শরীয়তপুরে বান্ধবির পরিকল্পনায় বান্ধবিকে ধর্ষণ

0

sariyetpur-rapeশরীয়তপুর : শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার ছোট মূলনা গ্রামের স্কুল ছাত্রী চাদনী আক্তার (১৫) বুধবার সকালে খাবার না খেয়ে প্রতিবেশী ইসমাইল শিং এর মেয়ে সহপাঠী পাখি আক্তার (১৪) এর সাথে স্কুলের উদ্দেশ্যে যায় চাদনী আক্তার, একই এলাকার সহপাঠি পাখি আক্তারের সাথে স্কুলে যায় ১১মার্চ’১৫। ২ দিন পরে ১৩মার্চ চাদনির মৃতদেহ এলাকার খালের ঝোপঝার থেকে উদ্ধার হয়।

অজ্ঞাত আসামী করে জাজিরা থানায় মামলা করে নিহত চাদনীর বাবা আলী আজগর খাঁ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সন্দেহভাজন ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ২৩ জনকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

৪ জন আদালতে প্রেরন করা হয়েছে এবং আদালতের নির্দেশে জেল হাজতে রয়েছে। ছোট মূলনা গ্রামের আলী আজগর খাঁর ৫ সন্তানের মধ্যে চাদনী আক্তার তৃতীয়। চাদনীর বাবা আলী আজগর খাঁ ঢাকার শ্যাম বাজারের কাঁচা মালের খুচরা দোকান আছে।

চাদনী আক্তার ছোট মূলনা গ্রামের বাড়িতে মায়ের সাথে থাকত। লাজুক স্বভাবের চাদনী আক্তার পড়া-লেখায় ভালো তাই বাড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে জাজিরা বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে বাবা আলী আজগর খাঁ। চাদনী আক্তার এ বছর ৭ম শ্রেনীতে পড়তো।

চাদনী আক্তারও পড়া-লেখার মাধ্যমে মা-বাবার ইচ্ছা পূরনে আগ্রহী ছিল। তাই সকল বাজে অভ্যাস ত্যাগ করে পড়া-লেখায় মনোনিবেশ কারে। সহপাঠী পাখি আক্তারের পরিকল্পনায় বখাটেরা চাদনীকে ধর্ষনের পরে হত্যা করে এমনটাই দাবী এলাকাবাসীর।

চাদনী হত্যা মামলার এজাহার, পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১১মার্চ’১৫ বুধবার সকালে খাবার না খেয়ে প্রতিবেশী ইসমাইল শিং এর মেয়ে সহপাঠী পাখি আক্তার (১৪) এর সাথে স্কুলের উদ্দেশ্যে যায় চাদনী আক্তার।

টিফিন ঘন্টা দুপুর দেড়টার সময় সহপাঠী পাখির সাথে স্কুল থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে বাড়িতে আর ফিরে আসেনি চাদনী আক্তার। সহপাঠী পাখি আক্তারও চাদনীর না ফেরার কথা গোপন রাখে।
২ দিন পরে ১৩ মার্চ’১৫ শুক্রবার বিকাল পৌনে ৩টায় পাশবর্তী মূলনা গ্রামের মল্লিক বাড়ির পূর্ব পাশে শুকনা খালের ছিটকি গাছের ঝোপের নিচে চাদনির লাশ পাওয়া যায়। চাদনীর বাবা আলী আজগর খাঁ বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামা আসামীদের বিরুদ্ধে তার মেয়েকে পরিকল্পিত ভাবে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক ধর্ষন, শ্বাশরুদ্ধ করে হত্যার পরে লাশ গুম করার অভিযোগ এনে জাজিরা থানায় মামলা দায়ের করেছে।

স্থানীয় লোকজন ও চাদনীর পরিবার পাখি আক্তার সম্পর্কে বিরুপ ধারনা পোষন করে বলে, ‘পাখির সাথে অনেক ছেলেদের সম্পর্ক আছে। স্কুলে যাতায়াতের সময় অনেক ছেলেদের সাথে পাখিকে আড্ডা করতে কথা বলতে দেখা যেত, যারা পড়া-লেখা করে না।পাখির ভাই দুলাল/মিলন মাদবর বড় মূলনা গ্রামের কালাম তালুকদারের মেয়ে বিয়ে করছে।

সেকান্দার তালুকদারের ছেলে সুমন তালুকদার পাখির বিয়াই। পাখির বিয়াই সুমন তালুকদারের বন্ধুরা হলো একই গ্রামের রাজ্জাক বেপারীর ছেলে মাসুদ বেপারী, খালেক তালুকদারের ছেলে অসিম তালুকদার, দিলু ঢালীর ছেলে সোহেল, আজিজ ঢালীর ছেলে জুয়েল ঢালী ও তাদের সমবয়সী বখাটে দল ।

যাদের একমাত্র কাজই বখাটে ও বেহায়াপনা করা, আর তাদের সাথে পাখির সম্পর্ক ছিল। শীতকালে ঘন কুয়াশা পড়লে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের যাওয়ার পথে উত্যাক্ত করতো। কখনো বখাটেরা ছাত্রীদের সামনে বিবস্ত্র অবস্থায় দাড়িয়ে থাকত। স্কুলে যাতায়াতের সময় পাখি আক্তার তাদের সাথে কথ বলতো আড্ডা করতো। চাদনী এসব পছন্দ করতো না।

তাই পাখি পরিকল্পিত ভাবে সুকৌশলে ঐসব বখাটেদের দিয়ে চাদনীকে এই লোমহর্ষক ধর্ষন পরবর্তি হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের’ ।

নিহত চাদনীর চাচা মো. দীন ইসলাম জানায়, ‘বড় মূলনা এলাকার ছেলেরা চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং এসকল কাজকর্ম হরহামেসা করে থাকে। আর এসবের মদোদদাতা ও সহায়তাকারী ইব্রাহীম মাদবর (মাস্টার)। ইব্রাহীম মস্টার জাজিরা মোহর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরী করতো।

ঐ প্রভাবে সে অপরাধীদের সহায়তা করে।আজ যারা চাদনী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের অনেকের পক্ষে ইব্রাহীম মাস্টার থানায় সুপারিশ করেছে। গত বছর ইমরান মল্লিককে হাত-পা বেঁধে মুখে গামছা ঢুকিয়ে মোবাইল, টাকা নিয়েছে আজ যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তারা।

ইব্রাহীম মাস্টার তাদের সমাজের মুরব্বি। অপরাধীদের বিচার না করে ইমরান মল্লিককে টাকা, মোবাইল ফিরত দিয়েছে ইব্রাহীম মাস্টার। ইব্রাহীম মাস্টার একজন শিক্ষিত লোক হয়ে সকল অপকর্মের সহায়তা করে আমরা তাকে ঘৃনা করি।’

নিহত চাদনীর বাবা আলী আজগর খাঁ জানায়, ‘পাখি আক্তার আমার মেয়ে চাদনীকে পরিকল্পিত ভাবে ধর্ষন করাইয়া হত্যা করিয়েছে । যাদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তারা সবাই পাখির বিয়াই ও আত্মীয়।পাখির ভাই দুলালের স্বাশুরী আমার মেয়ে চাদনীকে ১১ মার্চ বুধবার স্কুল থেকে ফেরার সময় তাদের বাড়িতে দেখেছে, যা পুলিশের কাছে বলেছে।

পাখির বিয়াই আসামী সুমন তালুকদার তার সহযোগীদের নিয়ে কৌশলে চাদনীকে আটকে রাখে। পরে ধর্ষন করে আমার মেয়েকে ওরা মেরে ফেলেছে।পাখিকে ডিবি পুলিশে জিজ্ঞাসা বাদের সময় আমি ডিবি অফিসে ছিলাম। একজন বিবাহিত মেয়ের গায়ে যে ধরনের আলামত থাকে পাখির গায়েও তেমন ছিল।

কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, পাখিরতো বিয়ে হয় নাই। আসামী জুয়েল ঢালীর বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ঘরে চাদনীর ওড়না, রশি, রক্ত ও পুরুষ মানুষের জামা রক্তমাখা পাওয়া গেছে। আমার মেয়ে যদি আগে বুঝতে পারতো তাহলে পাখির সাথে স্কুলে যেতো না। আল্লায় আমার মেয়েকে এমন বুঝ আগে দিলো না কেন? তাহলে আমার মেয়েটা এমন পরিনতি হতো না’।

চাদনী হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জাজিরা থানা পুলিশ উপ-পরিদর্শক মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, চাদনী হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন ২৭ জনকে আটক করা হয়েছে।

এদের মধ্যে ২৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়। ৪ জন জেল হাজতে আছে। তাদেরকেও রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। চাদনী আক্তারকে বাড়ি থেকে ডেকে নেয় পাখি আক্তার, তাকেও বিভিন্ন পর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মামলা তদন্তাধীন আছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More