দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ‘হাতিয়ে’ নিয়েছে। ইনল্যান্ড বিল পার্চেজের (আইবিপি) ছায়ায় গ্রুপটির সাত প্রতিষ্ঠান এ কাজটি করেছে। দেশের ইতিহাসে এমন নজীরবিহীন দুর্নীতি আর হয়নি। এর আগে হলমার্কের দুর্নীতির খবর নিয়ে দেশে বিদেশে ব্যাপক তোলপাড় হয়। সেই রেকর্ড কে এবার ছাড়িয়ে গেল এস আলম গ্রুপ।
জমা পড়া একটি অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত করতে গিয়ে বিশাল এই আর্থিক কেলেঙ্কারির খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। গত ১৯ আগস্ট বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্তও নিয়েছিল দুদক। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এরপর আর কোনো অগ্রগতি নেই।
দুদকের দায়িত্বশীল কয়েকটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানোর জন্য কমিটি গঠনের কথা থাকলেও তিন মাসেও তা হয়নি। প্রভাবশালী একটি মহলের চাপে সবকিছু থেমে আছে। এ ক্ষেত্রে তারা সামনে আগাতে একেবারে অপারগ।
সুত্রগুলো আরো জানায়, উচ্চ মহলটি এস আলমের দুর্নীতির বিষয়টি শুধু নথিভুক্ত করে রেখে ধামাচাপা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে চলেছে।
ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে হলমার্ক গ্রুপের দুই হাজার ৬০০ কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাতের ঘটনা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। ঘটনাটিকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেংকারি হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। এস আলম গ্রুপের এই কেলেঙ্কারি হলমার্ককেও ছাড়িয়ে গেছে।
তবে এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান (গণমাধ্যম) আবদুল কাদের দুর্নীতির এহেন অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তিনি পরিবর্তনের কাছে দাবি করে বলেন,”এখানে কোন অনিয়ম হয়নি। একটি চক্রান্তকারী গ্রুপ বিভিন্নভাবে এস আলম গ্রুপের বিপক্ষে কুৎসা রটাচ্ছে।”
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১২ সাল পর্যন্ত জনতা ব্যাংক নিয়ম বহির্ভূতভাবে এস আলম গ্রুপের সাতটি প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ১২ কোটি টাকা মূল্যে জমির বিপরীতে এক হাজার ৯৩২ কোটি ৯২ লাখ টাকা ঋণ ছাড় করে। কিন্তু ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, এ পরিমাণ টাকা ঋণ ছাড় করতে দুই হাজার ৫৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকার সম্পত্তি বন্ধক রাখতে হতো। নিয়ম অনুযায়ী সম্পত্তি বন্ধক না রেখে এস আলম গ্রুপ ও ব্যাংক কর্মকর্তারা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে বিপুল অঙ্কের ওই ঋণ ছাড় করে। এছাড়া ঋণের টাকা ১৮০ দিনের মধ্যে শোধ করার নিয়ম থাকলেও এস আলম গ্রুপ নিয়মিত এ সময় বাড়ানোর চেষ্টা করে এবং এক পর্যায়ে খেলাপি হয়। দুদক কর্মকর্তারা অভিযোগটি যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করলে আইবিপিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা অনিয়মের খোঁজ পান।
গ্রুপটির যে সাতটি প্রতিষ্ঠান অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংকটি থেকে ঋণ নিয়েছে সেগুলো হচ্ছে- এস আলম ট্রেডিং কর্পোরেশন, এস আলম রিফাইনড সুগার, এস আলম সুপার ওয়েল, এস আলম কোল্ড রোল স্টিল, এস আলম ভেজিটেবল ওয়েল এবং এস আলম পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড।
জানা গেছে, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা, আগ্রাবাদ শাখা, রূপালী ব্যাংক আন্দরকিল্লা শাখা, লালদীঘির পূর্বপাড় শাখা, খাতুনগঞ্জ শাখা, আমিন মার্কেট শাখা, জনতা ব্যাংক লালদীঘির পাড় ও আগ্রাবাদ শাখা, অগ্রণী ব্যাংক লালদীঘির পাড় শাখাসহ সেখানকার আরো একটি শাখা থেকে এসব টাকা নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, এস আলম গ্রুপ কয়েক হাজার ব্যাংক হিসাব খুলেছে। ওই সব হিসাবে বিভিন্নভাবে টাকা লেনদেন হচ্ছে। তারা ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ধরনের ঋণ নেয়া ছাড়াও এলসি, এলডিআর করা, বিল ইস্যুকরণসহ বিভিন্নভাবে ঋণ নিচ্ছে। বন্ধক বা এলসির বিপরীতে ছাড় করা প্রায় প্রতিটি ঋণের পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকা।সূত্রটি আরো জানায়, এস আলম গ্রুপের নামে এলসি, বিল ও ঋণের ক্ষেত্রেও অনেক অনিয়ম রয়েছে।
যদিও এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান (গণমাধ্যম) আবদুল কাদের দিবারতা.কমকে জানান,”বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে কোন অনিয়ম বের হয়নি। সকল রিপোর্ট আমাদের পক্ষে এসেছে। তারা কোন অনিয়ম পায়নি।”