বিএনপিকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে

0

mirza-fakrulবিএনপিকে ‘ফিনিক্স পাখি’ আখ্যা দিয়ে দলটির নেতারা বলেছেন, আমাদের দলকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার নেতাকর্মীদের (বিএনপির) বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু এসব করে বিএনপি তথা জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দুর্বল করা কারো পক্ষে সম্ভব নয় বলে তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

বক্তারা বলেন, পিছু হটার সময় নেই। মানুষের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই হবে। গণতন্ত্র উদ্ধার করতেই হবে। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এবং বাধা অতিক্রম করে শহীদ জিয়ার আদর্শ বাস্তবায়নে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন দলটির সিনিয়র নেতারা।

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনায় সভায় বিএনপি নেতারা এসব বলেন।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি।

দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক মোস্তাহিদুর রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমান, অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুবুল্লাহ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম।

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের দর্শক সারিতে অন্যানের‌্য মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, ডা. জেড এম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, ফজলুল হক মিলন, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, আসাদুল করিম শাহিন, শামীমুর রহমান শামীম, রফিক শিকদার, জেড মর্তুজা চৌধুরী তুলা প্রমুখ। দুপুরে ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা নেসারুল হকের কুরআন তিলাওয়াতের মধ্যদিয়ে আলোচনা সভা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের দমন-পীড়নের সমালোচনা করে বলেন, দেশের গণতন্ত্র নির্বাসিত, গণতন্ত্র হরণ করা হয়েছে। এমন কোনো নেতাকর্মী নেই যে জেলে যেতে হয়নি। সমগ্র দেশ আজ কারাগারে পরিণত হয়েছে। এই কারাগার ভাঙতেই হবে। মানুষ কারাগারে যাওয়ার জন্য যুদ্ধ করেনি। পিছু হটার সময় নেই। মানুষের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। গণতন্ত্র উদ্ধার করতেই হবে।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান আমাদের নতুন করে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করেছিলেন। তিনি গোটা জাতিকে একত্রিত করে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে দেশকে সামনের দিকে অগ্রসর করেছিলেন। কিন্তু আজ দুর্ভাগ্য হচ্ছে- যেই আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে সেই দলটির হাতেই গণতন্ত্র নিহত।

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমান ছিলেন মহানায়ক। এখন সরকার হীন চেষ্টা করে তাকে খলনায়ক বানাতে চায়। এখানেই ক্ষান্ত নয় সরকার জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থল পর্যন্ত তুলে ফেলতে চায়!

বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে জিয়াউর রহমানের নাম নেই। ১৬ কোটি মানুষের যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে তা জিয়াউর রহমানের আমল থেকেই শুরু হয়েছিল। তিনি সারা দেশে খাল কেটে কৃষি বিপ্লব করেছিলেন। মানুষের ভাগ্যন্নোয়নে চারণ কবির মতো সারাদেশে ছুটে বেরিয়েছেন।

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, কথার কথা নয়, সত্যিকারার্থে জিয়াউর রহমানকে আমাদের স্মরণ করতেই হবে। শুধু রাজনৈতিকভাবে নয় দেশের উন্নয়নে তার কাজকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। শহীদ আদর্শ বাস্তবায়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, একটি পত্রিকায় দেখলাম আমি বিএনপিকে ভাঙার জন্য মুক্তি পেয়েছি। ভাঙার কাজ নাকি শেষ করে ফেলেছি। তাহলে আমি প্রশ্ন করতে চাই; আমি যদি সরকারের সাথে সমাঝোতা করে জেল থেকে তাহলে ২২ মাস কেনো জেল খাটলাম?

তিনি বলেন, জনগণকে ও দলের নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করার জন্য সরকারের ইন্ধনে এ রকম নিউজ করা হচ্ছে। বিএনপির সাবেক মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূইয়া দলের মহাসচিব পদে দীর্ঘদিন থেকেও দলকে ভাঙতে পারেন নাই। আমি কি এমন মহাপুরুষ হয়ে গেছি জেল থেকে বের হয়ে দুই দিনের মধ্যেই দলকে ভেঙে ফেলছি?

তিনি বলেন, বিএনপি ফিনিক্স পাখি। একে হত্যা করা যাবে না। পুনর্জন্ম নেবেই।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমাদের দলকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। বিএনপির উচ্চপর্যায় থেকে সাধারণকর্মী পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে মামলা নেই এমন কেউ নেই। মানুষের অধিকার নাই। গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রকে উদ্ধারের জন্য সবাইকে শপথ নেয়ার আহবান জানাই।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। সফলভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তিনি সফল রাষ্ট্রপতি ছিলেন। সর্বোপরি তিনি একজন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রাজনীতিবিদ ছিলেন।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রকে ভালবাসে। কিন্তু আমরা গণতন্ত্র হারিয়েছি। এ হারিয়ে ফেলা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতেই হবে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সব রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।

তিনি বলেন, বিএনপি আজকে মিথ্যাচারের স্বীকার। কিন্তু আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, শহীদ জিয়ার প্রতিষ্ঠিত এ রাজনৈতিক দল একটি মধ্যপন্থী এবং উদার রাজনৈতিক দল। এটা মানুষের কাছে উপস্থাপন করতে হবে।

বিএনপিকে বাঁচানোর তাগিদ দিয়ে দলটির শীর্ষ এই নেতা বলেন, আমরা ক্ষমতায় যেতে পারি আর না পারি এ দলকে বাঁচাতে হবে। দলকে সুসংগঠিত করতে হবে।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। তিনি একজন দক্ষ প্রশাসক ছিলেন। অত্যন্ত মিতব্যয়ী ছিলেন। ভোগবিলাসে বিশ্বাস করতেন না। তিনি একজন পরিশ্রমী মানুষও ছিলেন। দৈনিক ১৮ থেকে ১৯ ঘণ্টা পরিশ্রম করতেন তিনি। জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি, নতুন রাজনৈতিক নির্দেশনাও দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন মওদুদ আহমদ।

জিয়াকে নিয়ে গানের সিডির মোড়ক উন্মোচন
এদিকে জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গানের সিডির মোড়ক উন্মোচন করবে জাসাস ঢাকা মহানগর দক্ষিণ। সংগঠনটির আহবায়ক জাহাঙ্গীর শিকদারের উদ্যোগে আগামী বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে এর মোড়ক উন্মোচন হবে। সিডিতে জিয়াউর রহমান ও তারেক রহমানসহ সাম্প্রতিক রাজনীতি নিয়ে ১৩টি গান স্থান পেয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More