মীর কাশেমের ফাঁসির হুকুম বহাল থাকার মাধ্যমে রাম মাধবদেরই জয় হলো

0

Mina-Kasimমিনা ফারাহ :

দ্রুত বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যা হুকুম দিচ্ছেন মুখার্জীরা, কড়ায়গন্ডায় হচ্ছে সেটাই। বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা এদের হাতে নেই বরং এই শর্তেই ক্ষমতা।

দূর্গের নিরাপত্তা দিয়ে গণভবনের বাসিন্দাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে মুখার্জীরা। ততোদিন রাখবে, যতোদিন দিল্লির উদ্দেশ্য কড়ায়গন্ডায় পূরণ না হবে। অন্যথায় আবারো ১৫ আগস্টের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে ‘র’। বাংলাদেশ বিষয়ে ‘র’এর ক্ষমতা এমনকি মুখার্জীকেও ছাড়িয়ে গেছে। ঠিক যেমনটি হয়েছিলো মুজিব আমলে, মুজিববাহিনীর অসীম ক্ষমতা।

ট্রাইবুন্যালের বিচারের সিদ্ধান্ত নাকি রাজনৈতিক, মিডিয়াকে জানালেন দিল্লির গর্ভজাত সন্তান এটর্ণি জেনারেল। আমাদের এখন আর কোন কিছুই আর অজানা নয়। লেন্দুপ দর্জির মতো নতুন দর্জি বসিয়েছে বাংলাদেশেও।

ফেসবুকের এক বন্ধু লিখেছেন,  “দিদি আপনার হাসিনা তো ভারতের হাতে দেশটাকে তুলে দিয়েছে। আমরা ভারত থেকে এসেছি আপনাদের রেল পথ তৈরি করতে।” কথা সত্য, ৭১এর আগে যেমন বিহারীরা ছিলো, এখন কর্মস্থলে ভারতীয়রাই।

মীর কাশেমের ফাঁসির হুকুম বহাল। খালেদাকে জামায়াত ছাড়তে বলেছিলেন মোদি। ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার জন্য খালেদার উপর ভীষণ ক্ষুব্ধ মোদি। তাকে রীতিমত হুমকিও দিলেন।

এবার বলেন, কেন বেঁচে থাকবে জামায়াত নেতারা? এরপর প্রতিটি পদে পদে সবকটাকে নির্মূল করা হবে। এদের বাচ্চাকাচ্চা গুলোকে বিহারীদের মতো আলাদা রাখা হবে। অন্যথায় দিল্লির আধিপত্যবাদ এরা চ্যালেঞ্জ করবে। দিল্লির গর্ভজাত সন্তানেরা শতভাগ পালন করছে মুখার্জীদের হুকুম, সর্বশেষ দৃষ্টান্ত অবৈধ পার্লামেন্টের স্পিকারের সঙ্গে দিল্লিতে প্রণবের সাক্ষাৎ।

মীর কাশেমের ফাঁসির রায়ের আগে অবৈধ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং স্পিকারের দিল্লি যাত্রার আগে হিন্দু পত্রিকার কলাম, ফাঁসি দেবে কি দেবেনা সেই সিদ্ধান্তের জন্য এই সফর।

একটাকেও বাঁচিয়ে রাখবে না দিল্লি। ট্রাইবুন্যাল বেঁচে থাকবে যতোদিন তাদের টার্গেট পূরণ না হয়। গণভবনের দূর্গে এমন পাহারা বসিয়েছে, যাকে ওয়াশিংটন পর্যন্ত ভেদ করতে পারবে না। উপনিবেশবাদিদের বিরুদ্ধে শেষ ভরসাস্থল সেনাবাহিনী কিন্তু সেখানেও প্রচুর পরিমাণে বিষ দিয়েছে। হাতে বাছা বিষগুলোকে নানান গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এমনভাবে স্থাপন করেছে যেন, কোথাও কোন টুশব্দটি না হয়।

দ্রুত বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সবকিছুই দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। বোঝার উপায় নেই কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী কথা বলছে। বিচার বিভাগে যে ধরনের কথাবার্তা, একমাত্র জাম্বিয়া অথবা উত্তর কোরিয়ার সরকারের পক্ষে সম্ভব কিন্তু প্রণব মুখার্জী আর রাম মাধবদের খুদবা, বাংলাদেশের গণতন্ত্র নাকি অনেক উন্নত মানের?

দুই ধরনের রাজাকার আছে।

ক) যারা পাকিস্তানের বিরোধিতা করেছিলো।

খ) যারা ভারতের পক্ষ নিয়েছিলো।

৪৭ আর ৭১ একসূত্রে গাঁথা। দেশবিভাগ যেন না হয়, মোদি আর আদভানীরা তখন ৪৭এর রাজাকারের ভূমিকায় । ১৫ আগষ্টে খন্দকার মোস্তাকের মতো, দেশ বিভাগের প্রতিশোধ নিতে গান্ধিকেও খুন করেছিলো মোদি ভাইয়ের দল আরএসএস। জামায়েত যেমন অখন্ড পাকিস্তান চেয়েছিলো, অখন্ড ভারতে যে হিন্দু জাতীয়তাবাদি মুভমেন্ট, মোদিরাও চেয়েছিলো অখন্ড ভারত।

দেশ বিভাগের ক্রান্তিকালে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ খুন, প্রায় ৩০ লক্ষাধিক রিফিউজি এবং দুই দেশে যে ভয়ানক দাঙ্গা, যেন ৭১ এর আয়না।

দেশবিভাগ যারা চায়নি, যারা গান্ধিকে খুন করলো, তারাই আজ ভারতের ক্ষমতায়। গান্ধি থেকে গুজরাট গণহত্যা, বিজেপি একটি খুনির দল। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগ পর্যন্ত সন্ত্রাসীর তকমা গলায়, আমেরিকাতে নিষিদ্ধ ছিলো মোদি।

খুনিরা যদি ভারতের ক্ষমতায় যেতে পারে, জামায়াত নেতাদের জন্য ট্রাইবুন্যাল কেন? জামায়েতের বিরুদ্ধে অভিযোগ যদি সঠিক হয়, তাহলে অখন্ড ভারতের দাবিতে মোদিদেরও ফাঁসি হওয়ার কথা। নাথুরাম গডস্ সহ কয়েকজনের ফাঁসি হয়েছেও কিন্তু সবকটা হিন্দুস্তানী রাজাকারের হয়নি। হলে বিজেপি কখনোই ক্ষমতায় যেতে পারতো না।

আমরা শুধু নাথুরাম গডসের নামই শুনেছি কিন্তু অখন্ড ভারতের পক্ষে যে বিশাল মুভমেন্ট, কতোটুকু জানি? তারাও তখন ৭১ এর জামায়েতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলো।

বাস্তব যে, জহরাল নেহেরু সবকটাকে ট্রাইবুন্যাল করে ফাঁসি দেননি, একমাত্র নাথুরাম গডস্ সহ ১৩ জন বাদে। উল্টা জহরলালের কংগ্রেসকেই ফাঁসি দিয়ে বিজেপি এখন ক্ষমতায়।

আমার কথা মিথ্যা হলে ইতিহাস পড়েন। আমি না জেনে কোন কথা বলি না। যদি ৪৭ এর হিন্দু রাজাকারদেরকে ভারত খন্ড করার মুভমেন্টের বিরুদ্ধে ট্রাইবুন্যাল খুলে কাদের মোল্লা আর মীর কাশেমদের মতো ফাঁসি দেয়া না হয়, তাহলে অখন্ড পাকিস্তান রাখার পক্ষে আন্দোলনের জন্য মুসলিম রাজাকারদেরকে ফাঁসি দেয়ার যুক্তি নেই।

মোদির চাওয়া মীর কাশেমের চাওয়া ভিন্ন নয়। বিজেপি এখনো অখন্ড ভারতের স্বপ্ন দেখে। তাদের মানচিত্রে এখন পর্যন্ত অখন্ড ভারত।

হিন্দু জাতিয়তাবাদি দল আরএসএস গান্ধিকে খুন করেছিলো। ১৮ বছর বয়সে সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে ফেলে রেখে আরএসএসএ যোগ দিতে সন্ন্যাসী হয়ে যান মোদি। এরপর আর কখনোই স্ত্রীর কাছে ফেরেননি। স্ত্রী যশোদাবেন এখনও জীবিত কিন্তু মোদির সঙ্গে ন্যূনতম যোগাযোগহীন।

এদিকে রক্ষিতারা বলছে, ট্রাইবুন্যাল নাকি বন্ধ হবে না, বিচার চলবে। অর্থাৎ প্রথম থেকে সকল স্তরের রাজাকারদেরকেই ফাঁসি দেবে। এই থিওরি সত্য হলে, মোদিরাও কোন না কোন স্তরের হিন্দু রাজাকার। তাহলে ইতিহাস দুইরকম হলো কেন?

‘র’এর জন্য না হলে আওয়ামী লীগের অবস্থা হতো কংগ্রেসের মতো। জামায়াতসহ ২০ দল ক্ষমতায় এসে উল্টা আওয়ামী লীগকেই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতো, যেমনটি হয়েছে বিজেপি বনাম কংগ্রেসের বেলায়। এখন কংগ্রেসের লেজটুকুও দেখা যাচ্ছে না।

কিন্তু আওয়ামী লীগের ফেরাউন হওয়ার মূলে ৫ জানুয়ারিতে দিল্লির সরাসারি হস্তক্ষেপ। এই মুহূর্তে প্রয়োজন, উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষদের রাস্তায় নেমে আসা। অন্যথায় বাংলাদেশ হবে সিকিম। আমরা কি তাই চাই?

দুই ধরনের রাজাকারের মধ্যে ক) যারা ভারতের সঙ্গে পরামর্শ করে ৭১ ঘটিয়েছিলো। আমি স্বাধীনতার পক্ষে কিন্তু উপনিবেশবাদের বিপক্ষে।

যারাই ভারতীয় রাজাকার, সাড়ে ৬ কোটি (১ কোটি দেশত্যাগী) মানুষকে পাকিস্তানীদের হাতে ফেলে দিয়ে, নিজেরা পালিয়ে গেলো ভারতে। থিয়েটার রোডে বসে কিছুই করেনি, যা করেছে ভারতীয় সৈন্যরা। সঙ্গে রেখেছিলো কিছু মুক্তিযোদ্ধা।

যারাই চেতনার দাবিদার, একজনও কি বলতে পারবে তাদের কেউ শহীদ হয়েছে? বরং পাইকারি হারে শহীদ হয়েছে হিন্দুরাই। হিন্দু রাজাকারেরা গান্ধির সঙ্গে এইমর্মে চুক্তি করেছিলো, আওয়ামী লীগের সব নেতাই দেশ ছেড়ে পালাবে, আর যুদ্ধ হবে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের। মুজিবকেও সেইরকমই নির্দেশ দেওয়ায় ২৬ মার্চ স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ।

অর্থাৎ ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ, তাকে দোষ দেওয়ার কারণ নেই। কারণ সে তো দেশেই নেই।

৭১ শেষ না হতেই পাওনা আদায়ের তাগিদ। ৭৩ এর সিমলা চুক্তি দিয়ে, এখন সেটা হিমালয়ের আকার ধারণ করেছে। চুক্তি এখন আর টেবিলে হয়না, হয় ‘র’ এর মাধ্যমে নয়, ইন্টারনেটে। হিন্দু রাজাকারদেরকেই জয় হয়েছে।

দ্রুত বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ, ধারণ করছে ভারতের আকার। যে দিকেই তাকাই, সেদিকেই অন্যরকমের মানুষ, অন্য ভাষা, ভিন্নমত। ওদের মুখে বাংলাদেশের ৫ জানুয়ারির গণতন্ত্রের ভূয়সী প্রশংসা। কুকুর-বেড়াল ভোট দিয়েছে, সেই গণতন্ত্রও দিল্লির মুখে টমেটোর আচারের মতো। গণভবনে রাম মাধবদের বিকট হাসি আমাকে ১০ হাজার মাইল দূরে অসুস্থ করে তুলেছে। স্বাধীনতা যেন এক বাটি স্যুপ। স্যুপের মধ্যে শিম, বটবটি, ফুলকপির ঘণ্ট। বাটিতে কাউ কেউ আলাদা করে দেখা হয় না।

বাংলাদেশের অবস্থা ভালো না। এখন যে চেহারা, তৈরি থাকতে হবে, যে কোন মুহূর্তে অযাচিত ঘোষণার। মীর কাশেমের ফাঁসির হুকুম বহাল থাকার মাধ্যমে রাম মাধবদেরই জয় হলো।

লেখক:

মিনা ফারাহ

লেখক ও কলামিস্ট

নিউইর্য়ক প্রবাসী।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More