এলসির বকেয়া ১২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা

রপ্তানি শিল্পের কাঁচামাল আমদানি: দেনা পরিশোধ স্থগিত করায় বাড়ছে স্বল্পমেয়াদি ঋণ

0

ডলার সংকটের কারণে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্যাক টু ব্যাংক এলসির দেনা নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ফলে এ খাতে মোটা অঙ্কের দেনা বকেয়া পড়ে গেছে।

গত এক বছরে বকেয়া এলসি বেড়েছে ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ খাতে কোনো বকেয়া ছিল না। ওই বছরের ডিসেম্বর থেকে এ খাতে দেনা বাড়ছে।

সূত্র জানায়, রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্যাংকগুলো নিয়মিতভাবে ব্যাংক টু ব্যাক এলসি খোলে। এর আওতায় আনা কাঁচামাল দিয়ে উৎপাদিত পণ্য তৈরির পর বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে ডলার আয় হয়। এই ডলার দিয়েই ব্যাক টু ব্যাক এলসির দেনা শোধ করা হয়।

কিন্তু ২০২০ সালের শুরুর দিকে বিশ্বব্যাপী করোনার সংক্রমণ শুরু হলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যায়। তখন রপ্তানি পণ্যের মূল্য দেশে আসছিল না। একই সঙ্গে রপ্তানিও কমে গিয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী পণ্য রপ্তানি করার ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে আয় দেশে আনতে হয়। ওই সময়ে নির্ধারিত সীমার মধ্যে রপ্তানি আয় দেশে আনা সম্ভব হচ্ছিল না বলে মেয়াদ বাড়ানো হয়।

একই কারণে রপ্তানি আয় না আসায় ব্যাক টু ব্যাক এলসির দেনাও শোধ করা যাচ্ছিল না। ফলে দেনা পরিশোধের মেয়াদও দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে। ফলে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে। এগুলোর বিপরীতে চড়া সুদ দিতে হচ্ছে। গড়ে ৬ থেকে ৮ শতাংশ হারে সুদ দিতে হয়। এতে ঋণের পরিমাণ আরও বাড়ছে।

গত বছরের প্রথম থেকে নিয়মিতভাবে রপ্তানি আয় দেশে আসা শুরু হলেও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বেশি দামে কাঁচামাল কেনায় ওই আয় দিয়ে এলসির দেনা শোধ করা যাচ্ছিল না। ফলে দেনা পরিশোধের মেয়াদ আরও বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে বাড়তে থাকে এর পরিমাণ।

সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বর্ধিত নিয়ম অনুযায়ী ৩০ জুন পর্যন্ত বকেয়া এলসির দেনা পরিশোধ করা যাবে। সূত্র জানায়, এলসির দেনা একধরনের স্বল্পমেয়াদি ঋণ। এগুলোর মেয়াদ ৬ মাস থেকে এক বছর বাড়ানো যায়। এতে ঋণের সুদ বাড়ে।

ফলে সুদসহ বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এতে ডলারের ওপর চাপ বাড়ে। কারণ, স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেশি হলে তা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকিপূর্ণ। বেসরকারি খাতের ঋণ হলে আরও ঝুঁকিপূর্ণ। এসব দেনা বেসরকারি খাতের।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেশি হলে তা ডলারের ওপর চাপ বাড়িয়ে দেবে। কারণ এগুলো পরিশোধের জন্য যে হারে ডলারের প্রয়োজন হবে, সেই হারে ডলার আয় না হলে সংকট বেড়ে যাবে। বর্তমানে যেভাবে ডলার ব্যয় হচ্ছে, সেভাবে আয় হচ্ছে না। স্বল্পমেয়াদি ঋণের বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তদারকি বাড়ানো উচিত।

জানা যায়, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসির কোনো দেনা বকেয়া ছিল না। সেপ্টেম্বরের পর থেকে এ দেনা বকেয়া হতে শুরু করে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বকেয়া ছিল ৫৭ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। ২০২১ সালের মার্চে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ কোটি ৫৬ লাখ ডলারে। ওই তিন মাসে দেনা বেড়েছে ১৪ কোটি ২২ লাখ ডলার। বৃদ্ধির হার ২৪.৮০ শতাংশ। একই বছরের জুনে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪ কোটি ১৩ লাখ ডলার। এপ্রিল থেকে জুন-এই তিন মাসে বেড়েছে ২২ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। বৃদ্ধির হার ৩১.৫৪ শতাংশ।

একই বছরের সেপ্টেম্বরে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৯৮ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর-এই তিন মাসে বেড়েছে ৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। বৃদ্ধির হার ৫.০৫ শতাংশ। একই বছরের ডিসেম্বরে তা বেড়ে প্রথমবারের মতো শতকোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। ওই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৩ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। অক্টোবর থেকে ডিসম্বর-এই তিন মাসে বেড়েছে ১৪ কোটি ৬১ লাখ ডলার। বৃদ্ধির হার ১৪.৭৮ শতাংশ। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বকেয়া এলসির দেনা বাড়ে ৫৬ কোটি ১৫ লাখ ডলার। বৃদ্ধির হার ৯৮ শতাংশ।

২০২২ সালের মার্চে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১২০ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। ওই বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বেড়েছে ৭ কোটি ডলার। বৃদ্ধির হার ৬.১৭ শতাংশ। একই বছরের জুনে এলসির দেনা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১১৬ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। ওই তিন মাসে কমেছে ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। কমার হার ৩.১৬ শতাংশ।

গত সেপ্টেম্বরে তা সামান্য বেড়ে ১১৮ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। ওই সময়ে বেড়েছে ১ কোটি ৫১ কোটি ডলার। বৃদ্ধির হার ১.৩০ শতাংশ। ২০২২ সালের জুনয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে দেনা বেড়েছে ৪ কোটি ৫১ লাখ ডলার। বৃদ্ধির হার প্রায় ৪ শতাংশ।

jugantor

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More