মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) কর্তৃক বিজিবি সদস্য সুবেদার মিজানুর রহমান নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার থেকেই বাংলাদেশ-বার্মা সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই উত্তেজনার মাঝেই বিজিবি কর্তৃক বার্মিজ সৈন্য নিহত হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। ‘বার্মা টাইমস’ নামের একটি নিউজ ওয়েবসাইটের সূত্র ধরে বাংলাদেশের প্রথম সারির কিছু সংবাদপত্রসহ বেশকিছু অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে এই সংবাদ প্রচার করা হয়।
এছাড়া এই ‘বার্মা টাইমস’-এর বরাত দিয়েই বাংলাদেশকে মোকাবেলায় মিয়ানমারের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ এবং টাটমাডাও ( মিয়ানমার সেনাবাহিনী) কর্তৃক বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে পার্বত্য চট্রগ্রাম পর্যন্ত দখলে নেয়ার সংবাদও ছড়ানো হয়।
তবে এবার খোদ ‘বার্মা টাইমস’ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্ট সকলের মনে। সীমান্তে সৃষ্ট উত্তেজনার পরেই বার্মা টাইমসে রহস্যজনক নানা সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকে। এর পরপরই নিউজ সাইটটির ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়।
ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ-বার্মা সীমান্তে যুদ্ধংদেহী মনোভাব তৈরির উস্কানি দিতেই সাইটটি সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে।
বেশ অনেকদিন ধরে সংবাদ প্রকাশ করা না হলেও হঠাত করেই রহস্যজনকভাবে হালনাগাদ করা হচ্ছে বার্মা টাইমসের সংবাদ। বার্মা-বাংলাদেশ সীমান্তের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য ও মিথ্যা সংবাদ।
প্রশ্ন উঠেছে ‘বার্মা টাইমস’ কাদের? কী উদ্দেশ্য নিয়ে তারা এই উস্কানিমূলক সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই পাওয়া গিয়েছে বেশকিছু রহস্যজনক তথ্য।
ডোমেইন অথবা আইপি এড্রেস খুঁজে বের করার সাইট whois.net জানাচ্ছে burmatimes.net বার্মিজ সাইট নয়। (দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন)। মোহাম্মদ ইব্রাহীম নামের এক ব্যক্তি বার্মা টাইমস ডট নেট নামের ওই ডোমেইনটি কেনেন ২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর।ডোমেইন ইনফরমেশন চেক করে দেখা যায় সাইটটি নিবন্ধন করা হয়েছে ‘Banglatimes.com.bd’ প্রতিষ্ঠানের নামে। প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ের ঠিকানা দেয়া হয়েছে ঢাকার কাজীপাড়ায়।
অন্যদিকে মোহাম্মদ ইব্রাহীম তার ঠিকানা হিসেবে দিয়েছেন জার্মানির একটি শহরের নাম। তার টেলিফোন নম্বরও দেয়া হয়েছে জার্মানির।
তবে ইতোমধ্যেই burmatimes.net ওয়েবসাইটটি স্থগিত করেছে এটির হোস্টিং প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ’99 software’। যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের প্রতিষ্ঠানের ‘রুলস এন্ড রেগুলেশন’ ভঙ্গ করায় বার্মা টাইমসের মালিকের কাছে তারা শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছেন। নোটিশের জবাব দেয়ার আগ পর্যন্ত সাইটটি স্থগিত থাকবে।
নোটিশের জবাব দেয়া হলে সাইটটি পুনরায় চালু করা হবে কী না – এই প্রশ্নের জবাবে তারা জানিয়েছেন, সন্তোষজনক উত্তর পেলেই কেবল তারা এ নিয়ে চিন্তা করবেন।
এদিকে রাত ৮টার দিকে বার্মা টাইমস সাইটটি আবার সক্রিয় অবস্থায় পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে হোস্টিং কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাদের শোকজ নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে সাইটটির মালিক পক্ষ থেকে সন্তোষজনক জবাব পেয়েই বার্মা টাইমস-কে আবার সক্রিয় করা হয়েছে।
এদিকে আইটি বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বার্মা টাইমস এবং বাংলা টাইমস একই সূত্রে গাঁথা।
‘বাংলা টাইমস’-এর বাংলা ভার্সনে গিয়ে দেখা যায় যাদের শেষ সংবাদ ‘ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাই: ৮ আসামির ১০ দিনের রিমান্ড’। যার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় এই নিউজপোর্টালটি একেবারেই হালনাগাদ করা হয় না।
নিউজ পোর্টালটিতে এর সম্পাদক হিসেবে নাম দেয়া রয়েছে সোহেল চৌধুরীর। যার ঠিকানাঃ বাসা: ৫৬২, গ্রাউন্ড ফ্লোর, পূর্ব কাজীপাড়া, ঢাকা ১২১৬, বাংলাদেশ। ইমেইলঃ editor@banglatimes.com.bd ।
এতোসব রহস্যে ঘেরা কার্যকলাপের কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ধারণা করছেন, বাংলাদেশ-বার্মা সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগনের দৃষ্টি অন্য দিকে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এই ফাঁকে রাষ্ট্রবিরোধী কোন অপকর্ম সংঘটিত হতে পারে।
এদিকে মঙ্গলবার হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অন্তত পাঁচটি বাংকার থেকে শতাধিক রকেট লাঞ্চারসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এই ঘটনার সাথে বার্মা সীমান্তে ইয়ত্তেজনা বৃদ্ধির কোনো যোগসাজশ আছে কী না খতিয়ে দেখছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
উল্লেখ্য, ৩০ মে বার্মা টাইমস মিয়ানমারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেজরের বরাত দিয়ে জানায়, ‘বার্মা-বাংলাদেশ সীমান্তে বার্মিজ ইউনাইটেড আর্মড ইউনিট (বিইউএইউ)-কে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাপারে মিয়ানমার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করেছে এবং টাটমাডাও (সেনাবাহিনী) টেকনাফ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল পর্যন্ত দখল করে নেয়ার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’