চমেকহা স্টাফ কো-অপারেটিভ সোসাইটি: কোটি টাকা লুটেপুটে খাচ্ছে চক্র

0

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (চমেকহা) স্টাফ কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের (মেডিকপস) নিয়ন্ত্রণাধীন সুপারশপ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয়ের টাকা লুটেপুটে খাচ্ছে একটি চক্র। সাধারণ সদস্যরা বলছেন, তাদের জানামতে সংগঠনের তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিমাসে আয় হয় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া একই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গোপনে আরও প্রায় দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। তবে ২২ মাস ধরে সংগঠনের ব্যাংক হিসাবে এক টাকাও জমা হয়নি। সদস্যদেরও দেওয়া হচ্ছে না বোনাস বা লভ্যাংশ। এই সময়ের মধ্যে আয় হওয়া এক কোটি টাকারও বেশি অর্থ নিজেরাই ভাগবাঁটোয়ারা করে সাবাড় করেছেন-এমন অভিযোগ সাধারণ সদস্যদের। এ কারণে নতুন কমিটির কাছে ক্ষমতাও হস্তান্তর করছে না চক্রটি।

অভিযোগ রয়েছে, সমবায় আইন অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির কাছ থেকে রেকর্ডপত্র উদ্ধারের জন্য জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সেই কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একাধিক সংগঠনের নামে ক্যান্টিন এবং বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়ে আসছে। এর মধ্যে হাসপাতালের পূর্ব গেটে অবস্থিত মেডিকপসের একটি সুপার শপ রয়েছে। এর দ্বিতীয় তলায় রয়েছে একটি ক্যান্টিন। এছাড়া সুপার শপসংলগ্ন আরেকটি ক্যান্টিন রয়েছে। এই তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে দৈনিক ১২ হাজার টাকা আয় হয়। এর মধ্যে সুপার শপের ভাড়া বাবদ আয় প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা এবং দুইটি ক্যান্টিন থেকে আয় হয় দৈনিক দুই হাজার টাকা। এই হিসাবে মাসে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় হয় সংগঠনের। নিয়মের তোয়াক্কা না করে সংগঠনের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মো. আনোয়ারুল ইসলাম টিপু এসব প্রতিষ্ঠান নিজেই পরিচালনা করছেন। তিনি ২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এক বছরেরও বেশি সময় আগে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু সাবেক এই দপ্তর সম্পাদক এসব প্রতিষ্ঠান নিজের কবজায় রেখে দিয়েছেন।

জেলা সমবায় কার্যালয় সূত্র জানায়, মেডিকপসের বিগত কমিটি ২০২১ সালের ডিসেম্বরে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করলেও ২০২১-২২ অর্থবছরের কোনো অডিট সম্পন্ন হয়নি। এর মধ্যে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ৭ মাস অতিবাহিত হয়েছে। অপরদিকে ২০২০-২০২১ অর্থবছর থেকে বিগত কমিটি সাধারণ সদস্যের মাঝে কোনো লভ্যাংশ বিতরণ করেনি। ২০২১ থেকে যেসব সদস্য চাকরি থেকে অবসরে গেছেন, তাদের শেয়ার ফেরত এবং এককালীন অনুদান দেওয়া হয়নি। ২০১৮ থেকে ২০২১ পর্যন্ত কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিন সদস্যের অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে সমবায় কার্যালয়। এরপর সেই কমিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে না পারায় গত বছরের এপ্রিলে অন্তর্বর্তী দ্বিতীয় কমিটি গঠন করা হয়। চার মাসের সেই কমিটি ৯ মাস ধরে দায়িত্ব পালন করছে বলে জানা গেছে।

২২ মাস ধরে ব্যাংক হিসাবে টাকা রাখা বন্ধ : অগ্রণী ব্যাংকের মেডিকেল কলেজ শাখায় মেডিকপসের একটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এই অ্যাকাউন্টে সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৪ মার্চ লেনদেন হয়েছে। ওইদিন ৩৫ হাজার টাকা জমা রাখা হয়। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ২২ মাস ধরে আর কোনো লেনদেন হয়নি। বর্তমানে মেডিকপসের ওই অ্যাকাউন্টে ১৮ লাখ ৭৩ হাজার ৩২৯ দশমিক ৩৮ টাকা রয়েছে। অ্যাকাউন্ট স্ট্যাটাস অ্যাকটিভ বা সচল থাকলেও সেই ব্যাংকে টাকা রাখা হচ্ছে না। সংগঠনের আয় ঢুকে যাচ্ছে ব্যক্তির পকেটে।

এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, আগের অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি আমাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার সময় অল্পকিছু টাকা দিয়েছিল। আমরা সেই টাকার হিসাব রেখেছি। আগে কী হয়েছে, এ ব্যাপারে আমাদের জানার কথা না। সুপার শপ এবং দোকানগুলো আগের কমিটির দপ্তর সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম টিপুর কাছে রয়েছে। এগুলোর ভাড়া অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. নাছির আহাম্মদ নগদে সংগ্রহ করেন। কী কারণে ব্যাংকে টাকা জমা রাখা হয় না, সেটিও আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মতিন মানিক বলেন, দুদকের অভিযানের পর আমরা ব্যাংকে টাকা রাখা বন্ধ করে দিই। তবে আমি দায়িত্বে থাকাকালে যে টাকা আয় হয়েছে, সেগুলো সদস্যের মাঝে বোনাস হিসাবে বণ্টন করে দিয়েছি। বাকি টাকা অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে বুঝিয়ে দিয়েছি।

৬ মাসেও দায়িত্ব বুঝে পায়নি বর্তমান কমিটি : গত বছরের ১১ আগস্ট মেডিকপসের ব্যবস্থাপনা কমিটি-২০২২-এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতি পদে মোহাম্মদ ইউছুফ ও সাধারণ সম্পাদক পদে সন্তোষ কুমার রুদ্র নির্বাচিত হয়েছেন। ওইদিন বিকাল সাড়ে ৪টায় চট্টগ্রামের জেলা সমবায় কার্যালয়ের উপসহকারী নিবন্ধক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিন্টু বড়ুয়া এই ফলাফল ঘোষণা করেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল অংশ না নেওয়ায় একটি প্যানেলের ১২ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বিজয়ীরা ফল ঘোষণার দিনই ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রথম সভা আয়োজন করে। কিন্তু মামলা এবং নানা ধরনের জটিলতায় নির্বাচিত কমিটি তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সংগঠনের অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি নির্বাচন নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করলে সেটিও খারিজ হয়ে যায়। সাধারণ সদস্যের স্বার্থরক্ষায় গত বছরের ২২ নভেম্বর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুনন্দা রায় অভিযান চালিয়ে সংগঠনের যাবতীয় খাতাপত্র ও রেকর্ডপত্র উদ্ধার করে নতুন কমিটিকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু নোটিশ দিয়ে জানানোর পরও সেই অভিযান এখনো পরিচালনা করা হয়নি। এ নিয়ে সাধারণ সদস্যদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে মেডিকপস সভাপতি মোহাম্মদ ইউছুফ বলেন, নিয়ম অনুযায়ী অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচিত কমিটিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার কথা, কিন্তু সেটি না করে উলটো এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেছে। আদালত সেটি খারিজ করে দিয়েছে। তবে মেডিকপসের বর্তমান কমিটি আগের কোনো ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নয়।

jugantor

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More