আঁতাতকারীদের ‘লালকার্ড’ তৃণমূল বিএনপির

0

bnpসিলেট বিএনপির সম্মেলনকে ঘিরে নড়েচড়ে বসেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে তারা পদ প্রত্যাশীদের অতীত কর্মকাণ্ডও টেনে আনছেন। বিগত আন্দোলনে যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন তাদেরকে ‘লালকার্ড’ দেখাতেও পিছপা হবেন না তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আবার যারা গত আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে থেকে বৈরি পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন তাদেরকে নির্বাচিত করার চিন্তাও রয়েছে সেই তৃণমূলের। তাই আন্দোলনবিমুখ নেতারা এবার পদে আসতে চাইলেও প্রাণশক্তি তৃণমূল সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের অতীত কর্মকাণ্ডের জবাব দেবেন। তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতা মানবকণ্ঠকে এমন ইঙ্গিতই দিলেন।
এদিকে দীর্ঘ দিন পর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হওয়ায় সিলেট বিএনপিতে প্রাণ চাঞ্চল্যও ফিরে এসেছে। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করেই তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জেগে ওঠেছেন।
অপরদিকে বিভিন্ন পদে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তাদের জন্য রয়েছে বড় চ্যালেঞ্জও। বিগত দিনে যে সব তৃণমূল নেতাদের উপেক্ষা করা হয়েছিল তারাই এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। আন্দোলন সংগ্রামে যারা সক্রিয় ছিলেন তাদেরকে পুরস্কৃত করার চিন্তাও রয়েছে সেই সব তৃণমূল নেতাদের। আর যারা শীর্ষ পদে থেকে আন্দোলনের মাঠে নিষ্ক্রিয়, আঁতাত ও আপোষকামী রাজনীতি করছিলেন তাদেরকে ‘লালকার্ড’ দেখাবে তৃণমূলরা; এক উপজেলা বিএনপি নেতা এমনটাই জানালেন।
তৃণমূল বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা জানান, দলে ত্যাগী, পরীক্ষিত, রাজপথে যারা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তাদেরকে মূল্যায়ন করা হবে। তারা কোনো আঁতাতকারী ও আপোষকামী নেতাদের নির্বাচিত করবেন না বলেও ইঙ্গিত দেন। এমনকি তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তাদের এমন মনোভাবের কথাও জানাবেন তারা।
তৃণমূলের নেতারা বলেছেন, যারা তাদেরকে মূল্যায়ন করবে তাদেরই তারা নির্বাচিত করবেন। দলের স্বার্থেই এমন মনোভাব দেখাবেন তারা।
মানবকণ্ঠের কাছে এসব বিষয় তুলে ধরে তৃণমূলের কয়েকজন নেতা জানান, বিগত আন্দোলন সংগ্রামে সিলেট বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতাকেই নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। তাদেরকে রাজপথে দেখা যায়নি। এমনকি ওই সব নেতারা দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার জন্য বিগত আন্দোলন সংগ্রামে গলি পথে ‘ফটোসেশন’ রাজনীতি করেছেন। সে সব দিনের কথাও ভুলে যাননি তারা। তাই সম্মেলনের মাধ্যমেই তারা পরীক্ষিত, ত্যাগী এবং ক্লিন ইমেজধারী নেতাদের বেছে নেবেন। এই সম্মেলনটাই এখন তাদের জন্য অনেক গুরুত্ব বহন করে বলে যোগ করেন তারা।
এ ব্যাপারে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান মানবকণ্ঠকে বলেন, যারা রাজপথে ছিলেন এবং আগামীতে থাকবেন, সেব নেতাদের আমরা নির্বাচিত করবো। আন্দোলন সংগ্রামবান্ধব নেতাদের কোনো বিকল্প নেই। তাই এসব নেতারা যাতে মূল্যায়িত হন সেই দিকে তৃণমূলের নজর থাকবে।
তিনি বলেন, তৃণমূলে আমাদের অনুরোধ থাকবে রাজপথে যারা আন্দোলনের ‘খেই’ তুলতে পারেন তাদেরকেই যেন বেছে নেয়া হয়। আর যারা পদ পেয়ে রাজপথের আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তাদের ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানান তৃণমূলের এই নেতা।
গোলাপগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম মানবকণ্ঠকে বলেন, আমরা নেতা চাই ক্লিন ইমেজধারী। রাজনীতির মাঠে থাকবে যাদের অগ্রণী ভূমিকা। আর যারা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করবেন তাদেরকেই আমরা মূল্যায়ন করবো, বলেন তিনি। এছাড়া তিনি বলেন, বিগত দিনে যাদের বিরুদ্ধে আঁতাত রাজনীতির অভিযোগ উঠেছিল তাদেরকে অবশ্যই তারা নির্বাচিত করবেন না। এটা হবে দলের স্বার্থেই।
বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান মানবকণ্ঠকে বলেন, যারা বিগত আন্দোলনে মাঠে থেকে দলের জন্য কাজ করেছেন তাদেরকে অবশ্যই মূল্যায়ন করা হবে। আর যারা শীর্ষ পদে থেকে আন্দোলনবিমুখ ছিলেন এবং আঁতাত রাজনীতি করেছেন তাদেরকে ‘লালকার্ড’ দেখানো উচিত। এবং প্রত্যাখ্যান করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এ কমিটিকে ৪৫ দিনের মধ্যে সম্মেলনের তাগিদ দিলেও তারা সময় মতো সম্মেলন করতে ব্যর্থ হন। আর ‘যথাসময়ে’ সম্মেলন না হওয়াতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের হতাশা, ক্ষোভ দেখা দেয়। এমনকি জেলার জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যেও সমন্বয়হীতা দেখা দেয়। পরবর্তীতে জেলা শাখা সম্মেলন আয়োজনের জন্য কয়েক দফা সময় চেয়ে নেয়। এরপরও সেই কাঙ্ক্ষিত সম্মেলনের দিকে এগুতে পারেনি সিলেট জেলা বিএনপি। ৪৫ দিনের পরিবর্তে প্রায় এক বছর পর সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত হয় জেলা শাখা। এরপর কেন্দ্রকে জানায় তারা সম্মেলন আয়োজনে পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু তখন কেন্দ্র থেকে সম্মেলন আয়োজনে কোনো সবুজ সংকেতে পায়নি তারা। গত কদিন আগে কেন্দ্র থেকে জানানো হয় আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন সম্পন্ন করার জন্য। আর সে লক্ষেই এগিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।
অন্যদিকে একই সালের ৮ নভেম্বর সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করে দেয় কেন্দ্র। এ কমিটিকে ৩ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির লক্ষ্যে সম্মেলন আয়োজনের তাগিদ দেয়া হয়। কিন্তু মহানগর কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই দলে বিদ্রোহ দেখা দেয়। দাবি ওঠে কমিটি বাতিলেরও। একপক্ষ পদপ্রত্যাখান করে কমিটি বাতিলের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে নামে। এভাবেই দলীয় কোন্দল নিয়ে মহানগর বিএনপি সম্মেলন ছাড়াই এক বছর পার করে দেয়। অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর দ্বন্দ্ব নিয়েই আহ্বায়ক কমিটি মহানগরীর ২৭ ওয়ার্ডে কমিটি ঘোষণা করে। এছাড়া পাল্টা কমিটি ঘোষণা করে অপরপক্ষ। পরবর্তীতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ সম্মেলন করতে তারা প্রস্তুত রয়েছেন বলে কেন্দ্রকে অবগত করেন। কিন্তু কেন্দ্র থেকে সম্মেলনের তারিখ না পাওয়ায় থমকে যায় সম্মেলন আয়োজন। এবার দীর্ঘ দিন পরে হলেও আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি জেলা এবং মহানগর বিএনপির সম্মেলন একই দিনে সাড়তে চায় কেন্দ্রীয় কমিটি। এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের।
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সিলেটের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সজাগ দৃষ্টি রাখছেন। যাতে আন্দোলনবিমুখ কোনো নেতা দলের শীর্ষ পদে না আসতে পারেন।  অপরদিকে জেলা এবং মহানগর বিএনপির শীর্ষ পদে আসতে ইতিমধ্যে দুই ডজন নেতা তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন, তাদের সমর্থনও চাইছেন। আর তৃণমূলও দলে পরীক্ষিত, ত্যাগী এবং ক্লিন ইমেজধারী নেতাদের সন্ধান করছেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More