বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন. ‘আজকে পত্রিকায় দেখলাম চট্টগ্রামের ওএমএসের চালের জন্য রোদে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে এক বৃদ্ধ অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছেন। দেশের মানুষ যখন খেতে পারছেন না, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিশোরগঞ্জের হাওরে গিয়ে রাষ্ট্রপতির বাড়িতে ২৫ ধরনের মাছ খেয়েছেন। তারা এখন জনগণের সঙ্গে পরিহাস করছেন।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবস উপলক্ষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব বলেন।
বিএনপি মহাসচিব আক্ষেপ করে বলেন, ‘২ মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। ৫২ বছরেও এই দিবসটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধ মানে আজ আওয়ামী লীগ এবং এক ব্যক্তির নাম প্রচার করা হয়। অথচ স্বাধীনতা যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। কই তাদের নাম তো স্মরণ করা হয় না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে স্বাধীনতা যুদ্ধের রূপকার মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানীর অবদান এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের নেতৃত্বদানকারী, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের অবদানও স্মরণ করা হয় না। আজকে শুধু ভিন্ন দল করার জন্য স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক আ স ম রব, ইশতেহার পাঠক শাজাহান সিরাজ, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকেও স্মরণ করা হয় না। বরং জিয়াউর রহমানকে একটা খলনায়ক হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। তারা (আওয়ামী লীগ) বলেন জিয়াউর রহমান নাকি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। সবকিছুই নাকি করেছে আওয়ামী লীগ এবং একজন ব্যক্তি।’
তিনি বলেন, ‘আজ ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতায় চেপে বসেছে। দেশের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। তারা আবার বাকশাল কায়েম করতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। অর্থনীতিকে ধ্বংস করে লুটের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করা হচ্ছে।’
সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ সরকার আজ দেশের ঐতিহ্য-ইতিহাস বিনষ্ট করে দিচ্ছে। মানুষ ভোট দিতে পারছে না। ভিন্নমত পোষণ করতে পারছে না। ভিন্নমত প্রকাশ করলেই কারাগারে যেতে হচ্ছে। গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে লিখতে পারছে না। সৎভাবে কেউ ব্যবসা করতে পারছে না। দলীয় লোক না হলে সেই ব্যবসায়ীর প্রতি চলে নিপীড়ন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ভারতের এক বিতর্কিত ব্যবসায়ীর সঙ্গে সরকার বিদ্যুৎ নিয়ে একটি চুক্তি করেছে। যার ফলে দুই শ টাকার কয়লা চার শ টাকা দিয়ে কিনতে হবে। আজকে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সবকিছুর দাম আরো বেড়ে যাবে। তারা আইন করেছে, গণশুনানী না করেই আবার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করতে পারবে। এ সরকার জনগণের টাকা লুটপাট করতেই বারবার বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কারণ এ আন্দোলন বিএনপি কিংবা গণতন্ত্র মঞ্চের নয়।’
জেএসডির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তানিয়া রবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক ও জেএসডি সভাপতি আ স ম রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ।