্রামাঞ্চলের হতদরিদ্র মায়েদের কথা মানুষকে মনে করানোর জন্যই ১৯৯৭ সালে মা দিবসের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় চীনে। ইতিহাসের পাতায় লেখা রয়েছে, রানি কজুনের (রাজা আকিহিতোর মা) জš§দিনটিকেই মা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে জাপানে। জাপানে এই দিনটি খুব জনপ্রিয় একটি দিন। মা দিবস উপলক্ষে চীনের মতোই জাপানেও মায়েদের কার্নেশন আর গোলাপ ফুল উপহার হিসেবে দেয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুকরণে ১৯২২ সালে আলভারো ওব্রেগন সরকার মা দিবসের প্রচলন করেন। সেই বছরই এক্সেলসিয়র নামক সংবাদপত্রটি এই দিনটির সমর্থনে এক ব্যাপক প্রচার চালায়। ১৯৩০ সালের মাঝামাঝি সময়ে লাজারো কার্দেনাস সরকার মা দিবসকে একটি ‘দেশাত্মবোধক উৎসব’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, কার্দেনাস সরকার এই দিনটিকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিল। যেমন, জাতীয় উন্নয়নে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটিকে মনে করিয়ে দেয়া, মেক্সিকানদের মায়ের প্রতি আনুগত্যকে আরো সুদৃঢ় করা। এমনকি মেক্সিকান মহিলাদের ওপর থেকে চার্চ ও ক্যাথলিকদের প্রভাব কমিয়ে আনার লক্ষ্যে এমন একটি দিবসের প্রচলন করা হয় সে সময়।
পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মানুয়েল আভিলা কামাচোর স্ত্রী সলেদাদ ওরজকো গার্সিয়া ১৯৪০ সালে মা দিবসের প্রচার শুরু করেন। এটিকে একটি সরকারি উৎসবে পরিণত করেন। ১৯৪২ সালে উদযাপিত মা দিবসটি সপ্তাহব্যাপী উৎসবে পরিণত হয়। সেই উৎসব উপলক্ষে ঘোষণা করা হয় যে, প্রত্যেক মহিলা, যারা সেলাই মেশিন বন্ধক রেখেছে… তারা বিনামূল্যে সেগুলো ফেরত পাবে মন্ট দ্য পিয়েদাদ থেকে। ১৯৪২ সালেই মা দিবসের বিশাল অনুষ্ঠান পালনের একই সময়ে লেওন শহরে পাদ্রিরা ভার্জিন মেরির ২১০তম উৎসব পালন করে। সে উপলক্ষে একটি বড় কুচকাওয়াজের আয়োজন করে। এর ফলে বর্তমানে মেক্সিকোতে উল্লিখিত মা দিবসটি বিশ্ব মা ও ভার্জিন মেরি, এই দুজনরই উৎসব বা দিন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
প্রতি বছর এপ্রিল মাসে নেপালে ‘মাতা তীর্থে আনুসি’ বা ‘এক পক্ষকালব্যাপী মাতৃ তীর্থযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবটি অমাবস্যার সময় পালিত হয় বলেই এর নাম হয়েছে ‘মাতা তীর্থে আনুসি’। এই উৎসবের উদ্দেশ্য হলো, মৃত মায়েদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং জীবিত মায়েদের উপহার দেয়া ও সম্মান জানানো। বর্তমানে যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে এই দিনটি শুধুমাত্র মায়ের প্রতি সম্মান জানানোর জন্যই পালন করা হয়ে থাকে। যদিও বহু খ্রিস্টান মতাবলম্বী এখনো এই দিনটিকে সেই ঐতিহাসিকভাবেই দেখতে বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করেন। কারণ, যেন এই দিনটিতেই যিশু খ্রিস্টের মা মেরি ও ‘মাদার চার্চ’-এর মতো ঐতিহ্যবাহী রীতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের একটি ধর্মীয় রীতি জড়িয়ে রয়েছে। ভিয়েতনামে মা দিবসকে বলা হয় ‘লে ভু-লান’। চান্দ্র মাস অনুযায়ী বছরের সপ্তম মাসের পনেরতম দিনে এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। ভিয়েতনামে মা দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো, যাদের মা জীবিত তারা ঈশ্বরকে কৃতজ্ঞতা জানান। আর যাদের মা পরলোকগমন করেছেন তারা প্রার্থনার মাধ্যমে মৃত মায়েদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। বাংলাদেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ সারাবিশ্বের প্রায় ৬০টির মতো দেশে প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার একসঙ্গে মা দিবস পালিত হয়ে আসছে বহু যুগ ধরেই।
Prev Post
Next Post