সামষ্টিক অর্থনীতির গতিধারা শ্লথ থাকার কারণে আগামী অর্থবছরের জন্য কৌশলগত বাজেট প্রণয়ন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিনিয়োগ, উন্নয়ন এবং বেসরকারি খাতের আস্থা অর্জনই হবে এই বাজেটের মূল লক্ষ্য।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নতুন অর্থবছরের বাজেটকে প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং যানজট মোকাবিলার মতো বড় দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। পদ্মা সেতু, উড়ালসড়ক এবং মেট্রোরেলের মতো বড় বড় উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ পড়ে থাকছে পথেই। শিল্পায়ন এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ থাকছে অক্টোপাসের মতো। সব মিলিয়ে বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ নিয়েই সংসদে যাচ্ছে বাজেট।
দশম সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন বসেছে গত ৩ জুন।আজ ৫ জুন বৃহস্পতিবার সংসদে পেশ হবে নতুন ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট। বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে ২ লাখ ৫০ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি থাকতে পারে প্রায় ৬৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে ৮৬ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ব্যয়।অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার বাজেট তৈরি করবেন তিনি। এবার অনেকাংশে অনুন্নয়ন ব্যয়ের কাছাকাছি রাখা হবে উন্নয়ন ব্যয়ের টাকার অঙ্ক। দেশজ মোট উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা থাকবে তাতে। নানা কারণে গত এক দশকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ থেকে ৬ শতাংশের ওপরে উঠতে পারছে না বলে এই ব্যবস্থা।এই বাজেটে থাকছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার মত কঠিন কাজও।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণেই প্রতিবছর বাজেট বাস্তবায়ন অসম্ভব হচ্ছে। অগ্রাধিকারভিত্তিক ১০টি মন্ত্রণালয়ে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প থাকে, তার অর্ধেক কাজও শেষ হয় না শুধু কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে। এতে বছরের মাঝামাঝিতে এসে বাজেট সংশোধন করতে হয়। অবশেষে সংশোধিত বাজেটের অর্থ কাজের নামে লুট করে কোনোমতে কাগজে-কলমে বাস্তবায়নের একটি শতকরা হার প্রকাশ করা হয়। বাস্তবে হয় না তেমন কিছুই।চলতি অর্থবছরের বাজেট ছিল ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার। শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের বাস্তবায়ন অজ্ঞতার কারণে সাত মাসের মাথায় এসে এই অঙ্ক থেকে ১১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা ছেঁটে ফেলা হয়েছে। এবার এই অজ্ঞতা দূর করার চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির হিসাবমতে, প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা মূল্যের কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় যানজটে। অথচ যানজট নিরসনে রয়েছে নানা প্রকল্প। সরকারের জনপ্রিয়তার ভাটা রোধ করতে নতুন বাজেটে নিত্যকার এই নরকযন্ত্রণা ঘোচানোর জোর প্রচেষ্টা থাকবে।
নতুন বাজেটে পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৮ হাজার ১২০ কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এটা। নতুন অর্থবছরেই এর কাজ শুরু করতে বদ্ধপরিকর সরকার।
একই সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে মেট্রোরেল এবং উড়ালসড়কের কাজও এগিয়ে নিতে নানা পরিকল্পনা থাকছে বাজেটে।
সামাজিক নিরাপত্তা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিল্পায়ন, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাত অগ্রাধিকার পাবে এবারও।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে ১২ লাখ নতুন করদাতা সৃষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাড়ানো হবে করের আওতা। তবে করের হার বাড়ানো হচ্ছে না। নতুন নতুন কর খাত সৃষ্টি করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
একদিকে দেশের সার্বিক উন্নয়ন অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর কৌশল নিয়ে প্রণয়ন হয়েছে বাজেট। অঙ্কের হিসাবে এটা একটি বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব হলেও এবারই রাজনৈতিক গুরুত্ব পাচ্ছে এটি। যে কারণে বাজেট শুধু চ্যালেঞ্জ নয়, মহাচ্যালেঞ্জ হয়েও উঠতে পারে বলে মনে করছেন বাজেট বিশ্লেষকরা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মিজ্র্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজেটের আকার বড় হোক কিংবা চ্যালেঞ্জের হোক, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। মূল কথা হচ্ছে, বাজেট হতে হবে বাস্তবায়নযোগ্য। বাস্তবায়নই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এমন বাজেট প্রণয়ন করা দরকার, যা সহজেই বাস্তবায়ন করা যায়। কারণ, বাস্তবায়ন না হলে দেশের সার্বিক উন্নতি আদৌ সম্ভব নয়।
বাজেট বিশ্লেষক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, এবার বাজেটে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জিং খাত রয়েছে। টাকার অঙ্কও বেশি। অনেকটা উচ্চাভিলাষী। বিগত বাজেটগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ার মূল কারণগুলো সরকার বের করতে পারেনি। সেসব কারণের সুরাহাও করেনি। যে কারণে নতুন বাজেটও বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মতো চ্যালেঞ্জ থাকতে হবে বলে মনে করেন তিনি।