রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ বলেছেন, সার্টিফিকেটসর্বস্ব শিক্ষা নয়, নোট মুখস্থ করে পাস করার শিক্ষা নয়_ আলোকিত মানুষ হওয়ার শিক্ষা চাই, সৃজনশীল ব্যক্তিত্ব গড়ার শিক্ষা চাই। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট চ্যান্সেলর হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক চক্র সেদিনটিতেই তাকে হত্যা করে। এতে বোঝা যায়, সমাজের এই পশ্চাৎপদ শক্তি শিক্ষার আলোকে ভয় পায়। ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয়ী হলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ ও ধর্মান্ধতার লড়াই এখনও শেষ হয়নি। আজ আমরা আবার ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছি। এ লড়াইয়ে জয়ী না হলে আমরা আবার পিছিয়ে যাব। পরিচিতি লাভ করব উগ্রবাদী, সন্ত্রাসী, ধর্মান্ধ ও পশ্চাৎপদ জাতি হিসেবে।সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. রোল্ফ ডিটার হুয়ার সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক সাইটেশন পাঠ ও ভাষণ দেন। প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এসময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রধান, ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোঃ কামাল উদ্দীন, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য ও একাডেমিক পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সেয়দ রেজাউর রহমান। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক রোল্ফ হুয়ারকে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এর আগে সমাবর্তন উপলক্ষে একটি শোভাযাত্রা কার্জন হল থেকে দোয়েল চত্বর হয়ে খেলার মাঠে প্রবেশ করে। সমাবর্তনে অংশ নেয়া গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, তোমরাই দেশের উচ্চতর মানবসম্পদ। তোমাদের মনে রাখতে হবে, আজকের এই সমাবর্তন একদিকে যেমন তোমাদের অর্জনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে; তেমনি দায়িত্বও অর্পণ করছে। সে দায়িত্ব নিজের পরিবারের প্রতি, সমাজের প্রতি, সর্বোপরি দেশ ও জাতির প্রতি। মনে রাখতে হবে, এ দেশ ও জাতি তোমাদের এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তাদের কাছে তোমরা ঋণী। তেমরা তোমাদের অর্জিত জ্ঞান দিয়ে দেশমাতৃকার কল্যাণ করতে পারলে সে ঋণ কিছুটা শোধ হবে। তিনি বলেন, শুধু শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজেকেই গৌরবান্বিত করেনি। পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তি ও গুণীজনদেরও সম্মানিত করেছে সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করে। এদের মধ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির বিন মোহাম্মদ, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি প্রমুখ। অধ্যাপক ড. রোল্ফ ডিটার হুয়ার মানব সভ্যতার উন্নয়নে মৌলিক গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, বিজ্ঞানের ভাষা সার্বজনীন, এক ও অভিন্ন। তাই আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সহযোগিতা আরও জোরদার করতে হবে। তিনি বলেন, বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী সত্যেন বোস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। এই গুণী অধ্যাপকের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি লাভ করায় তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করত
ে শিক্ষকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
এবারের সমাবর্তনে বিভিন্ন বর্ষ ও বিভাগের ৮ হাজার ৩১২ জন গ্র্যাজুয়েট অংশগ্রহণ করেন। এদের মধ্যে রয়েছেন পিএইচডিধারী ৩৮, এমফিল ২৫, স্বর্ণপদকের জন্য ৩, এমডি-এমএস থেকে ৩৪, বিভিন্ন অনুষদের স্নাতক ১ হাজার ৬৮০ ও স্নাতকোত্তর ৮৫৫, এমবিবিএস ১ হাজার ৭২০, বিডিএস ২৮২, নার্সিং ২২১, ফিজিওথেরাপি ২০১, শিক্ষা অনুষদ থেকে ১, হোমিও-আয়ুর্বেদিক থেকে ৪৭, বিএড ১০৩, এমএড থেকে ৭২ জন।
গ্র্যাজুয়েটদের পদচারণায় সরব ক্যাম্পাস : সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে সোমবার গ্র্যাজুয়েটদের পদচারণায় সরব ছিল পুরো ক্যাম্পাস। কালো রঙের গাউন, টাই আর ক্যাপ পরিহিত ছিলেন প্রত্যেকেই। সকাল থেকে রাত অবধি প্রিয় ক্যাম্পাসে বেড়িয়েছেন তারা। মূলত পুরো দিন ক্যাম্পাসে তাদের রাজত্ব ছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে সনদপত্র নেয়ার আনন্দের দিনে সবাই মিলে আড্ডা ও ফটোসেশনে ব্যস্ত ছিলেন সারাদিন। যেন আনন্দঘন এ সময়টুকুকে ক্যামেরাবন্দি করার সুযোগ হাতছাড়া করতে কেউই রাজি নন। অপরাজেয় বাংলা, রাজু ভাস্কর্য, শহীদ মিনার, টিএসসিসহ ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সম্মিলিতভাবে কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে ক্যামেরাবন্দি করে রাখছেন নিজেদের।