তৃতীয় লিঙ্গের অধিকারী কৃষ্ণা। হিন্দু ধর্মালম্বী এই হিজড়ার বয়স ২৬ বছর। চাঁদ রাতে ঈদের কেনাকাটাও করেছেন। আর মগবাজারের তার বাসায়ও ছিল ঈদ কেন্দ্রিক ব্যাপক আয়োজন।[ads1]
চাঁদ রাতে কথা হয় কৃষ্ণার সঙ্গে। তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘ঈদ তো কারো একার না! এটা একটা উৎসব। সবার জন্যই এই উৎসব। এ উপলক্ষে কালেকশনও হয়েছে বেশ। কেনাকাটা করেছি। ঈদের দিন বিকেলে যাবো গ্রামের বাড়ি দোহারে। সেখানে গিয়েও ফূর্তি করবো।’
শুধু কৃষ্ণা না, হাজারো হিজড়ারা মুসলিমদের সর্ববৃহৎ এই উৎসবে যোগ দিয়েছেন। ঈদ উপলক্ষে শুধু কেনাকাটা নয়, অন্যান্য আয়োজনও থাকে সমাজে অবহেলিত এই শ্রেণির মানুষদের।
ঈদ আয়োজন জানতে রাজধানীর খিলখাঁও, শাহজাহানপুর, মগবাজার ও বাড্ডা এলাকায় বসবাসকারী তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সঙ্গে কথা হয় বাংলামেইলের এই প্রতিবেদকের। তবে এসব এলাকায় ভাড়ায় থাকা হিজড়াদের অধিকাংশই গেছেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ করবেন বলে জানান তাদের প্রতিবেশীরা।
কথা হয় শাহজাহানপুরের ১০নং কলোনির বাসিন্দা জয়নালের সঙ্গে। স্থানীয়দের কাছে ‘জয়নাল হিজড়া’ নামেই বেশি পরিচিত। তিনি বলেন, ‘শুধু মাইনষে ঈদ করবে! আর আমরা বসে বসে দেখবো? আমগোও টাকা আছে। সঙ্গে ঈদও আছে।’[ads2]
ঈদের প্রস্তুতি কী? এমন প্রশ্নের জবাবে লুঙ্গিপরা জয়নাল তার বাসায় বসে বাংলামেইলকে বলেন, ‘ড্রেস কিনছি। সেমাই কিনছি। বন্ধুদের নিয়ে ঈদের দিন ঘুরতে যাবো। খাবো-দাবো, ফূর্তি করবো। আর ডার্লিংদের বাসায় যাবো। নাস্তা খাবো।’
সরকার স্বীকৃত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নির্দিষ্ট কোনো আয়োজন না থাকলেও, আয়োজনের কোনো ঘাটতিও নেই। তবে তাদের ঈদ প্রস্তুতির চেয়ে বেশি তাড়া ছিল গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার। এমন এক হিজড়া পান্না। এবার ঈদের আগে মগবাজার এলাকা থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকা কালেকশন করেছেন। বরিশালে গ্রামের বাড়িতে থাকা ভাই-বোনদের জন্য মার্কেটও করেছেন বেশ। ঈদের দিন সকালে ঢাকার বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের সকালটা কাটিয়ে বিকেলে যাবেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানে গিয়েও অংশ নেবেন ঈদ আনন্দে।
এ সময় তার হাতে থাকা শপিং ব্যাগ খুলে দেখান তার কেনা বিভিন্ন ঈদ পণ্য। ভাইয়ের জন্য টি-শার্ট ও প্যান্ট, বোনের জন্য থ্রি পিস কিনতে পেরে পান্না যেন মহাখুশি। বাংলামেইলকে তিনি বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই হিজড়ার অপবাদ মাথায় নিয়ে ঢাকায় চলে আসি। শেফালী হিজড়া আমাদের গুরু। তিনি আমাকে জায়গা ও সুযোগ দেন। এখনো তার সঙ্গেই আছি। আর নিজের পেট ও সংসার চালাতে হলে তার সঙ্গেই থাকতে হবে।’
রাজধানীর উত্তর বাড্ডার স্থানীয় বাসিন্দা পলি হিজড়া। বয়স ৫০ এর কাছাকাছি। নিজেই গড়েছেন একটি চার তলা ভবন। ঈদে তার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলামেইলকে বলেন, ‘আপনারাও যেমন ঈদ করেন, আমরাও তেমনই ঈদ করি।’ [ads1]
এদিকে খিলগাঁওয়ের ময়না খালা নামে পরিচিত গুরু মা স্থানীয় হিজড়াদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। বুধবার রাতে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে প্রায় দুই লাখ হিজড়া আছে। এদের অনেকেই যার যার মতো করে ঈদ উৎসব পালন করে। তাদের লম্বা ছুটিও দেয়া হয়।’
এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকার তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দিলেও কোনো সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। বাসা ভাড়া করতে গেলে ভাড়া দেয়া হয় না। কাজ দেয় না, অন্যের গাল-মন্দ শুনেই হিজড়াদের চলতে হচ্ছে।’