কমপ্লায়ান্স নিশ্চিত করেও শেষ রক্ষা হলো না পোশাক শিল্প উদ্যোক্তাদের। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে রফতানি আদেশ (অর্ডার) নিতে ক্রেতাদের ন্যায্যমূল্য থেকে ১৬০০ কোটি টাকা ছাড় দিতে বাধ্য হয়েছেন দেশের পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা ।
পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর পর্যবেক্ষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিকেএমইএ থেকে জানা যায়, বর্তমানে পোশাক শিল্প মালিকদের রফতানি আদেশের জন্য প্রতিনিয়ত নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
পণ্যের আগের দামের চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশের বেশি ছাড় দিতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। যে পরিমাণ অর্ডার আসার কথা ছিল তার ৪০ শতাংশ একেবারেই হারিয়েছে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা।
যেসব অর্ডার পেয়েছে তাতে যে পরিমাণ ছাড় দিতে হয়েছে, তার পরিমাণ প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার যা টাকার অঙ্কে প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা।
বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন একাধিক উদ্যোক্তা।
বিকেএমইএ-এর প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এই ছাড়ের কথা জানান।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, রানা প্লাজার ট্র্যাজেডির পর আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ এলায়ান্সের সার্টিফিকেট পেয়েছিলাম। তাই ভেবেছিলাম এই বছর আগের বছরের তুলনায় বেশি দামে অর্ডার পাবো।
এখন বেশি দামতো দূরের কথা আগের দামই ধরে রাখতে পারিনি। আগে অর্ডার নিয়েছিলাম এক ডলার ৮০ সেন্ট করে আর এবার আশা করেছিলাম তা অন্তত
২ ডলার পাবো। কিন্তু এবার আমাকে পিস প্রতি ১০ সেন্ট করে ছাড় দিতে হয়েছে। এবার আমি অর্ডার পেয়েছি এক ডলার ৭০ সেন্ট করে।
ঠিক একই অবস্থার কথা জানান ‘যারা জিন্সে’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেদী হাসার রানা।
তিনি বলেন, আমি ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক ক্রেতার কাছ থেকে আগে ১৮ ডলার করে জিন্সের অর্ডার পেতাম। গত বছর আমার অবকাঠামোসহ একর্ড এলায়ান্স দ্বারা কমপ্লায়ান্স নিশ্চিত করেছি। তাই অন্তত এবার ১৯ ডলার বা ২০ ডলার করে অর্ডার পাবো আশা করেছিলাম। কিন্তু আমাকে উল্টো ছাড় দিতে হয়েছে। ১৮ ডলার থেকে দাম কমিয়ে আমাকে ১২ ডলারে করে অর্ডার নিতে হয়েছে।
মেহেদী হাসান রানা বাংলানিউজকে বলেন, এবার ১২ ডলারে যে অর্ডার পেয়েছি, তাতে উৎপাদন খরচ তোলাই কঠিন হয়ে পড়বে। এতে কেবল শ্রমিকদের বেতন কষ্ট করে দেওয়া সম্ভব। ব্যবসা ধরে রাখতেই এতো ঝুঁকি নিচ্ছি আমরা। এ সমস্যা আর বেশি দিন চললে আমরা ব্যবসা ধরে রাখতে পারবো না।
বিজিএমইএ-এর এক পরিচালক পলো টি শার্ট উৎপাদক ১০ ডলার মূল্যের পলো টি শার্টের অর্ডার নিয়েছেন মাত্র সাড়ে চার ডলার দামে।
বিজিএমইএ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের আন্তর্জাতিক ৮০ শতাংশ ক্রেতাই এ দেশ ভ্রমণ থেকে বিরত রয়েছেন। অর্ডার নিতে উদ্যোক্তাদের নিজ দেশে বা অন্য কোনো দেশে যেতে হয়েছে বৈঠক করতে। এতে অনেকে ছাড় দিয়ে অর্ডার পেয়েছেন সামান্য, কাউকে আবার ফিরতে হয়েছে শূন্য হাতে।
চলমান অনির্দিষ্টকালের অবরোধে জানুয়ারি মাসেই পোশাক শিল্পের মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এতে করে চলতি অর্থবছরে পোশাক শিল্প রফতানির যে ২৭ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।
জানুয়ারি মাসের ৫ তারিখ সমাবেশ করার অনুমতি না পাওয়ায় অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেয় ২০ দলীয় জোট। যা এখনো চলমান। অন্যদিকে গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শক্রবার ও শনিবার বাদ দিয়ে পাঁচ কার্যদিবসেই চলছে ২০ দলের ডাকা হরতাল।
হরতাল-অবরোধের মধ্যে পেট্রোলবোমা হামলায় ৯০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। এতে আন্তর্জাতিক বিশ্বে পোশাক শিল্পের ক্রেতারা নানা প্রশ্নে জর্জরিত করছেন পোশাক শিল্প উদ্যোক্তাদের, জানান বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা।