উদ্ধার হয়নি ভিডিও ধারণের ফোন, উদ্বিগ্ন ও নিরাপত্তাহীনতায় ফুলপরী

0

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় শুরু থেকেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিবস্ত্র অবস্থায় ভিডিও ধারণের অভিযোগ করে আসছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী ফুলপরী। অপরদিকে অভিযুক্তরা নির্যাতনের কথা স্বীকার করলেও ভিডিও ধারণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তবে এ ঘটনায় গঠিত হাইকোর্টের তদন্ত কমিটি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটি ও হল কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ভিডিও ধারণের সত্যতা মিলেছে।

বুধবার নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ভুক্তভোগীর বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করা চারুকলা বিভাগের ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার ঊর্মীর মোবাইল ফোন সংগ্রহ এবং ধারণ করা ভিডিও উদ্ধার করে আদালতে দাখিল করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তবে নির্যাতনের ঘটনার ১৯ দিন পার হলেও ভিডিও ধারণ করা মোবাইল ফোনটি এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ফুলপরী খাতুন।

ফুলপরী যুগান্তরকে বলেন, সেই রাতে উনারা আমার বিবস্ত্র অবস্থায় ভিডিও ধারণ করেছেন। কিন্তু এখনও ফোনটি উদ্ধার করা হয়নি। আমি খুব ভয়ে আছি। তারা আমার উপর প্রতিশোধ নিতে ভিডিওটি ছড়িয়ে দেওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। আমি এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

আমি চাই, যেন দ্রুত ফোনটি উদ্ধার করে ভিডিও নষ্ট করা হয়। নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে তাহলে মনে হয় না আমার কোনো সমস্যা হবে।

এদিকে ফোনটি হারিয়েছে নাকি লুকিয়ে রাখা হয়েছে এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঊর্মী অপ্পো সি-ওয়ান মডেলের একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করতেন। ওই ফোনেই ভিডিও ধারণ করা হয় বলে দাবি করেছেন ফুলপরী। ঘটনার পর থেকে তিনি আর সেই ফোন ব্যবহার করছেন না।

বলা হচ্ছে, ভুক্তভোগীর অভিযোগ দেওয়ার দিন ফোনটি হারিয়ে গেছে। তবে এ বিষয়ে থানায় কোনো জিডি করা হয়নি। স্মার্টফোনের বিষয়ে জানতে চাইলে ঊর্মি যুগান্তরকে বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি ডায়না চত্বরে অনুষ্ঠানে স্টেজ পারফরম্যান্স করার সময় আমার ফোনটি হারিয়ে গেছে।

জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে ঊর্মি বলেন, আমার আগেও ফোন হারিয়েছে। এজন্য আর জিডি করা হয়নি।

সূত্র মতে, ঘটনার রাতের বিবস্ত্র ভিডিওটি চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী হালিমা আক্তার ঊর্মির স্মার্টফোনে ধারণ করা হয়। পরে ঘটনা জানাজানি হলে ফোন থেকে ভিডিও ডিলিট করা হয়। প্রমাণ লোপাট করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ফোন হারানোর নাটক সাজায় ঊর্মি। ফোনটি নিজে থেকে গায়েব করে এরপর থেকে তিনি একটি বাটন ফোন ব্যবহার করছেন।

জানা যায়, ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় হল কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি সঘটনার সত্যতা পাওয়ায় প্রক্টরকে মোবাইল ফোনটি উদ্ধারের জন্য বলেছেন। তবে এখনো পর্যন্ত ফোনটি উদ্ধারে তৎপরতা দেখা যায়নি।

প্রক্টর বলেছেন, হল প্রশাসনের দেওয়া নির্দেশনায় তথ্যের অপ্রতুলতা রয়েছে। সব তথ্য চওয়া হয়েছে। ফলে তথ্য আদান প্রদানের মধ্যেই সিমাবদ্ধ রয়েছে কার্যক্রম।

এদিকে বুধবার মোবাইল ফোনটি সংগ্রহ এবং ধারণ করা ভিডিও উদ্ধার করে আদালতে দাখিল করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এ ঘটনা ১৯ দিন পার হলেও এখনও পর্যন্ত ফোন উদ্ধারে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ যুগান্তরকে বলেন, ফোন উদ্ধারের বিষয়ে হল কর্তৃপক্ষের একটি চিঠি পেয়েছি। চিঠিতে ফোনের বিস্তারিত তথ্য না থাকায় বিস্তারিত তথ্য চেয়ে চিঠিটি হল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করেছি। এখনো বিস্তারিত তথ্য পাইনি। শনিবার ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও হল ভারপ্রাপ্ত হল প্রভোস্টকে ডাকবো। যাতে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে ফোনটি উদ্ধার করা হয় সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহীনিকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত শনিবার

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পর্যালোচনা, অভিযুক্ত ছাত্রীদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, ফুলপরীর নিরাপত্তা, হলে সিট বরাদ্দ ও অব্যাহতি দেওয়া হল প্রভোস্টের বিষয়ে নিদ্ধান্ত নেওয়া হবে শনিবার। দুপুর ১২টায় বিশ্বদ্যিালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সভা আহবান করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান।

তিনি বলেন, ভিসির উপস্থিতিতে সভায় হাইকোর্টের নির্দেশনার ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বহিষ্কারের বিষয়ে পর্যালোচনাপূর্বক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া সার্বিক বিষয়ের জন্য শৃঙ্খলা কমিটির সভা আহবান করা হয়েছে।

বুধবার হাইকোর্ট তাকে নির্ভয়ে স্বাভাবিক শিক্ষা জীবন চালিয়ে নিতে তিন দিনের মধ্যে আবাসিক হলে সিট বরাদ্দ দেওয়ার জন্য বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কর্তৃপক্ষকে। এর প্রেক্ষিতে শনিবার ক্যাম্পাসে আসবেন ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুন। ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তাকে সব নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ।

তিনি বলেন, কুষ্টিয়া ও পাবনার এসপির সঙ্গে কথা বলেছি। ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিও এ বিষয়ে সজাগ রয়েছে। ঘটনার সাক্ষীদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হবে।

ফুলপরীর পছন্দ মতো হলে সিট বরাদ্ধের বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, সে ক্যাম্পাসে আসলে তার পছন্দ মতো হলে সিট দিয়ে থাকার ব্যবস্থা করা হবে। তবে ফুলপরী দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে (নির্যাতনের ঘটনার স্বীকার হল) উঠতে রাজি নন। ফুলপরী যুগান্তরকে জানান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মজিব হলে থাকবেন তিনি।

উৎসঃ   jugantor
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More