[ads1]‘বাংলাদেশে কল্যাণমুখি ব্যাংকিং ধারার প্রবর্তক’ শ্লোগান নিয়ে সর্বপ্রথম ইসলামী ব্যাংকিংয়ের সূচনা করে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। সুদভিত্তিক অর্থনীতির বিরুদ্ধে গিয়ে মুনাফাভিত্তিক ব্যাংকিং চালু করার জন্য তাদের এই উদ্যোগ। বর্তমানে ব্যাংকটিতে রয়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী। কিন্তু এদের মধ্যে প্রায় চৌদ্দশত কর্মচারী চাকরি হারোনোর শঙ্কায় ভুগছে এখন। নানান প্রক্রিয়ায় এদেরকে ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে।
ব্যাংকটিতে নিজের একচ্ছত্র অধিপত্য ও বিভিন্ন সুবিধাবাদী লোকের প্রভাব বিস্তারের ব্যবস্থা করতেই এমন কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি) আবদুল মান্নান। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
একটি দক্ষ ও নিবেদিত প্রাণ জনবল নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল ইসলামী ব্যাংক। যাদের নিরলস শ্রম ও ঘামের উপর ভিত্তি করে এ ব্যাংকটি দাঁড়িয়ে আছে তাদের মধ্য থেকেই প্রায় এক হাজার চারশ’ কর্মীকে ছাঁটাই করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দেশের সর্ববৃহৎ এই বেসরকারি ব্যাংকটিতে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপকহারে লুটপাটের প্রবণতা শুরু হয়েছে। লুটপাটকারীদের জন্য বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন ব্যাংকটির এই নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা। আর সেই কারণেই এদের ছাঁটাইয়ের উদ্যোগটি নিয়েছেন ব্যাংকটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল মান্নান। যিনি সম্প্রতি সরকারের প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে যোগসাজশে তার মেয়াদ তৃতীয়বারে মতো বাড়াতে সক্ষম হয়েছেন।[ads1]
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকের এমডির নির্দেশে ইতিমধ্যে একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ঠিক কি অভিযোগে তাদের চাকুরিচ্যুত করা হবে তা নিয়ে এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে সূত্র বলছে, অভিযোগ যা-ই হোক তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে ব্যাংক ছাড়তে হবে এটা অনেকটা নিশ্চিত। এ নিয়ে ব্যাংকটিতে চলছে নানান হিসাব-নিকেষ। চলছে অস্থিরতা। যাদের তালিকা করা হয়েছে, তারা এ নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আইটি বিষয়ে অদক্ষতা, শারীরিক অসুস্থতা, ডায়বেটিস, উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা অধীনস্থদের অতিরিক্ত খাটাতে না পারা ইত্যাদি বিভিন্ন ভুয়া অভিযোগ দিয়ে তাদের আনফিট বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। তাদের সার্ভিস রেকর্ড (এসআর) ইচ্ছে করেই নেতিবাচক রিপোর্ট দিচ্ছেন ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, একাগ্রতা, সততা থাকা সত্ত্বেও তাদের বলা হচ্ছে ‘দে আর নট অ্যাসেট নাউ, দে আর লায়্যাবিলিটি ফর দ্যা ব্যাংক’(তারা এখন আর ব্যাংকের জনশক্তি নয়, এখন তারা ব্যাংকের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে)। সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবেই এ ধরনের মিথ্যা কথা বলা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে এরকমের গায়েবি অভিযোগ দিয়ে দীর্ঘ দিনের বিশ্বস্ত কয়েকশ’ কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। ছাঁটাইয়ের মাত্রা বেশি হওয়া শুরু করলে তখন সবাই একযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বিভিন্ন জায়গায় তারা কথা বলেন। যা গোটা ব্যাংক পাড়ায় আলোচনার জন্ম দেয়। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে এই গণ-ছাঁটাই বন্ধ করতে বাধ্য হন ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান এমডি।[ads1]
কিন্তু এখন নতুন কৌশলে তাদের পদত্যাগ করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। তাদের উপর নানাভাবে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ভিন্ন বিভাগে বদলি, কাজের চাপ বাড়িয়ে দেওয়া, বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করতে বলা ইত্যাদি।
তবে সূত্র জানিয়েছে এসবের পেছনে মূল কারণ হচ্ছে, যাদের নামের তালিকা করা হয়েছে তাদের অধিকাংশের রয়েছে মাদ্রাসা সার্টিফিকেট। পাশাপাশি প্রচলিত শিক্ষার সার্টিফিকেট থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।
এখানেই শেষ নয়। মানসিক নির্যাতনের অংশ হিসেবে অফিসার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাঞ্জাবি ও টুপি পরতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ব্যাংকের পক্ষ থেকে। শুধু ব্যাংকটির শরীয়াহ কাউন্সিল বিভাগের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিল আছে।
অভিযোগ উঠেছে, দাঁড়ি না রাখা কর্মকর্তাদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। তাদেরকে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে দেওয়া হচ্ছে। পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন।
এর বাইরে আরো একটি তালিকা করা হয়েছে, যারা পারিবারিকভাবেই ইসলামের অনুসারী। তাদেরকে বলা হচ্ছে অন্য কোন ব্যাংকে চেষ্টা করতে। অতিরিক্ত নিপীড়নের কারণে ইতিমধ্যে বেশ কিছু কর্মকর্তা অন্য ব্যাংকে নিয়োগ নিতে চেষ্টাও শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রতিটি কর্মীর কাছ থেকে নতুন কিছু তথ্য নেওয়া হয়েছে। চাকরিতে যোগদানের সময়েই সবতথ্য দেওয়া হয়েছে। তারপরেও অনেকটা অযৌক্তিভাবেই পারিবারিক এবং আত্মীয় স্বজনের কিছু তথ্য নেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও এমডি তার অনুগত সিনিয়র কর্মকর্তাদের দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এসবের মাধ্যমেই বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক বড় তালিকা তৈরি করা হয়েছে ছাঁটাই করার জন্য।[ads2]
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, শুধুমাত্র নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদেরই ছাঁটাইয়ের জন্য টার্গেট করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে কোনো রকমের অনৈতিক কার্যকলাপের নজির বা অভিযোগ নেই। এমনকি বলা যায়, বর্তমানে ব্যাংকটি টিকে আছে এদের দক্ষতা, সততা এবং একাগ্রতার উপর। যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ দেশের গোটা ব্যাংকিং খাতের নৈতিকতায় ধ্বস নেমেছে, সেই পরিস্থিতিতেও ইসলামী ব্যাংক টিকে ছিলো যাদের প্রাণান্ত প্রচেষ্টায়, তাদেরই ছাঁটাইয়ের জন্য তালিকা করা হয়েছে। আর এ কারণেই গোটা ব্যাংকটিতে চলছে এখন অস্থিরতা।