দুই কিশোর নির্যাতনে সেনা ও পুলিশ সদস্যের সম্পৃক্ততার অভিযোগ

0

kishorরাজশাহীর পবায় জাহিদ হাসান ও ইমন নামে দুই কিশোরকে হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে সেই দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করেছে দুর্বৃত্তরা। মোবাইল চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ে পবার চৌবাড়িয়া এলাকায় শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা অব্দি ওই দুই কিশোরকে পেটানো হয়।
নির্যাতনের ঘটনায় সাগর নামের একজন পুলিশ ও নাসির উদ্দিন নামের একজন সেনা সদস্যের সম্পৃক্ততা অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পর অন্য অভিযুক্তদের মত তারাও পলাতক রয়েছেন। ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন ওই দুই সদস্য।
নির্যাতনের শিকার জাহিদ হাসান বর্তমানে পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। জাহিদ একই উপজেলা বাগসারা এলাকার মো. ইমরানের ছেলে। সে বাগসারা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র। তবে এই ঘটনার পর ইমনের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় শনিবার রাতে পবা থানায় মামলা দায়ের করেন জাহিদের বাবা। ওই মামলায়  রাতেই আজিজুল ইসলাম (৪৫) নামের এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আহত জাহিদের বাবা ইমরান সাংবাদিকদের বলেন, তার ছেলে গত শুক্রবার দুপুরে নানার বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলো। এ সময় রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক থেকে জাহিদ হাসানকে ধরে আনে ওই এলাকার নাসির উদ্দিন, সাগর, পলাশ, জামাল, রাজ্জাক, অনিক ও তুহিনসহ আরো কয়েকজন। পরে তারা ওই এলাকার ফজলুর বারীর ঘরের মধ্যে বিছানায় ফেলে হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে জাহিদকে নির্যাতন করে।
রাত ১০টা পর্যন্ত তার ওপর চলে চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য মারপিট। নির্যাতনের ওই দৃশ্যর ভিডিও ধারণ করা হয়। কিন্তু মোবাইল চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার না করায় জাহিদকে তার (বাবা) কাছে তুলে দেয়া হয়। পরে গুরুতর অবস্থায় জাহিদকে পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেন তিনি।
ইমরানের অভিযোগ, এ ঘটনাটি যেন কাউকে না জানানো হয়, এ জন্য তার পরিবারকে নানাভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে। এর আগে একটি সাদা কাগজেও স্বাক্ষর নিয়ে নিয়েছেন ফজলুর বারীর ছেলে রাকিবসহ অন্য নির্যাতনকারীরা।
আহত জাহিদ হাসানের অভিযোগ, শুক্রবার সকালে ফজলুর বারীর ছেলে রাকিবের একটি মোবাইল চুরি হয়। ওই চুরির ঘটনায় এলাকার ইমন নামের ১২ থেকে ১৩ বছরের এক শিশুকে ধরে নিয়ে যায় ফজলুর বারীর পরিবারের লোকজন। এরপর তারা ইমনকে মারধোর করে। ইমন তখন ওই মোবাইল চুরির সঙ্গে জাহিদও জড়িত বলে অভিযোগ করে। এরপর তাকেও (জাহিদ) ধরে নিয়ে গিয়ে ফজলুর বাড়ির লোকজন মারপিট করে। নির্যাতনকারীদের মধ্যে সেনা সদস্য নাসির উদ্দিন ও পুলিশ সদস্য সাগর ছিলেন বলেও জানায় জাহিদ।
নির্যাতনের শিকার অন্য শিশু ইমনের বাবা-মা বেঁচে নেই। সে দাদা মকবুল হোসেনের বাড়িতে থাকতো। রোববার সকালে ইমনের দাদা মকবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর থেকে তারা ইমনকে আর কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না।
যোগাযোগ করা হলে সেনা সদস্য নাসির উদ্দিন নির্যাতনের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি সঠিক নয়। আমি কাউকে মারিনি।’ তবে পলাতক থাকায় অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে সেনা সদস্য নাসির উদ্দিন ও পুলিশ সদস্য সাগরসহ অন্যান্যদের নির্যাতনে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, নির্যাতনের সময় তোলা ভিডিওতে তাদের দেখা যাচ্ছে। এদের মধ্যে সেনা সদস্য নাসির বগুড়ার জাহাঙ্গীরাবাদ ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত। আর পুলিশ সদস্য সাগর কোথায় কর্মরত তা জানা যায়নি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানানো হয়েছে বলে জানান ওসি।
ওসি আরো বলেন, এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামি আজিজুলকে রাতে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রোববার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলেও জানান ওসি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More