১২ ট্যাহা কেজির ধান, প্রতি কেজি চাল কিনে খাই ৪০-৪২ টাকায়। আমি ঋণগ্রস্থ কৃষক এ বছর ২ একর জমি করতে সুদে ২০ হাজার ট্যাহা ঋণ করেছি। এ কথাগুলো বলছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার মৃগা ইউনিয়নের লাইমপাশা গ্রামের কৃষক শরিফ উদ্দিন। তিনি জানান, ঋণের টাকা খলা (ধান মাড়াই ও শুকানোর স্থান) থেকে ধান কম দাম (প্রতি মণ ৪৭০ টাকা) বিক্রি করে ২০ হাজার টাকার সুদসহ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি।
জমির সব খরচ দিয়ে আমার হাতে আছে ১০ হাজার টাকা। কেমনে কি করব? দুইদিন পরেই আবার বেশি দামে চাল কিনতে হইব। কিশোরগঞ্জের হাওরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জমি চাষাবাদ থেকে শুরু করে ধান ঘরে (বাড়ি) নিয়ে আসা পর্যন্ত প্রত্যেক কৃষকের কিছু কিছু ঋণ রয়েছে। সেই ঋণের টাকা আবার ধান বিক্রি করে খলা থেকেই পরিশোধ করতে হয়। ঋণগ্রস্থ কৃষকরা ঋণের টাকা পরিশোধ করে ২০ থেকে ২৫ মণ ধান ঘরে তুলছে। আবার অনেকেই ধান সিদ্ধ করে চাল তৈরি করে ঘরে তুলছে। কিন্তু সে চালে পুরো (সম্পূর্ণ) বছর শেষ না হওয়াতে প্রতি বছরের ফাল্গুন-চৈত্র মাসে চারগুণ বেশি দামে সেই চাল কিনে খেতে হয়। আরো জানা যায়, প্রতি দেড় কেজি ধান (বর্তমান দাম ১৮ টাকা) থেকে ১ কেজি চাল (বর্তমান দাম ৩২ টাকা) হয়। ভাদ্র-আশ্বিন মাস থেকে সেই চালের দাম হবে ৩৮-৪০টাকা। আর ফালগুন-চৈত্র মাস থেকে প্রতি কেজি হবে ৪০-৪৫ টাকা। কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বি, আর-২৮, বি-আর-২৯ চালের বেশি পাওয়া যায়। বর্তমানে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে পুরাতন বি, আর-২৮, বি-আর-২৯ প্রতি কেজি ৩০-৩৩ টাকা। আর মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৪৫-৫০ টাকা, নাজিরশাইল চাল প্রতি কেজি ৪৫-৫০ টাকা। জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার বাঙ্গালপাড়া গ্রামের আরেক ঋণগ্রস্থ কৃষক নবাব মিয়া জানান, ঋণের কারণে যে ধান আমরা বিক্রি করে দিচ্ছি, সেই ধানেই চাল হয়ে আবার আমাদের কাছে ফিরে আসে। তখন আমাদের চারগুণ বেশি দামে কিনতে হয়। কারণ ভাত খেতে তো হইবো। তিনি আপে করে বলেন, আমরা এ দুঃখ-কষ্টের অবসান চাই। বৈশাখ মাস থেকে যদি প্রতি মণ ধানের দাম ৬০০-৭০০ টাকার ভেতরে থাকে, তাহলেও আমরা কিছুটা সুখে দিন কাটাতে পারব। জেলার বাজিতপুর উপজেলার সরারচর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের জয়কালী রাইস মিলের মালিক অর্জুন সাহা জানান, ধানের দাম কম থাকায়, কৃষকরা ধান বিক্রি না করায়। ধান কিনতে পারছি না। তাই বর্তমানে আমার স্টকে নতুন ধান নাই। ধানের দাম বাড়লে ধান কিনে চাল তৈরি করা শুরু করব। কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অমিতাভ দাস জানান, সরকার গত রোববার থেকে চাল আমদানিকারীদের ১০% শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে করে মিল মালিকরা বাইরের দেশ থেকে চাল আমদানি বন্ধ করে দিলে দেশে থেকে ধান ক্রয় করা শুরু করবে। তখন ধানের দাম বেড়ে গিয়ে ধান আর চালের দামের মধ্যে পার্থক্য থাকবে না।