দেশের আকাশে কোথাও পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে আগামী বৃহস্পতিবার সারাদেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। ফলে দেখা যাচ্ছে ঈদের কেনাকাটার জন্য আরও একদিন সময় পাচ্ছেন রাজধানীবাসী। ইতোমধ্যে অধিকাংশ পরিবার ঈদের মূল আকর্ষণ জামাকাপড় কেনার পর্ব শেষ করে ফেলেছে। এবার জুতার পালা। নতুন পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে নতুন জুতার খোঁজে দোকান থেকে দোকানে ছুটছেন নগরীর ফ্যশনপ্রিয়রা।[ads1]
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, নিউ মার্কেট,ফার্মগেটসহ বিভিন্ন মার্কেটে দেখা যায়, বৈচিত্র্যময় ডিজাইন আর দামের কারণে দেশি কোম্পানির জুতার প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। ফলে দেশি জনপ্রিয় জুতার ব্র্যান্ড শপগুলোতে দেখা গেছে চোখে পড়ার মতো ভিড়। পিছিয়ে নেই দেশি নন ব্র্যান্ডের দোকানগুলোও। পাশাপাশি চীন, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান থেকে আমদানি করা জুতা-স্যান্ডেলের চাহিদা রয়েছে এক শ্রেণির ক্রেতার কাছে।
বিক্রেতারা জানান, এবারের ঈদ বর্ষার মৌসুম হওয়ায় ফরমাল সু বিক্রি হচ্ছে কম। পরিবর্তে পুরুষ ক্রেতাদের কাছে স্যান্ডেল, স্লিপার, লোফার ও ক্যাজুয়াল জুতার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। মহিলাদের পছন্দ আকর্ষণীয় ডিজাইনের হাই হিল, সেমি হিল, ফ্লাট স্যান্ডেল।
এলিফ্যান্ড রোড, নিউমার্কেট, ফার্মগেটের ছোট আকারের দেশি জুতা-স্যান্ডেলের দোকানে নারী-পুরুষের ৫৫০ টাকা থেকে ১ হাজার বা ১২০০ টাকার মধ্যে মোটামুটি ভালোমানের স্যান্ডেল পাওয়া যাচ্ছে। জুতা পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে।
এলিফ্যান্ট রোডের ফ্যালকন সু এর বিক্রয় কর্মী জুবায়ের হোসেন অর্থসূচককে জানান, আমরা বেশিরভাগ জুতা সংগ্রহ করি দেশের বিভিন্ন কারখানা থেকে। পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে চীন ও তাইওয়ান থেকে আমদানি করা কিছু জুতাও আছে। তিনি বলেন, ছেলেরা জিন্সের সাথে ম্যাচ করে স্লিপার পরলেও এবার বৃষ্টির কারণে লোফারের চাহিদা বেশি। সাধারণত মধ্যবিত্তরাই এসব দোকানের ক্রেতা বলে জানান এই বিক্রয় কর্মী।
নিউমার্কেটে জুতা কিনতে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নোভা রহমান জানান, পোশাক কেনা হয়েছে অনেক আগেই। এখন পোশাকের রঙ এর সঙ্গে মিল রেখে হিল জুতা কিনেছি। নিউমার্কেটে কম দামে যেকোনো পোশাকের সঙ্গে মিল করে জুতা কেনা যায়। তাই চলে এলাম।
ঈদ উপলক্ষে দেশি ব্র্যান্ডের জুতা-স্যান্ডেল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেচা-বিক্রিতে শীর্ষে রয়েছে অ্যাপেক্স, বে, বাটা, জেনিস, ক্রিসেন্ট, লেদারেক্স প্রভৃতি। এছাড়া ইতালিয় ব্র্যান্ডের স্থানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লোটো কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিটি শপিং মল, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ও মার্কেটে রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানের আউটলেট। হাতের নাগালে থাকায় ক্রেতারাও ভিড় জমাচ্ছে সেখানে। নতুন নতুন ডিজাইনের জুতা-স্যান্ডেল বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। ব্র্যান্ড ভেদে স্যান্ডেল পাওয়া যাচ্ছে ৯৫০ টাকা থেকে ১৮৫০ টাকা এবং জুতা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকার মধ্যে।[ads2]
এবারের ঈদ উপলক্ষে জুতার জগতে শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড বাটা তাদের আউটলেটগুলো সাজিয়েছে বৈচিত্র্যময় ডিজাইনের জুতা দিয়ে। এর মধ্যে সামার, চাপলিশ, স্পোর্টস স্যান্ডেল, উইন ব্যানার, ক্যাজুয়াল সু ইত্যাদি রয়েছে। এদিকে বাটা থেকে জুতা কিনে মোবাইল ফোন কোম্পানি বাংলালিংক এর গ্রাহকরা পাচ্ছেন নগদ ক্যাশব্যাক। এছাড়া বিকাশের মাধ্যমে টাকা পরিশোধে রয়েছে ১০ শতাংশ মূল্যছাড়।
বাটার এলিফ্যান্ট রোড শোরুমের বিক্রয়কর্মী সুজন জানান, এবার ক্যাজুয়াল সু বেশি বিক্রি হচ্ছে। এগুলো পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকা,২ হাজার ২৯০ টাকার মধ্যে।
নগরীর নামিদামি শপিং কমপ্লেক্সে রয়েছে বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন ব্যান্ডের জুতার দোকান। এসব দোকানে চামড়ার জুতা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা থেকে ৮-১০ হাজার টাকার মধ্যে। উচ্চবিত্ত পরিবারের তরুণ-তরুণীরা হাল ফ্যাশনের দিক চিন্তা করে দাম বেশি দিয়েও কিনছে এসব জুতা।
দেশের অন্যতম শপিং মল বসুন্ধরা সিটিতে আমদানিকৃত ছেলেদের জুতা-স্যান্ডেল পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার টাকায়। এছাড়া মেয়েদের জুতা-স্যান্ডেলে রয়েছে উজ্জ্বল রং, পুঁতি ও পাথরের কাজ। দাম পড়বে গড়ে ১৫০০ টাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।[ads1]
এদিকে স্বল্প আয়ের মানুষের ভরসার স্থান ফুটপাতেও বিক্রি হচ্ছে জুতা। তবে কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় তেমন জমে উঠেতে পারেনি ফুটপাতের কেনাবেচা। গুলিস্তান, পল্টন ও বায়তুল মোকারম এলাকার ফুটপাত ঘুরে দেখা গেছে, প্লাস্টিক ও চামড়ার তৈরি বিভিন্ন ধরনের জুতা ও স্যান্ডেল বিক্রি হচ্ছে। ডিজাইনে নতুনত্ব না থাকলেও কম দামে পাওয়ায় অনেকে কিনছে। ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় চামড়ার স্লিপার এবং ৭০০-১২০০ টাকায় জুতা বিক্রি হচ্ছে এসব স্থানে।