সব মায়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা

0
maaছোট্ট একটি শব্দ ‘মা’। পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম ডাক এই ‘মা’। মা সন্তানের মনের কথা চট করে ধরে ফেলতে পারেন। মা তাঁর সন্তানকে চেনেন, জানেন।
জীবনের প্রথম সময়ে আমরা কথা বলতে পারতাম না। ক্ষুধা কিংবা কোনো যন্ত্রণার কথা আমরা মুখে বলতে পারতাম না। তার পরও মার কিন্তু সব বুঝতে পারেন। ছোট থেকে যিনি বড় করেছেন তিনি ‘মা। সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে সন্তানের পাশে থাকেন মা। অল্প একটু শারীরিক অসুস্থতায় যিনি বিচলিত হয়ে ওঠেন, তিনি এই ‘মা’। প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে বিশ্বব্যাপী ‘মা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। আজ ৮ মে। বিশ্ব মা দিবস। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও এই দিবস পালন করা হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশে এই দিবসটি পালন এক কথায় বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ দিবসটি এখন পুরোপুরি বাণিজ্যিকীকরণের আওতায় চলে এসেছে। এ দিবসকে কেন্দ্র করে বিদেশ তো দূরে থাক, আমাদের দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে ‘মা দিবস’ পালনে অনেকেরই দ্বিমত আছে।

ব্যক্তিগতভাবে আমি এই দিবসটিকে আলাদাভাবে উদযাপন করার প্রয়োজন অনুভব করি না। প্রথম মা দিবসের প্রচলন শুরু হয় প্রাচীন গ্রিসে। সেখানে প্রতি বসন্তকালের একটি দিন দেবতাদের মা ‘রিয়া’ যিনি ক্রোনাসের সহধর্মিণী তার উদ্দেশে দিনটি উদযাপন করা হতো। তবে সার্বিকভাবে মা দিবসের চিন্তা মাথায় আসে মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ডের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর ও ওহাইয়োর মাঝামাঝিতে ওয়েবস্টার জংশন। এই এলাকার বাসিন্দা ‘অ্যান মেরি রিভস জার্ভিস’ তার সারাটা জীবন ব্যয় করেছেন অনাথ শিশুদের সেবায়। ১৯০৫ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মা ‘অ্যান মেরি রিভস জার্ভিস’-এর মৃত্যুর পর তার কন্যা ‘আনা জার্ভিস’ মায়ের জন্য কিছু একটা করতে চান। নীরবে-নিভৃতে যে মা আর্তের সেবায় ছুটে বেড়িয়েছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে, তাকে উপযুক্ত সম্মানে ভূষিত কতে চাইলেন কন্যা আনা জার্ভিস। অ্যান মেরি রিভস জার্ভিস-এর মতো দেশের সকল মাকে স্বীকৃতি দিতে আনা জার্ভিস প্রচার চালাতে শুরু করলেন। পরবর্তীতে সাত বছরের চেষ্টায় ‘মা দিবস’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি লাভ করল।

বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, ১৯০৫ সালে আনা জার্ভিসের এ পথচলা শুরু হয়েছিল। মায়ের মৃত্যুর দুই বছর পর তিনি সরকারের কাছে দাবি করলেন মায়ের স্মরণে একদিন সরকারি ছুটির। আনা জার্ভিসের আন্দোলনে আমেরিকান কংগ্রেসের অনেক রাজনীতিক একাত্মতা প্রকাশ করলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯০৮ সালের ১০ মে প্রাথমিকভাবে আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়া, ফ্লোরিডা, ওকলাহোমা ও পেনসিলভানিয়াতে মা দিবস পালন শুরু হয়। ১৯১০ সালে সব অঙ্গরাজ্যে সরকারিভাবে মা দিবস ও দিনটিতে ছুটি পালন শুরু হয়। আমেরিকান কংগ্রেস ১৯১৩ সালের ১০ মে ‘মা দিবস’-কে সরকারিভাবে পালনের অনুমোদন দেয়। তারা মে মাসের প্রথম রোববারকে ‘মা দিবস’ পালনের দিন হিসেবে নির্ধারণ করে। আমেরিকার অনুকরণে মেক্সিকো, কানাডা, লাতিন আমেরিকা, চীন, জাপান ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে শুরু হয় মা দিবস পালন। যদিও আমেরিকায় এটা পালিত হয় মে মাসের প্রথম রোববার, কিন্তু অন্যান্য দেশে কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা যায়। যেমন নরওয়েতে মা দিবস পালিত হয় মে মাসের দ্বিতীয় রোববার। আর্জেন্টিনায় পালিত হয় অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় রোববার। দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিত হয় মে মাসের প্রথম রোববার। ফ্রান্সে ও সুইডেনে পালিত হয় মে মাসের শেষ রোববার। জাপানে পালিত হয় মে মাসের দ্বিতীয় রোববার। অপরদিকে, বাংলাদেশে এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার। পৃথিবীর সব মাকে বিনম্র শ্রদ্ধা।
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More