রাজশাহী: যুবদলের নতুন কমিটি ঘোষণার এক দিনের মাথায় গণপদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন কমিটির অনেকেই পদত্যাগ করতে শুরু করেছেন।
রোববার গভীর রাত পর্যন্ত গণপদত্যাগ পত্রে নতুন কমিটির ১৬৯ জনের মধ্যে ১০০ জনের অধিক সদস্য স্বাক্ষর করেন। সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে তারা আনুষ্ঠানিক পদত্যাগের ঘোষণা দিবেন বলে যুবদলের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, কাউন্সিল ছাড়া মহানগর যুবদলের কমিটি ও মহানগর বিএনপির দেয়া সিনিয়ার সহ-সভাপতির নতুন পদ প্রত্যাখ্যান করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। একই সঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও মহানগর সভাপতি মিজানুর রহমান মিনুসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মৌখিকভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে জানান সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। আর নতুন পাওয়া মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করে মহানগরের সভাপতির কাছে চিঠি দিয়েছেন যুবদল নেতা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব।
বিপ্লব তার পদত্যাগ পত্রে উল্লেখ করেছেন, কোনো ধরনের বর্ধিত সভা বা সম্মেলন না করেই যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাকে যে যুবদলের কমিটিতে রাখা হয়নি সে বিষয়ে কোনো পরামর্শ ও জিজ্ঞাসাও করা হয়নি। তাকে দেখানো হয়েছে রাজশাহী মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে। রাজশাহী মহানগর বিএনপির পূর্ব ঘোষিত কমিটিতে ২২ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আছে সেহেতু তাকে সেখানে দেয়ার কোনো যুক্তি তিনি দেখেন না।
বিপ্লব পদত্যাগপত্রে আরো জানান, তার কোনো মতামত না নিয়ে মহানগর যুগ্ম সাধারণ পদ দেয়ার অর্থ এই যে দলে তার প্রয়োজন ফুরিয়ে এসেছে। তিনি শুধুমাত্র একজন যুবদলের কর্মী হিসেবেই দলে থাকতে চান।
এদিকে, নতুন কমিটির প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর যুবদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক হাফিজুর রহমান হীরা। তিনি তার প্রতিবাদলিপিতে উল্লেখ করেন, রাজশাহী মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি হওয়ার পর ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলের মাধ্যমে ওয়ার্ড কমিটি গঠন কাজ শুরু হয়। ঠিক তখন চক্রান্ত করে কমিটি সম্পন্ন করতে বাধা সৃষ্টি করে পরনির্ভরশীলতার কৌশল তৈরি করে আহ্বায়ক কমিটির কার্যক্ষমতা খর্ব করা হয়।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, বর্তমানে কোনো বর্ধিত সভা বা কাউন্সিল না করে হঠাৎ করে ঘরে বসে পকেট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। যে কমিটিতে যোগ্য নেতাদের বাদ দিয়ে চার বছর আগে বাম সংগঠন থেকে আসা ব্যক্তিকে যুবদলে যোগ দান করিয়ে রাজশাহী মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়েছে। নতুন ১৬৯ সদস্য বিশিষ্ট যে কমিটি করা হয়েছে যা দলের জন্য ক্ষতিকর। এতে ব্যক্তি উপকৃত হবে; দল নয়। বর্তমানে দেশ ও দল কঠিন ক্রান্তিলগ্ন পার করছে। যাকে তাকে নেতা করা যায় কিন্তু সকল নেতা সংগঠক হতে পারে না। দলের জন্য দরকার সংগঠক। মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল একজন প্রকৃত সংগঠক।
ঘোষিত কমিটি বাতিল করে কাউন্সিলের মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তিদের নেতৃত্বে নিয়ে যুবদল কমিটি গঠন করার আহ্বান জানান হীরা।
এদিকে, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে বাদ দিয়ে মহানগর যুবদলের নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করায় যুবদলের মধ্যেই ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। শনিবার রাতেই যুবদলের একদল কর্মী মিজানুর রহমান মিনুর বাড়িতে গিয়ে এ কমিটির প্রতিবাদ জানান।
রোববার দিনে মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল তাকে দেয়া রাজশাহী মহানগর বিএনপির দেয়া পদটি প্রত্যাখান করেন। বুলবুল সমর্থকরা বিষয়টিকে রাসিক মেয়রকে রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় করার কৌশল হিসেবে দেখছেন। নতুন কমিটিতে থাকা অনেক বুলবুল সমর্থকও পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, শনিবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব (দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত যুবদলের নতুন কমিটির তালিকা মহানগর বিএনপিতে এসে পৌঁছায়। নতুন কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে ওয়ালিউল হক রানা ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে আবুল হাসনাইন হিকল।
সর্বশেষ ২০০৩ সালে মহানগর যুবদলের কাউন্সিল হয়। এ কাউন্সিলে দলের সভাপতি হন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক হন আসলাম সরকার। দীর্ঘ নয় বছর পর ২০১২ সালে সে কমিটি ভেঙে দিয়ে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে আহ্বায়ক করা হয়। একই সঙ্গে তিন মাসের মধ্যে ওয়ার্ড কমিটি করে মহানগরের কাউন্সিল করার নির্দেশ দেয় দলের হাই কমান্ড।