
কাঁচা চামড়া আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, প্রতি বছর কোরবানির মৌসুমে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়। এর প্রায় ১৫-২০ শতাংশ চামড়ায় নানা ধরনের ত্রুটি থাকে। গ্রামাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা সহজ না হওয়ায় ফড়িয়ারা সঠিক সময়ে আড়ত পর্যন্ত চামড়া পেঁৗছে দিতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কোনো যানবাহনের ব্যবস্থা থাকলে সুবিধা হতো। পাশাপাশি ছোট ছোট পাইকার বা আড়তদারদের মধ্যে প্রশিক্ষণের অভাব থাকায় তারা সঠিক নিয়মে লবণ দিয়ে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রায় চামড়া সংরক্ষণ করতে পারেন না। এজন্য অনেক সময় চামড়া পচে যায়। এতে সার্বিকভাবে চামড়া খাতের ক্ষতি হয়। অথচ মূল্যবান এ পণ্যটির সঠিক সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে এ খাতের মাধ্যমে রপ্তানি আয় বাড়ানো সম্ভব।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলী হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার প্রথম ধাপ হলো পরিমাণমতো লবণ প্রয়োগ। তবে তার আগে চামড়া থেকে উচ্ছিষ্ট মাংস ভালোভাবে ছেঁটে ফেলতে হবে। এ দুই প্রক্রিয়ায়ই মূলত ত্রুটি থাকে, যে কারণে চামড়ার সঠিক গুণগতমান রক্ষা করা যায় না। এ খাতসংশ্লিষ্টরা একটু সচেতন হলে এবং সরকারি সহায়তা পেলে প্রচুর পরিমাণ চামড়া নষ্টের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। সেই সঙ্গে বিক্রেতারা দামও বেশি পেতেন।
সূত্রমতে, এ বছর ১ কোটি চামড়া সংগ্রহ হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ এই চামড়ার প্রাথমিক সংরক্ষণের জন্য চামড়া ছাড়ানোর ছয় ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিতে হয়। কিন্তু অনেক সময় তা করা সম্ভব হয় না। এতে চামড়ার গুণ নষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেক সময় কোনো আড়তে লবণের পর্যাপ্ত মজুদ থাকে না অথবা সঠিক গুণসম্পন্ন লবণ না হলে পরিমাণমতো লবণ দিলেও তা কাজে আসে না। এ ক্ষেত্রে চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ট্যানারি মালিকরা সঠিক দাম পান না বা রপ্তানির সময় গুণাগুণ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সেই চামড়ার সঠিক মূল্য পাওয়া যায় না। এসব ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করেন চামড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা।
জানা গেছে, একটি মাঝারি সাইজের গরুর চামড়ায় লবণ লাগে ৫-৬ কেজি আর বড় সাইজের গরুর চামড়ায় ৮-১০ কেজি। ছাগলের চামড়ায় লবণ লাগে ৩-৪ কেজি আর মহিষের চামড়ায় ১০ থেকে ১৫ কেজি। বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, এবারের ঈদে ৬৫ লাখ পিস গরু ও ৩৫ লাখ পিস খাসির চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে গরমের সময় হওয়ায় চামড়া সংরক্ষণ করতে সমস্যা হতে পারে। গরমের কারণে সংরক্ষণ খরচ বেশি পড়ে যাবে। কেননা কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুবার লবণ দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। একবার লবণ দিয়ে পরবর্তী ছয় ঘণ্টার মধ্যে তা প্রক্রিয়াজাত করতে না পারলে দ্বিতীয়বার লবণ দিতে হবে। অন্যথায় গরমে চামড়া পচে যেতে পারে। এজন্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতে এ বছর ব্যয় বেশি বাড়বে বলে জানান তিনি।
এদিকে চলতি বছর চামড়া কিনতে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো ৫০২ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করেছে, যা ইতিমধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা তা পাচ্ছেন না বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। এ কারণেও চামড়া সংরক্ষণ ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।