বিয়ে করবেন কোন বয়সে বা কোন বয়সে করা ভালো?

0

early marriage-1385126132-muslim-coupleএকটা কথা শুনেছিলাম সেদিন। পশ্চিমা এক দেশে একবার একটি কুকুর একটি বাচ্চাকে আক্রমন করে। চারিদিকে লোকজন দাঁড়িয়ে দেখছিলো। কেউ এগিয়ে আসছিলো না তাকে সাহায্য করতে। একজন মানুষ সাহস করে এগিয়ে গিয়ে কুকুরটিকে মেরে বাচ্চাটিকে বাচায়। চারিদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে তার এই সাহসি ভুমিকার। লোকজন তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সাংবাদিকরা এলো তার সাক্ষাতকার নিতে। জিজ্ঞাসা করলো আপনার নাম কী? সে বললো, মুহাম্মাদ। বিস্তারিত সাক্ষাতকার সবাই নিয়ে গেলো ঠিকই। কিন্তু পরের দিন পত্রিকায় এলো

‘মুসলমান সন্ত্রাসীর হাতে নিরীহ কুকুর নিহত’

ইসলাম ও ইসলাম্পন্থীদের বিরুদ্ধাচারিতার ক্ষেত্রে বিধর্মী ও সেক্যুলাররা কখনো কোনো নীতি-নৈতিকতা ও সততার তোয়াক্কা করে না। সব সময়ই ডার্টি গেইম প্লে করে। এমনকি আল্লাহর নবী নূহ আ. থেকে নিয়ে মুহাম্মাদ সা.—কাউকেই এরা ছাড় দেয়নি। কারণ, এদের নৈতিকতার কোনো বালাই নেই। সেটা হোক বন্ধুত্ব কিংবা শত্রুতা। সকল ক্ষেত্রেই।

সমাজের যা কিছু খারাপ কিংবা যা কিছুকে তারা ‘খারাপ সাজাতে’ চায় সব কিছুকে তারা ইসলামের সাথে ট্যাগ করে দেয়। এতে তাদের ফায়দা হলো, অসচেতন মানুষের মধ্যে একটা অবচেতন ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব তৈরি হয়।

কিছু দিন আগে একটা নিউজ পড়েছিলাম। এক ছেলেকে তার এক বন্ধু তার বাবার রেখে যাওয়া ১৪ লাখ টাকা ফু দিয়ে দিগুন করার লোভ দেখায়। সে জানায়, তার পরিচিত এক পীর/ফকীর আছে, সে নাকি ফু দিলেই টাকা দ্বিগুণ হয়ে যায়। টাকা দ্বিগুণ করতে বন্ধুকে নিয়ে রওয়ানা হয় ফকীরের বাড়ি। সে আর ফিরে আসেনি টাকা নিয়ে। ফিরেছে তার লাশ। এই সংবাদের কমেন্টে দেখলাম একজন লিখেছে, ‘ধর্মীয় কুসংস্কার মানুষকে কতো অন্ধ বানিয়ে দিতে পারে!’।

ডার্টি গেইমের এটাই হলো তাদের লাভ। ঘটনাটি ঘটার পেছনে যেখানে একমাত্র কারণই হলো ধর্মীয় মুল্যবোধের অনুপস্থিতি; সেখানে গোটা দায়ভারটাই চাপানো হলো ধর্মের ঘাড়ে।

এমন আরো কতো নিউজ দেখবেন। ‘প্রেমের কারণে যুবতীকে ৮০ দোররা’, ইত্যাদি। খবর নিয়ে হয়তো দেখা যাবে ঘটনা শুধু প্রেমেই নয়, প্রেম হয়তো শরীরেও গড়িয়েছিলো। এরপর গ্রামের মাতব্বররা হয়তো এই কাজ করেছে। পিটুনি দেওয়াটাকে বলা হবে দোররা। আর কয়টি পিটুনি হয়েছিলো সেটা কে-ইবা জানে। বলা হবে ৮০ দোররা। কারণ শরিয়াহ আইনে ৮০ দোররার একটা ব্যাপার আছে। ঘৃণা জন্মানো হবে ৮০ দোররার প্রতি। সহানুভূতি জন্মানো হবে অবৈধ প্রেমের প্রতি। চেপে যাওয়া হবে তাদের শরীর তত্ত্বের আসল ঘটনা। যদিও এখানে মাতব্বররা যা করেছে, যেভাবে করেছে, তার সাথে হয়তো ইসলামী আইনের দূরতম কোনো সম্পর্কও নেই।

খবরে দেখা যাবে, ‘বিধবাকে জোর করে হিল্লা বিয়ে দেওয়া হয়েছে’। খবরটা এমনভাবে পরিবেশন করা হবে, যেন হিল্লা বিবাহ ইসলামী বিধানের একটি অংশ। অথচ ইসলামের ব্যাপারে ন্যুনতম জ্ঞান রাখলেও জানার কথা যে, এর সাথে ইসলামের দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই।

এমনই তথ্য সন্ত্রাসের শিকার একটি বিষয় হলো রাষ্ট্রের নির্ধারিত বয়স হওয়ার আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। যাকে নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাল্য বিবাহ’। শব্দটা দিয়েই একটা অপরাধের আবহ তৈরি করা হয়েছে। এরপর নানা রকম শ্লোগান তৈরি করা হয়েছে। কুড়িতে বুড়ি নয়, বিশের আগে বিয়ে নয়। আরো কতো কী। এর তথাকথিত ক্ষতিকারক দিক নিয়ে নানা তত্ত্ব আবিষ্কার করা হয়েছে। অল্প বয়সে বিয়ে কী কী শারীরিক জটিলতা তৈরি করে তার ফর্দ বানানো হয়েছে। অথচ দেরিতে বিয়ের কারণে যে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক অর্থনৈতিক, পারিবারিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে মানুষ তা নিয়ে কিন্তু এরা কখনো কিছু বলবে না। কারণ এটা বললে তাদের নোংরা এজেণ্ডা বাস্তবায়ন করা যাবে না।

অল্প বয়সে বিয়েকে মাতৃ-মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। অথচ একটি মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে যে বায়োলজিক্যালী সে গর্ভধারণের জন্য সম্পুর্ণ উপযুক্ত—এটা সায়েন্টিফিকভাবে প্রমাণিত। মাতৃ-মৃত্যু যদি হয়ে থাকে সেটা অবশ্যই অন্য কোনো কারণে। হতে পারে সেটা অযত্ন অবহেলা, পুষ্টিহীনতা যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়া ইত্যাদি। এসবের কারণে তো খোদ বিয়েকে দায়ি করার কোনো যৌক্তিকতা নেই! এ ধরণের বায়াস কাজ অনেকেই করে। যেমন তামাকমুক্ত সমাজ গড়া নিয়ে যারা কাজ করে তারা সিগারেটের কারণে মৃত্যুর হারকে এমনভাবে দেখায়, যা সত্যিই আশংকাজনক। অথচ রিসার্চ করলে হয়তো দেখা যাবে, তাদের দেখানো মৃত মানুষগুলো সিগারেট হয়তো খেতো ঠিকই, কিন্তু সিগারেটের কারণেই যে তারা মারা গেছে তা কিছুতেই প্রমাণিত নয়।

এরা অল্প বয়সে বিয়েকে একটা জঘণ্য নোংরা কাজ হিসেবে উপস্থাপন করে। এরপর এর দায়ভার ইসলামের উপর চাপায়। এটাকে প্রমান করার জন্য আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর সাথে আয়েশা (রা.) এর বিয়ের ব্যাপারটিকে উদ্দ্যেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে বিয়ে, এই বিংশ শতাব্দিতে আবিস্কৃত কোনো রীতি নয়। পৃথিবীর প্রথম মানবজুটি থেকে নিয়ে হাজার হাজার বছর ধরে এ রীতি চালু আছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে। আর সৃষ্টিগত ও চাওয়া-পাওয়ার দিক থেকে মৌলিকভাবে মানুষের মধ্যে কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়নি। পৃথিবীর প্রথম মানুষের শারীরিক গঠন যেমন ছিলো, এখনো মানুষের গঠন তেমনই আছে। মৌলিকভাবে চাওয়া-পাওয়া, হাসি-কান্না, দুঃখ-বেদনার কারণ ও কার্যকারণও একই রকম আছে। কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়নি। অতএব বিয়ে এমন কোনো বিষয় নয়, যাকে আমাদের নতুনভাবে মুল্যায়নের কিছু আছে। আদম (আ.) এর সন্তান-সন্তুতিরা হাওয়া (আ.) এর গর্ভে যেভাবে এসেছিলো আপনি আমিও সেভাবেই এসেছি। আমাদের সন্তানরাও সেভাবেই আসে।

ঐতিহাসিকভাবেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার বয়সের ব্যাপারটি স্থানীয় রীতি-নীতি ও সামাজিক কালচার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো। উইকিপিডিয়ার দেওয়া তথ্যমতে প্রাচীন রোমান সমাজেও বিয়ের কোনো নির্ধারিত বয়স ছিলো না। সাধারণতঃ বয়প্রাপ্ত হওয়া বা পিরিয়ড শুরু হওয়ার সাথে সাথেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেতো এবং তারা সে বয়সেই বাচ্চা জন্ম দিতো।

বর্তমান আধুনিক ইউরোপের সবগুলো দেশেই বিয়ের উপযুক্ততার ক্ষেত্রে ছেলেদের বয়স হলো আঠারো; স্কটল্যাণ্ডে তো মাত্র ষোল। অন্য দিকে মেয়েদের ক্ষেত্রে অধিকাংশ দেশেই ষোল; কোনো দেশে পনের ও সতেরও রয়েছে। কেউ চাইলে কোর্ট আরও কম বয়সেও অনুমতি দিয়ে থাকে। মুসলিম বিশ্বের মধ্যে একমাত্র মালায়শিয়া ও বাংলাদেশেই ছেলেদের ২১ ও মেয়েদের ১৮ বছর বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে মালায়শিয়াতে মুসলিমরা শরিয়া কোর্টের অনুমতি নিয়ে এর নিচের যে কোনো বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। আমার জানামতে একমাত্র বাংলাদেশেই বয়সের এই আইন ভঙ্গ করাকে ক্রিমিনাল অ্যাক্ট বা শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য করা হয়।

সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ইয়েমেন। দীর্ঘ দিন সেক্যুলাররা শাসন ক্ষমতায় থাকলেও এক্ষেত্রে তারা সাধারণ জনগনের উপর কোনো বিধান চাপিয়ে দেওয়ার সাহস পায়নি। সে দেশে প্রত্যেকেরই অধিকার আছে নিজ প্রয়োজন অনুযায়ী সুবিধেমতো সময়ে বিয়ে করার। আসলেই ইয়েমেনীরা ভাগ্যবান। আল্লাহর রসূলের কথা শাশ্বত সত্য। তারা সভ্য, তাদের হৃদয় নরম; দ্বীন ইয়েমেনে, প্রজ্ঞাও ইয়েমেনীদের মধ্যে। আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ের জন্য এই ইয়েমেন থেকেই ১২ হাজার সৈন্যের এক বিশাল বাহিনীর আবির্ভাব ঘটবে।

যোগাযোগব্যবস্থা, তথ্য প্রযুক্তিসহ নানা বৈষয়িক এককে আমরা কিছুটা উন্নতি সাধন করেছি সত্য; কিন্তু সমাজের, বিশেষ করে যুবসমাজের নৈতিক অধঃপতন যে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে এটা কেউই অস্বীকার করে না। একমাত্র হলুদ আলোর সমর্থকেরা ছাড়া। সবাই-ই স্বীকার করেন যে, নৈতিক দিক থেকে আমাদের বাপ-দাদাদের যুগ আমাদের এই যুগের চেয়ে অনেক ভালো ছিলো। অশ্লীলতার প্রাদুর্ভাব এতো মারাত্মক তখন ছিলো না। সেই সমাজের বিয়ের চিত্র তুলে ধরেছেন আমাদের পল্লি কবি। তিনি লিখেছেন,

ঐখানে তোর দাদির কবর ডালিম গাছের তলে
তিরিশ বছর ভিজিয়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
এতোটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ
পুতুলের বিয়ে ভেঙ্গে গেল বলে কেদে ভাসাইতো বুক

এখানে পুতুল খেলার বয়সে বিয়ের মধ্যে আমাদের দুমুখো প্রগতিশীলেরা নান্দনিকতা খুজে পেলেও, আয়েশা (রা.) এর পুতুল খেলার বয়সে বিয়ের মধ্যে তারা ঠিকই ধর্মান্ধতা ও ভয়ংকর অমানবিকতার গন্ধ খুজে পান! এসব প্রগতিশীলদের ব্যাপারে মন্তব্য করতেও রুচিতে বাধে। বিচারের দায়িত্ব পাঠকদের উপরই ছাড়লাম।

অনেকেই বিয়ের এই বয়স নির্ধারণকে আমাদের দেশের জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে যৌক্তিক ঠাহর করতে পারেন। তাদের জন্য ইনশা আল্লাহ শিঘ্রই আমি জনসংখ্যার উপরে একটি আর্টিকেল লিখবো। জনসংখ্যা বৃদ্ধি সার্বিক বিবেচনায় ভালো না মন্দ—সে বিষয়টি সেখানে বিস্তারিত তুলে ধরবো ইনশা আল্লাহ।

মানুষের স্রষ্টা আল্লাহ তা’আলা মানুষের মধ্যে তার বিপরিত লিঙ্গের প্রতি এক সহজাত আকর্ষণ সৃষ্টি করেছেন। একের জন্য অন্যের সান্নিধ্যের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি ঢেলে দিয়েছেন। আর এই সান্নিধ্য প্রাপ্তির আইনগত, ধর্মীয় ও সামাজিক নিয়মের নাম হলো বিয়ে। ইসলামে বিয়ের জন্য নির্দিষ্ট কোনো বয়স সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। নারীরও নয়, পুরুষেরও নয়। পুরুষের বয়স বেশী হবে না নারীর—তা নিয়েও কিছু বলেনি। এটা মানুষের স্থান-কাল-পাত্র, পরিবেশ-প্রতিবেশ, মন-মনন, ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও রুচিবোধের উপর ছেড়ে দিয়েছে। ইসলাম যেহেতু গোটা সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা মহান আল্লাহর দেওয়া ধর্ম। তাই মানুষের মানুষের স্বভাবজাতপ্রবণতা বা ফিতরাতের দাবীকে কখনো উপেক্ষা করেনি। কোনো রকম ভান-ভনিতা, লৌকিকতা ও কপটতার আশ্রয় গ্রহণ করা হয়নি।

মানুষের স্বভাবজাত কোনো প্রবণতাকে যদি কোনোভাবে দমিয়ে রাখার অপচেষ্টা করা হয়, তখন ব্যাক-ফায়ার অনিবার্য। পানির স্বাভাবিক স্রোত যদি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবে সে নিশ্চয়ই বিকল্প পথ বের করে নিবে। আপনারা যারা গ্রামেগঞ্জে গিয়েছেন তারা হয়তো একটি ব্যাপার দেখে থাকবেন। বদ্ধ পুকুর বা জলাশয়ে পানি আসা-যাওয়ার যদি নালা না থাকে তাহলে বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট ছোট ছিদ্র তৈরি হয় পানির নিকটতম স্রোতধারার সাথে। যেটাকে আমাদের অঞ্চলে বলা হয় ‘হাইত্তা’।

২১ ও ১৮ বছর পর্যন্ত বিয়ে নিষিদ্ধ করে যে স্বাভাবিক স্রোতকে বন্ধ করা হয়েছে, তার বিকল্প ‘হাইত্তা’ আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন। ডাস্টবিন থেকে নবজাতক উদ্ধার। অমুক অমুক এলাকায় রমরমা দেহ ব্যবসা। এক দড়িতে ঝুলে প্রেমিক যুগলের আত্মহত্যা। পত্রিকার পাতায় স্থান না পেলেও আপনি, হ্যা, আপনিও এমন অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী। নিজ পরিবার, আত্মিয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী আপনি নিজেই। আমাকে এর উদাহরণ দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে না।

যে সমাজে নাটক-ছিনেমা, গল্প-উপন্যাসে, রেডিও-টিভি-বিলবোর্ডের বিজ্ঞাপনে সারাক্ষণ মানুষকে সুড়সুড়ি দেওয়া হয়। যে সমাজে পর্ণছবি বাজারের আলু-পটলের মতো বিক্রি হয়; যে সমাজে অনলাইনে নোংরামী মাত্র একটি ক্লিকের মধ্যে সহজলভ্য করে দেওয়া হয়। অন্য দিকে সহজাত চাহিদা পুরণের বৈধ পথ বন্দ করে দেওয়া হয়, সেখানে পরিস্থিতি কেমন রুপ ধারণ করতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যারা এখনও টের পাননি, একটু অপেক্ষা করুন। আমাকে আর বুঝিয়ে দিতে হবে না। আপনিই টের পাবেন হাড়ে হাড়ে। আপনার কলিজার টুকরা কন্যা, প্রাণপ্রিয় ছেলেই আপনাকে প্র্যাকটিক্যাল করিয়ে দেবে।

সত্যিই ভাবনার বিষয়! যেখানে ১৮ বছর বয়সে একজন মানুষ সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনার মতো জনগুরুত্বপুর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য ভোট দেওয়ার উপযুক্ত হয়; সেখানে তাকে বিয়ের মতো একটা একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বলা হয় ‘তুমি অনুপযুক্ত’। বিচিত্র! সত্যিই বিচিত্র!!

বিয়ে-শাদী দেরিতে হওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে বাস্তববাদিতা, দায়িত্বশীলতা ও পরিপক্কতারও মারাত্মক অভাব পরিলক্ষিত হয়। এই ছ্যাবলামোর প্রভাব সমাজ জীবনেও প্রতিফলিত হয়। এমন দৃশ্য আপনাদের চারপাশে অহরহ দেখে থাকবেন যে, ২৫-২৬ বছরের এক শক্ত সামর্থ্য যুবক বাপের হোটেলে খায় আর আড্ডাবাজি করে বেড়ায়। সমাজে কোনো অবদান তো রাখেই না, কারো দায়িত্ব তো নেয়ার মুরোদই নাই; বরং সে নিজেই সমাজের জন্য একটা বোঝা, একটা অভিশাপ।

রেস্পন্সিবিলিটি ছেলেদেরকে ‘পুরুষ’ বানায়। শুধু প্যান্ট পরা অর্থে পুরুষ নয়, বাস্তব অর্থে। তার চিন্তা-চেতনায় ও আচার আচরণেও তা ফুটে ওঠে । কথায়ও বলে, A man is not MAN until he takes the responsibilities of others. পুরুষ ততোক্ষণ পর্যন্ত পুরুষ হয় না, যতোক্ষন সে অন্যের দায়িত্ব ঘাড়ে না নেয়। আর এটা যতো তাড়াতাড়ি হবে, সমাজ জীবনেও ততো তাড়াতাড়ি দায়িত্বশীলতার প্রভাব পড়বে।

ইসলাম বিয়ের কোনো বয়স নির্ধারণ না করলেও নীতিগতভাবে প্রাপ্ত-বয়স্ক ছেলে-মেয়েদেরকে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পবিত্র ও দায়িত্বশীল জীবন যাপনে উৎসাহ দেয়। অতএব আমরাও আমাদের স্রষ্টার নির্দেশনা মানতে চাই। আমাদের অধিকার ফেরৎ চাই। আমরা চাই, আমাদের ছোট ভাই-বোনেরা, ছেলে-মেয়েরা ছাড়া গরু ছাগলের মতো এ ক্ষেতে সে ক্ষেতে মুখ দিয়ে না বেড়াক; তারা দায়িত্বশীল হোক, তাদের মানসিক স্থিতিশীলতা আসুক; তারা পৃথিবীতে অধিক প্রোডাকটিভ ও মেচিউরড ভুমিকা পালন করুক।
আল্লাহ আমাদেরকে সত্য উপলব্ধির তাওফিক দান করুন। আমীন! আমীন!! আমীন!!!

▬▬▬▬▬▬ஜ۩۞۩ஜ▬▬▬▬▬▬

লেখকঃ আহমেদ রফিক

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More