বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের পর এখন শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির। ভর্তি-যুদ্ধে নামার আগে পড়াশোনার পাশাপাশি তাদের সম্পন্ন করতে হয় ভর্তির ফর্ম তোলা ও জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া। গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফর্ম তোলার নিয়ম চালু হয়েছে। আর সেটাকে ঘিরেই ঢাকায় গড়ে উঠেছে এক মৌসুমী ব্যবসা। এক দল ব্যবসায়ী বছরের এই সময়ে ভর্তি ফর্ম পূরণ ও জমা দেয়ার ব্যবসা করে হচ্ছেন লাভবান আর শিক্ষার্থীরা সময় বাচাঁনোর জন্য সাহায্য নিচ্ছেন এসব ব্যবসায়ীদের।
ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় একটি দোকানে ভর্তি ফর্মের আদ্যপ্রান্ত বুঝে নিচ্ছেন হামিদা বানু। ফর্ম পূরণ করতে কি কি লাগবে, কত টাকা দিতে হবে এবং প্রবেশ পত্র কিভাবে পাবেন এসব। মেয়ের কোচিং এর উদ্দেশ্যে বগুড়া থেকে ঢাকায় আসা হামিদা বানু কাজ শেষে আমাকে বলছিলেন তার কাছে ঢাকা অনেকটাই অপরিচিত জায়গা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে পরীক্ষার তথ্য নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। আর তাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফর্ম পূরণের এই সুযোগ তার কাজে অনেকটা সুবিধা করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ”এখানে তো আমরা নতুন। ইন্টারনেটে ফর্ম পূরণ করা বা ব্যাংকে যাওয়া একটি ঝামেলা হয়ে যায় আমাদের জন্য।”
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের সংখ্যার তুলনায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা কম থাকায় প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে ভর্তি-যুদ্ধের। তিন মাসেরও কম সময়ে বিশাল সিলেবাস শেষ করার জন্য একটু সময় অপচয় করতে চাইছেন না তারা।
এবারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবেন উম্মে রোমানা ও তার সহপাঠি। তারা বলেন, ইন্টারনেটে ফর্ম পূরণ করতে সময় না লাগলেও ব্যাংকের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ফর্মের জন্য নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ করতে অনেকটা সময় ব্যয় করতে হবে। সেই ঝুঁকিটি তারা এখন নিতে চান না।
উম্মে রোমানা বলেন, ”ফর্ম পূরন করা কঠিন কিছু না। কিন্তু সোনালি ব্যাংকে যেয়ে ফর্মের টাকা দিতে হয়। দুই তিন ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়।”
আর ঠিক এসব কারণেই ঢাকায় গড়ে উঠেছে এক মৌসুমী ব্যবসা। ঢাকার ব্যস্ত এলাকা ফার্মগেট অনেকটাই পরিচিত কোচিং পাড়া হিসেবে। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার এই সময়টাতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী এখানে আসেন বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে পড়তে। গত কয়েক বছরে এসব এলাকাতেই ভর্তি পরীক্ষার ঠিক আগে আগে টেবিল, চেয়ার, কম্পিউটার নিয়ে বসে যান একদল ব্যবসায়ী। তারা শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার প্রয়োজনীয় তথ্য সরবারহ করেন, ফর্ম পূরণ, ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া ও প্রবেশপত্র এনে দেওয়ার কাজ করেন। বিনিময়ে ফর্মের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৫০ থকে ১০০ টাকা পর্যন্ত তারা বেশি নেন। গত চারবছর ধরে এই ব্যবসা করছেন মামুন হোসেন।
সপ্তাহখানেক আগে ফার্মগেট এলাকায় যে দোকানটাতে আমি তালা ঝুলতে দেখেছিলাম এখন সেখানেই সাত-আট জনের একটি দল কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাছেন। এ ব্যস্ততা চলবে আরো ১৫-২০ দিন। এদেরই একজন মিজানুর রহমান। এবার তিনি প্রথমবার এই ব্যবসা করছেন। লাভ ভাল, তাই আগামি বছরেও তিনি এই ব্যবসা বজায় রাখবেন।
মিজানুর রহমান বলেন, ”শুধু ভর্তি ফর্ম না আমরা ঢাকার বাইরে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সিলেট, চিটাগং, রাজশাহী সেখানে যাওয়ার জন্য গাড়ীর ব্যবস্থাও করে দিচ্ছি।”
ফার্মগেটের মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কাছে নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানগুলোতেও চলছে ফর্ম পূরণের কাজ। সেখানে শুধু ফর্ম পূরণ করা ছাড়াও শুধু মাত্র ভর্তি পরীক্ষার উদ্দেশ্য তৈরি করা কিছু সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও ভর্তি নির্দেশিকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতিযোগিতার এই সময়ে ফর্ম জমা দেওয়ার বিভিন্ন প্রক্রিয়াকে পরীক্ষার্থীরা যেখানে সময় সাপেক্ষ মনে করছেন সেখানে এসব মৌসুমী ব্যবসায়িদের ব্যবসাটা রমরমাই চলছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।- বিবিসি