ঢাকা মহানগরীতে ঠিক কতজন বাড়ির মালিক আছেন এবং কতজন তাঁদের বাড়ি আবাসিক অথবা অনাবাসিক উদ্দেশ্যে ভাড়া দিয়ে থাকেন, কতজন বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়ার সঙ্গে কোন ধরনের ভাড়া চুক্তিতে আবদ্ধ হন, কতজন বাড়িওয়ালা নিয়মিত বা আদৌ ভাড়ার রসিদ দেন, ভাড়া বাবদ তাঁদের আয় কতখানি ইত্যাদি নিয়ে কোনো পরিসংখ্যান নেই। এর মধ্যে আবাসিক উদ্দেশ্যে এবং অনাবাসিক উদ্দেশ্যে ভাড়া দেওয়ার সংখ্যা কেমন, তারও কোনো পরিসংখ্যান নেই। ভাড়া দেওয়ার সময় শতকরা কতজন বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়ার সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হন বা ভাড়াটিয়ার আগ্রহ সত্ত্বেও চুক্তি করতে চান, তাও আমাদের জানা নেই।
অনাবাসিক উদ্দেশ্যে ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে হয়তো চুক্তি স্বাক্ষরের কিছুটা তাগিদ উভয় পক্ষের মধ্যে দেখা যায়; কিন্তু আবাসিক উদ্দেশ্যে ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের চুক্তি হওয়াটাই যেন ব্যতিক্রম। বেশির ভাগ বাড়িওয়ালা ভাড়ার রসিদ দেন না। ভাড়াটিয়ারা আগ্রহ থাকলেও বাড়িওয়ালার এ ব্যাপারে একেবারেই অনাগ্রহ।
নতুন বছরের শুরুতেই ঢাকাসহ সারা দেশেই বাড়িভাড়া বাড়ানো হয়। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন বাড়িভাড়া বৃদ্ধির পরিমাণ অস্বাভাবিক। কেউ কেউ বলছেন, বাড়িওয়ালারা ভাড়াটিয়াদের জিম্মি করে রাখছেন বাড়িভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে। অস্বাভাবিক বাড়িভাড়ার পেছনে যে যুক্তি দেখানো হচ্ছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য সরকারি ট্যাক্স বৃদ্ধি ইত্যাদি অজুহাতে বাড়িওয়ালারা ভাড়া বৃদ্ধি করে থাকেন।
কিন্তু অধিকাংশ ভুক্তভোগী বলেছেন, সরকারি কর বাড়ানোর পরিমাণ সামান্যই, যা অস্বাভাবিক বাড়িভাড়া বাড়ানোর সঙ্গে অসমঞ্জস্য। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের যোগসূত্রে যেসব দুর্নীতি হয়, তাতে সরকার তিগ্রস্ত হয়। আবার কোথাও কোথাও অযৌক্তিকভাবে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা দুর্নীতি করার জন্য অতিরিক্ত ট্যাক্স বাড়িওয়ালাদের ওপরও চাপিয়ে দিয়ে থাকেন।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভাড়া দিতে দেরি হলে রাজধানীর ২৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ বাড়িওয়ালা ভাড়াটেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। গৃহহীন মানুষের তুলনায় বাড়ির সংখ্যা কম হওয়ায় বাড়িওয়ালারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়াচ্ছেন। ভাড়া দাবি করার ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা সম্পূর্ণ স্বাধীন। তাঁরা ভাড়া হাঁকবেন তাঁদের খেয়াল-খুশি আর ইচ্ছামতো, আবার তার ওপর কত রকমের শর্ত। আপনার ইচ্ছা হয় এতেই নেবেন, না হয় অন্য অনেক ভাড়াটিয়া আছেন।
বাড়ি ভাড়া আইন অনুযায়ী মানসম্মত ভাড়া নির্ধারিত হওয়ার পর প্রতি দুই বছর পরপর ভাড়া পুননির্ধরণ করার বিধান থাকলেও অধিকাংশ বাড়িওয়ালা প্রতি বছরই ভাড়া বাড়িয়ে চলেছে নির্দ্বিধায়। প্রতিনিয়ত বাড়ি মালিক কর্তৃক ভাড়াটিয়ারা আর্থিক, মানসিক ও কখনো কখনো শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, পাশাপাশি সংঘটিত হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রাপ্য হোল্ডিং ট্যাক্স ও আয়কর ফাঁকি দেয়ার মতো ফৌজদারি অপরাধ।
গবেষণা তথ্য
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, গত ২২ বছরে (১৯৯০-২০১১) ঢাকা শহরে বাড়িভাড়া বেড়েছে প্রায় ৩৫০ শতাংশ। আর ২০১০ সালের তুলনায় ২০১১ সালে বাড়িভাড়া বেড়েছে ১৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। বাড়িওয়ালাদের ৮০ শতাংশই বাড়িভাড়ার আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ কারণে কোনো কিছুর দাম সামান্য বাড়লেই ভাড়া বাড়ান মালিকেরা। ভাড়া দিতে দেরি হলে রাজধানীর ২৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ বাড়িওয়ালা ভাড়াটেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের আওতাধীন নগর গবেষণা কেন্দ্রের জরিপ অনুযায়ী রাজধানী ঢাকার ৭০% মানুষ তাদের উপার্জনের ৬০% অর্থ ব্যয় করে থাকেন বাড়ি ভাড়া বাবদ। বাকি ৪০% অর্থ দিয়ে তাদের পুরো মাসের বাজার, পোশাক-পরিচ্ছদ, যাতায়াত, চিকিৎসা এবং সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে হয়। ফলে নগরীর ৯৮% পরিবারই চরম হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এ হতাশার কারণেই যুবসমাজের মধ্যে ছিনতাই, রাহাজানি, সন্ত্রাস ও মাদকাসক্তের মতো অপরাধের দ্রুত বিস্তার ঘটছে।
ভাড়াটিয়া কল্যাণ সমিতির হিসেব অনুযায়ী ঢাকার ৮৫% মানুষ ভাড়া বাড়িতে থাকে। নগরীর জনসংখ্যার ৫% মানুষ নিজেদের বাড়িতে থাকে। এরা কাউকে ভাড়া দেয় না এবং কারো কাছ থেকে ভাড়া পায়ও না। বাকি ১০% মানুষ ৮৫% মানুষের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করে থাকে।
১৯৯০ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ২২ বছরের বাড়িভাড়া বৃদ্ধির চিত্র :
১৯৯০ ২৫.৭৯%
১৯৯১ ২১.৭৫%
১৯৯২ ১৩.৪৩%
১৯৯৩ ১২.১৬%
১৯৯৪ ১৬.৪৪%
১৯৯৫ ২২.৬১%
১৯৯৬ ১৭.৮৬%
১৯৯৭ ১৫.০৩%
১৯৯৮ ১৪.০৯%
১৯৯৯ ১৮.২৪%
২০০০ ১৫.০৮%
২০০১ ১৭.৪০%
২০০২ ১৩.৪৯%
২০০৩ ৮.৪০%
২০০৪ ৯.৯৬%
২০০৫ ৭.৮৯%
২০০৬ ১৪.১৪%
২০০৭ ২১.৪৮%
২০০৮ ২১.০৭%
২০০৯ ১৪. ৮৫%
২০১০ ২০. ২৭%
২০১১ ১৫. ৮৩%
বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ’, ১৯৯১-এর চুম্বক অংশ
উপমহাদেশে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪৩ সালে প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীকালে তৎকালীন পূর্ববাংলায় ১৯৫৩ সালে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নের পর বিভিন্ন মেয়াদে বৃদ্ধির ধারাবাহিকতার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১ প্রণীত হয়।
* বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১-এর ১০ ও ২৩ ধারা মোতাবেক বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রকের লিখিত আদেশ ছাড়া অন্য কোনোভাবেই বাড়ি মালিক তার ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ এক মাসের বাড়ি ভাড়ার অধিক কোনো প্রকার ভাড়া, জামানত, প্রিমিয়াম বা সেলামি গ্রহণ করতে পারবেন না। তা হলে দণ্ডবিধি ২৩ ধারা মোতাবেক তিনি দণ্ডিত হবেন।
* আপনার পরিশোধকৃত বাড়ি ভাড়ার রসিদ সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিক বা তার প্রতিনিধির কাছ থেকে তাৎণিক বুঝে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন/অধ্যাদেশ ১৯৯১-এর ১৩ ও ২৭ ধারা মোতাবেক বাড়ির মালিক তা দিতে বাধ্য।
* বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৬ ধারায় স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানসম্মত ভাড়া কার্যকরী হবার তারিখ হতে দুই বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। দুই বছর পর মানসম্মত ভাড়ার পরিবর্তন করা যাবে।
* এই আইনের ৮ ধারা এবং ৯ ধারায় বর্ণিত রয়েছে যে, মানসম্মত ভাড়া অপো প্রত্য বা পরোভাবে অধিক বাড়ি ভাড়া আদায় করলে সে ক্ষেত্রে প্রথমবারের অপরাধের জন্য মানসম্মত ভাড়ার অতিরিক্ত যে অর্থ আদায় করা হয়েছে তার দ্বিগুণ অর্থদণ্ডে বাড়ি মালিক দণ্ডিত হবেন এবং পরবর্তী প্রত্যেক অপরাধের জন্য এক মাসের অতিরিক্ত যে ভাড়া গ্রহণ করা হয়েছে তার তিনগুণ পর্যন্ত অর্থদণ্ডে বাড়ি মালিক দণ্ডিত হবেন।
* মানসম্মত ভাড়া সম্পর্কে আইনের ১৫ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ভাড়ার বার্ষিক পরিমাণ সংশ্লিষ্ট বাড়ির বাজার মূল্যের শতকরা ১৫ ভাগের বেশি হবে না। বাড়ির বাজার মূল্য নির্ধারণ করার পদ্ধতিও বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ১৯৬৪ তে স্পষ্ট করা আছে। এটাকে সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য করতে ঢাকা সিটি করপোরেশান ঢাকা মহানগরীকে দশটি রাজস্ব অঞ্চলে ভাগ করে ক্যাটেগরিভিত্তিক সম্ভাব্য বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে।
* বাড়ির মালিক ইচ্ছা করলেই ভাড়াটিয়াকে বসবাসের অনুপযোগী বা অযোগ্য অবস্থায় রাখতে পারেন না। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বসবাসের উপযোগী করে বাড়িটি প্রস্তুত রাখতে বাড়ির মালিকের উপর এই বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ২১নং ধারায় বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। অর্থাৎ বাড়ি মালিক তার বাড়িটি বসবাসের উপযোগী করে রাখতে আইনত বাধ্য।
* ভাড়াটিয়াকে পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, পয়ঃপ্রণালী নিষ্কাশন ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করতে হবে। এমনকি প্রয়োজনবোধে লিফটের সুবিধাও দিতে হবে। কিন্তু উক্তরূপ সুবিধা প্রদানে বাড়ি মালিক অনীহা প্রকাশ করলে কিংবা বাড়িটি মেরামতের প্রয়োজন হলেও ভাড়াটিয়া নিয়ন্ত্রকের কাছে দরখাস্ত করতে পারবেন।
* বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৮নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, ১৮৮২ সনের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন বা ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনের বিধানে যাই থাকুক না কেন, ভাড়াটিয়া যদি নিয়মিতভাবে ভাড়া পরিশোধ করতে থাকেন এবং বাড়ি ভাড়ার শর্তসমূহ মেনে চলেন তাহলে যতদিন ভাড়াটিয়া এভাবে করতে থাকবেন ততদিন পর্যন্ত উক্ত ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে না। এমনকি ১৮(২) ধারা মতে বাড়ির মালিক পরিবর্তিত হলেও ভাড়াটিয়া যদি আইনসম্মত ভাড়া প্রদানে রাজি থাকেন তবে তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না।
আইনের ১২ নং ধারায় বলা হয়েছে, কোনো বাড়ি ভাড়ার জন্য বা তার নবায়ন বা মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য কোনো ব্যক্তি তার আসবাবপত্র ক্রয়ের কোনো শর্ত আরোপ করতে পারবেন না। অর্থাৎ কোনো বাড়ির মালিক তার বাড়ি ভাড়া বাবদ ভাড়াটিয়ার আসবাবপত্র ক্রয় করতে পারবেন না। তদুপরি ভাড়া নবায়ন কিংবা মেয়াদ বৃদ্ধির শর্ত যদি বাড়ি ভাড়া চুক্তিতে থেকেও থাকে তা সত্ত্বেও ভাড়াটিয়া বাড়ি ভাড়া নবায়ন না করে, তাহলেও বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়ার আসবাবপত্র আটক বা ক্রয় করতে পারবেন না।
বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের সীমাবদ্ধতা
ভাড়াটের সঙ্গে বাড়িওয়ালার লিখিত চুক্তি করা আইনে বাধ্যতামূলক। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই নিয়ম না মেনে মৌখিকভাবে সব চলে। ফলে ভাড়াটে চাইলেও আইনের আশ্রয় নিতে পারেন না। আর ডিসিসির তালিকা অনুযায়ী, বাড়িওয়ালারা ভাড়া নিচ্ছেন কি না, সেটি তদারকের কোনো ব্যবস্থা নেই। কাজেই শুধু ভাড়া ঠিক করে দিলে হবে না, এটি মানা হচ্ছে কি না, সেটিও দেখতে হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার আইনেও বাড়িভাড়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ফলে বাড়িমালিকেরা ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছেন, বছর বছর ভাড়া বাড়াচ্ছেন।
বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১-এর ৩০ ধারা মোতাবেক আইনটিকে দেওয়ানি আইন বিধির অন্তর্ভুক্ত করে নষ্ট করা হয়েছে এর স্বকীয়তা এবং একই সঙ্গে এটাকে চলমান বাস্তবতায় পঙ্গু করে রাখা হয়েছে।
বাড়িভাড়া আইন কোন মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে, সে ব্যাপারে আইনে কিছু বলা নেই। এটা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের করার কথা। আর ঢাকা সিটি করপোরেশন সব বাড়ির হোল্ডিং কর নির্ধারণ করে দেয়। কাজেই তাদেরই উচিত প্রতিটি বাড়ির ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া।
সরকার ভাড়া নির্ধারণসহ এ-সংক্রান্ত সব সমস্যা সমাধানের জন্য নিয়ন্ত্রক নিয়োগ দিতে পারবে। ঢাকায় এখন পাঁচ থেকে ছয়জন সহকারী জজকে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া আছে। তবে সাধারণ মানুষ এটা জানে না। ফলে নিয়ন্ত্রকদের আদালতে যাওয়ার সংখ্যাও হাতেগোনা। তাছাড়া দেড় কোটি মানুষের এই শহরে পাঁচ-ছয়জন নিয়ন্ত্রকের কী বা করার আছে।
বিদ্যমান বাড়িভাড়া আইন ও বিরোধ নিরসনে জটিলতা
আইন মানুষ তখনই জানে, যখন তা কার্যকর হয়। আবার কার্যকর আইনের অসাড়তা বেশি দিন স্থায়ী হওয়া উচিত নয়। না হলে অপব্যবহারের সুযোগ থাকে। বাড়িভাড়া আইন প্রণয়নের পর থেকেই অকার্যকর হয়ে আছে। আইনের কোনো প্রয়োগ না থাকায় বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের মধ্য সমস্যা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
বাড়িভাড়া আইনের ধারা ১০ অনুযায়ী এ আইনটি মালিকদের স্বার্থ রা ছাড়া কিছুই নয়। ধারা ১০ অনুযায়ী ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে এক মাসের বেশি ভাড়া অগ্রিম নেওয়া যাবে না। অথচ বাণিজ্যিক এলাকাগুলোয় বাড়িওয়ালারা লাখ লাখ টাকা অগ্রিম ভাড়া এবং সেলামি হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। বিপুল অর্থ অগ্রিম ভাড়া ও সেলামি বাবদ মালিকের কাছে জমা থাকা সত্ত্বেও কোনো কারণে ভাড়াটিয়া সময়মতো ভাড়া দিতে ব্যর্থ হলে আইনানুযায়ী আদালত ভাড়াটিয়াকে খেলাপি বলে গণ্য করে উৎখাতের রায় দেন। সাধারণত স্বার্থান্বেষী মালিকেরা এ আইনের মাধ্যমে অগ্রিম অর্থ এবং সেলামি বাবদ নেওয়া অর্থ আÍসাতের প্রচেষ্টা চালান। কেননা, অগ্রিম অর্থ, সেলামি, সিকিউরিটি, পজেশন বিক্রয় ইত্যাদির যেভাবেই নেওয়া হোক না কেনÑলিখিত ও অলিখিত কোনোটিই আদালতের কাছে স্বীকৃত নয়।
শহরভেদে, এলাকাভেদে এবং বাড়ির মানভেদে ভাড়ার পার্থক্য হবেই, এটা জানা কথা, কিন্তু তফাৎ কতখানি হতে পারে, সেটাই অজানা। অগ্রিম ভাড়া দাবি করাটা একটা সাধারণ ঘটনামাত্র। এ রকম অগ্রিম দাবি ক্ষেত্রবিশেষে দুই থেকে ছয় মাসের ভাড়া এমনকি এক বছর পর্যন্ত হতে পারে। সবই বাড়িওয়ালার ইচ্ছামাফিক।
বাড়িওয়ালা আর ভাড়াটিয়ার ঝগড়ার কিছু সাধারণ বিষয়বস্তু হচ্ছে বাড়িওয়ালা কর্তৃক যখন-তখন বেহিসাবি ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সরবরাহÑএমন আরও খুঁটিনাটি ব্যবহারিক বিষয় নিয়ে বাড়িওয়ালার নানা তিক্ত আচরণ ইত্যাদি।
এ বাস্তবতা শুধু মেট্রোপলিটন এলাকা বা ব্যস্ত শহর এলাকা নয়, অন্যান্য শহর অঞ্চলেও কমবেশি একই।
ভাড়াটিয়ার অধিকার ও স্বার্থ সংরণের জন্য এবং কিছু ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আইনটির নাম যদিও বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ, কিন্তু প্রকৃত অর্থে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এর ভূমিকা একেবারেই নগণ্য। আইনটির মাধ্যমে নিযুক্ত নিয়ন্ত্রকের কাজকর্ম, মামলা-মোকদ্দমা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
নিয়ন্ত্রকের কাজ মামলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, সে কারণে দেখা যায়, ওই এলাকার সহকারী জজ বা অন্য কোনো জজ পদাধিকারবলে নিয়ন্ত্রক হিসেবে ভাড়াসংক্রান্ত মামলাগুলো করছেন। যদিও আইনে বলা হচ্ছে, এ সংক্রান্ত মামলা সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। কিন্তু এটা যে কখনোই হয় না।
যখন বাড়িওয়ালা আর ভাড়াটিয়ার ঝগড়া শুরু হয়, তখন ঝগড়া মেটানোর জন্য এ আইনের প্রয়োজন হতে পারে, এর আগে নয়।
বাড়িওয়ালা, ভাড়াটিয়া উভয় পরে স্বার্থ সংরণের যথাযথ বা পর্যাপ্ত আইনি কাঠামো এর মধ্যে নেই। যেমন, আইনটির ৭ ধারায় বলা হচ্ছে, বাড়ির ভাড়া কখনো মানসম্মত ভাড়ার অধিক হবে না। অর্থাৎ মানসম্মত ভাড়া কত হবে, তা নির্ধারণ করার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বাড়িওয়ালার ওপর। অথবা যদি উভয় পরে ঝগড়া লেগেই যায় এবং ভাড়াটিয়া বাড়িওয়ালাকে শায়েস্তা করার জন্য তাঁকে মামলায় টেনে নিয়ে যান, সে ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক যদি পারেন তবে তিনি নির্ধারণ করবেন।
ভাড়াটিয়ার ভাড়া দিতে বিলম্বের কারণে মালিক আদালতের শরণাপন্ন হলে আদালত ভাড়াটিয়াকে ১৫ দিনে ভাড়া পরিশোধের নির্দেশ দেন। ভাড়াটিয়া ভাড়া দিতে ব্যর্থ হলে আদালত ভাড়াটিয়াকে খেলাপি হিসেবে গণ্য করে উৎখাতের রায় দেন। অথচ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ভাড়াটিয়া একাধিকবার খেলাপি হলেও আদালত উৎখাতের নোটিশ দেন না। পরে ভাড়া পরিশোধ করলেই আদালত তাঁকে বৈধতা দেন।
বাড়িভাড়াসংক্রান্ত বহু মামলা নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হলে ধারা ১০-এর কারণে ভাড়াটিয়ার স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এমনকি অগ্রিম টাকা, সেলামি ইত্যাদির জন্য জমাকৃত টাকা আদায় করা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে ভাড়াটিয়ার কাছে যদি ধার্যকৃত ভাড়া অতিরিক্ত মনে হয়, তবে তাঁকে বাড়িভাড়ার নেওয়ার সময় থেকে ছয় মাসের মধ্যে আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়, অন্যথায় আদালত ভাড়াটিয়ার অভিযোগ গ্রহণ করবেন না।
সচেতনতার অভাবেই এ আইনটির কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে। ভাড়াটিয়া ঝামেলা এড়াতে চায় বলে সাধারণত আইনের আশ্রয় নিতে উৎসাহী হয় না। ফলে স্বার্থান্বেষী কিছু বাড়িওয়ালা সুযোগ নিয়ে থাকেন। উন্নত বিশ্বে আমাদের দেশের মতো ভাড়াটিয়াকেন্দ্রিক বাড়ি তৈরি হয় না। তাঁরা কোটি কোটি টাকা বাড়ি তৈরির পেছনে খরচ না করে ব্যাংকে রেখে লভ্যাংশ ভোগ করেন।
বর্তমানে আমাদের দেশে নির্মাণসামগ্রীর দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে বাড়িওয়ালা বাড়ি তৈরির পর উচ্চমূল্যে ভাড়া আদায় করবেন এটাই তাঁদের প্রত্যাশা। কেননা, তাঁরা বাড়ি তৈরির সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে বাড়ি তৈরি করেন। বর্তমানে ব্যাংকগুলোও ঋণ প্রদানের সময় ঋণগ্রহীতার উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংগতি রেখে কী পরিমাণ ভাড়া আদায় হবে, তা বিবেচনায় নিয়ে ঋণ দিয়ে থাকে। ভাড়ার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোও চায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণগ্রহীতা তাঁদের ব্যাংকের লোন পরিশোধ করুক। তা না হলে ব্যাংক ঋণগ্রহীতা খেলাপি হবে এ আশঙ্কায় বাড়ি তৈরির জন্য ঋণ দিতে আগ্রহী হবে না। ফলে আবাসনসংকট জেলা ও মহানগরগুলোয় প্রকট আকার ধারণ করবে।
আইনের অনেক ধারা বর্তমান বাজারদর এবং প্রচলিত আইন অনুযায়ী সংগতিপূর্ণ নয়। তা ছাড়া সাত দিনের মধ্যে ভাড়া পরিশোধে ব্যর্থ হলে ভাড়াটিয়া খেলাপি হবেন, এটাও যেমন ঠিক নয় তেমনি বারবার ভাড়াটিয়াকে সুযোগ নিতে দিলে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে সংকট তৈরি হবে। ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় এনে নির্ধারণ করা উচিত। শ্যামলী ও মিরপুরের ভাড়া কখনো এক হতে পারে না। বাড়িওয়ালা যেহেতু ভাড়াটিয়ার ওপর আস্থাহীনতায় ভোগেন, সে জন্য অগ্রিম ভাড়া নিয়ে থাকেন, কিন্তু মহানগরগুলোয় বাড়িওয়ালারা ব্যবসায়িক স্বার্থে বিপুল পরিমাণ অর্থ পজেশন হিসেবে নিয়ে থাকেন। সবকিছু বিবেচনায় এনে প্রচলিত অন্যান্য আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে এবং বর্তমান সময়ের চাহিদার দিকে ল রেখে বিদ্যমান আইনটির পরিবর্ধন ও পরিমার্জন হওয়া উচিত।
ঢাকা সিটি করপোরেশন
ঢাকা সিটি কর্পোরেশানের বাড়ি ভাড়ার হিসাব ওয়েব সাইটটিতে কিছু তথ্য, ছক আর কতগুলো তালিকা দেয়া আছে। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ঢাকা শহরকে ১০টি রাজস্ব অঞ্চলে ভাগ করে আলাদা আলাদা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে ডিসিসি। ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে ডিসিসি আবাসিক এলাকাগুলোকে কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছে। প্রধান সড়কের পাশে হলে এক রকম ভাড়া, গলির তিনশ’ ফুটের মধ্যে হলে এক রকম ভাড়া, আর গলির তিনশ’ ফুটের বাইরে হলে আরেক রকম ভাড়া।
এগুলোকে আবার আবাসিক, বাণিজ্যিক ও শিল্প- এ তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। এ ছাড়া হোল্ডিং নম্বর, নির্মাণের সময়কাল, কাঠামো, নির্মাণশৈলী, অবস্থান ও পজেশন হস্তান্তরের শর্তের ওপর ভিত্তি করে ভাড়ার তারতম্য হতে পারে বলেও ডিসিসির বিধান রয়েছে।
এই শেষোক্ত বিধানটির কোনো ব্যাখ্যা না থাকায় বাড়ি ভাড়া আইন থেকে ভাড়াটিয়াদের পে কোনো সুবিধা পাওয়ার পথটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
এসব পর্যালোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন এবং তার সাথে ঢাকা সিটি করপোরেশনের বেঁধে দেয়া ভাড়ার হার কাগজে কলমে বিদ্যমান থাকলেও এর কোনো প্রয়োগ আপাতত নেই। সাধারণ জনগণও এই আইন সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না।
বাড়িওয়ালাদের বক্তব্য:
বেশির ভাগ বাড়িওয়ালার একই কথা। নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া, গৃহনির্মাণ ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি, দফায় দফায় বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এসব কারণেই বাড়িভাড়া বাড়াতে হচ্ছে।
– সবকিছুর দাম বাড়লে বাড়িভাড়া বাড়বে না কেন?
ভাড়াটের সঙ্গে চুক্তি করেন না করা প্রসঙ্গে: কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাড়াটেরা চুক্তিপত্র জাল করে মালিকানা দাবি করে বসেন। তাই অনেক মালিক ভয়ে চুক্তিপত্রের কথা ভাবেন না।
প্রতিবছর ভাড়া কেন বাড়ে প্রসঙ্গে: ভাড়া তো বাড়বেই। সরকার তো কোনো আইন করেনি যে ভাড়া বাড়ানো যাবে না।
ঢাকার ভাড়াটিয়া ঐক্য পরিষদের সুপারিশ
– বাড়িভাড়া-সংক্রান্ত সরকারি নীতিমালা উপো করে মর্জিমাফিক ভাড়া বৃদ্ধি ও আদায় করা যাবে না।
– বাড়িওয়ালারা বাড়িভাড়া প্রাপ্তির রসিদ ও চুক্তিনামা প্রদান করবেন।
– কোনো ভাড়াটিয়া রসিদ ছাড়া বাড়িভাড়া প্রদান করবেন না।
– যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া যখন-তখন ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া যাবে না।
– গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল বাড়ার অজুহাতে ভাড়া বাড়ানো যাবে না। কারণ, এসব বিল অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়ারাই
পরিশোধ করে থাকেন।
– ‘আপনার না পোষালে বাসা ছেড়ে দিন’ এমন অসম্মানজনক ও মানবতা-বিরোধী উক্তি করা যাবে না।
– সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য সরকারি ট্যাক্স বাড়ার কারণে বাড়িভাড়া বাড়াতে হলে ভাড়াটিয়ার সঙ্গে
আলোচনা-সাপেক্ষে তা আনুপাতিক হারে বাড়ানো যাবে, অন্যথায় নয়।
– চুক্তিবিহীন ভাড়াটিয়ার বাড়িভাড়া একবার বাড়ানো হলে কমপে দুই বছর অতিক্রম না হওয়া পর্যন্ত কোনো অবস্থাতেই তা বাড়ানো যাবে না।
ভুক্তভোগী নাগরিক ও আইন বিশেষজ্ঞদের অভিমত
বাড়িভাড়া সর্বোচ্চ কত হতে পারে, তা নির্ধারণ হতে হবে নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে। শহরের গুরুত্ব, জনসংখ্যার চাপ, জীবনযাপন খরচ, বাড়ির অবস্থান, পরিবেশ, বাড়ির আয়তন, অবস্থা, প্রাপ্য সুবিধাদি ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সর্বোচ্চ ভাড়া নির্ধারিত হবে। এ রকম নির্ধারিত একটি তালিকা ছকের মাধ্যমে করতে পারলেই সবচেয়ে ভালো হয়। ছকবন্দী এ তালিকা সর্বসাধারণের জন্য প্রকাশিত হবে।
প্রতিবছর একবার অন্তত এ তালিকা পর্যালোচনা হবে। তাতে সর্বোচ্চ নির্ধারিত ভাড়া বাড়তেও পারে, কমতেও পারে। সব বাড়িওয়ালা এ ছক ভাড়াটিয়াকে দেখাতে বাধ্য থাকবেন, যাতে সহজেই বোঝা যায়, তাঁর বাড়ির মান অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভাড়াই তিনি চাইছেন।
অবশ্যই ভাড়া চুক্তির মাধ্যমে হবে এবং সে চুক্তির একটি কপি নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে অনতিবিলম্বে জমা হতে হবে। বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মতবিরোধের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে রক্ষিত নথি মূল সাক্ষ্য হিসেবে লাগতে পারে।
কোন এলাকায় কত বাড়িভাড়া হবে, সেটি নির্ধারণ করে তা মানা হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো উচিত।
কোন শহরে কতজন বাড়ির মালিক তাঁদের বাড়ি, ফ্যাট বা বাড়ির কোনো অংশ, আবাসিক বা অনাবাসিক যা-ই হোক না কেন ভাড়া দেন, তার একটি তালিকা বাধ্যতামূলকভাবে নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে দাখিল করতে হবে। নিয়ন্ত্রক কার্যালয় থেকে সেই বাড়িওয়ালার এবং ভাড়ার জন্য দেওয়া বাড়ির আলাদা পরিচয়সূচক নম্বর দেওয়া সুবিধাজনক হবে। প্রত্যেক বাড়িওয়ালার জন্য আলাদা নথি থাকাটা আরও সুবিধাজনক হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে ‘নেইবারহুড কাউন্সিল’ নামে একটি ব্যবস্থা চালু রয়েছে। যেখানে স্থানীয় বাসিন্দা বা গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বসে বাড়িভাড়াসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারেন। এর মাধ্যমে মামলা-মোকদ্দমা এড়িয়ে চলা যেতে পারে।
বাড়িভাড়াসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একদিকে যেমন ভাড়া নিয়ন্ত্রণ দপ্তরকে সক্রিয় করতে হবে, অন্যদিকে সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার মাধ্যমে বিকেন্দ্রীকরণ করা যেতে পারে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর (কমিশনার) ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত বোর্ড এলাকাভেদে ভাড়া নির্ধারণ করে দিতে পারে। উভয় পরে স্বার্থ বজায় রেখে আইনানুসারে অবশ্যই লিখিত চুক্তি হতে হবে, যার মধ্যে নির্ধারিত ভাড়া, রসিদ প্রদান ও উচ্ছেদসংক্রান্ত সব বিষয় স্পস্ট লিপিবদ্ধ থাকবে।
সব শ্রেণীর নাগরিকের উচিত, বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন সম্পর্কে ধারণা নেওয়া এবং তা মেনে চলা।
সংগ্রহীত