ঢাকা: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তাদের ৩২ শতাংশই পথচারী। আর প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি হচ্ছে, তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৬ শতাংশের সমান।
বিশ্বজুড়ে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে সোমবার জেনেভায় প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন হওয়ার পরও দুর্ঘটনায় ঝরে যায় সাড়ে ১২ লাখ প্রাণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক মার্গারেট চ্যান বলেন, ‘দরিদ্র দেশগুলোতে গরিব মানুষের মধ্যে এই হার অনেক বেশি, যা মেনে নেয়া যায় না।’
পুলিশের নথিভুক্ত দুর্ঘটনাগুলোর পরিসংখ্যান হিসাব করলে ২০১২ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ২ হাজার ৫৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, এই সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৩১৬ জন, অর্থাৎ ওই বছর প্রতি এক লাখ লোকের মধ্যে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে সড়কে।
নিহতদের এই হিসাবের মধ্যে ৩২ শতাংশ পথচারী আর ২৮ শতাংশ প্রাইভেট কার বা চার চাকার কোনো হালকা বাহনের আরোহী ছিলেন।
অবশ্য জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিশ্বে যানবাহনের সংখ্যা বাড়লেও দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা গত কয়েক বছর ধরে মোটামুটি স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে যেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার ৫৪ শতাংশ, সেখানে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে ৯০ শতাংশ।
বিশ্বের ১০৫টি দেশে ‘গুড সিট বেল্ট’ আইন রয়েছে। ৪৭টি দেশে গতিসীমা আইন, ৩৪টি দেশে ‘ড্রিংক ড্রাইভিং’ আইন, ৪৪টি দেশে ‘হেলমেট’ পরার বাধ্যবাধকতা বিষয়ক আইন বলবৎ রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির মধ্যে ২৩ শতাংশই মোটরসাইকেল আরোহী।
এতে বলা হয়েছে, গত তিন বছরে বিশ্বের ৭৯টি দেশে দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আগের তুলনায় কমে এসেছে। তবে বেড়ে গেছে ৬৮টি দেশে। যেসব দেশে দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা কমেছে, সেখানে সাফল্য এসেছে প্রয়োজনীয় আইন তৈরি ও তার বাস্তবায়ন এবং সড়ক ও যানবাহন আরও নিরাপদ করার মাধ্যমে।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক মার্গারেট চ্যান এই অগ্রগতিকে ‘মন্থর’ বলে মনে করেন।